ভারতকে অন্যায্য সুবিধা দিতে হয়েছে, বিস্ফোরক অভিযোগ আইসিসি ম্যাচ রেফারির

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

মাঠের পারফরম্যান্সে ভারতীয় দলের দাপটের কথা কারও অজানা নয়। এমনকি দেশটির ক্রিকেট সংস্কৃতি তাদের অর্থনৈতিকভাবেও অনেক বেশি লাভবান করে। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির বড় আয়ের উৎস–ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। যার প্রভাবে ভারত সুবিধা পায় বলে ক্রিকেটাঙ্গনে অভিযোগ শোনা যায়। তেমনই কিছু বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছেন আইসিসির সাবেক ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইসিসির ম্যাচ রেফারি থাকাকালে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ব্রড। সুনির্দিষ্ট সময় ও চাপ প্রয়োগকারী ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে ইংল্যান্ডের সাবেক এই ম্যাচ রেফারি বলেন, ‘একটি ম্যাচে ভারত নির্ধারিত সময়ে তিন-চার ওভার পিছিয়ে ছিল, যার জন্য খেলা শেষে (নিয়ম অনুযায়ী) শাস্তি পেতে হতো তাদের। ওই সময় আমি একটি ফোনকল পাই। বলা হয়– “ক্ষমাশীল হোন, কোনো উপায় বের করুন, কারণ এটি ভারত।” তখন বিষয়টা ছিল এমন– ওকে, দেখি কী করা যায়। বিষয়টা অন্ধকারেই থাকুক।’

একই ঘটনা পরের ম্যাচেও ঘটে বলে অভিযোগ ক্রিস ব্রডের। সেদিনও নাকি একইভাবে তার সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করা হয়, ‘একদম পরের ম্যাচেই আবারও একই ঘটনা ঘটল। তিনি (তৎকালীন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি) দ্রুত ওভার শেষ করার বিষয় মানছিলেন না এবং আমি ফোন করে জানতে চাই “এখন আপনি আমাকে কী করতে বলবেন?” তখন আমাকে বলা হয়েছিল– “তার কথা শুনুন।”’

২০০৩ সাল থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর আইসিসির ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন ক্রিস ব্রড। ওই সময়কালে তিনি ১২৩ টেস্ট, ৩৬১ ওয়ানডে এবং ১৩৮টি টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মোট ৬২২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেন। তবে আইসিসি তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি বলে অভিযোগ তার, শুধু বলা হয়েছিল “আপনি চালিয়ে যান”।

২০০৯ সালে পাকিস্তানের লাহোরে শ্রীলঙ্কান দলের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার সূত্র ধরে ব্রড বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক এবং শারিরীকভাবে অনেক বুলেটকে ফাঁকি দিয়েছি। আমি পেছনের দিনগুলোতে তাকিয়ে ভাবছি– একই কাজ ২০ বছর ধরে করে যাওয়াটা অনেক লম্বা সময়। বিশ্বের নির্দিষ্ট কিছু প্রান্তে আর ছুটতে হবে না ভেবে আমি খুশি। আমি সবসময় এমনই ছিলাম, যে সঠিক এবং ভুলের মাঝে পার্থক্য করতে পারে।’

‘বিশ্বের এমনও কিছু জায়গা আছে, যা গঙ্গা নদীর মতো। সেখানে সঠিক-ভুলের পার্থক্য বোঝা তো দূরের বিষয় এবং এত বেশি নোংরা পানি থাকে যে সেসবের মোকাবিলা করে চলতে হয়। তাই আমার মতে যে ব্যক্তি সত্য-মিথ্যার দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে, ২০ বছর রাজনৈতিক পরিবেশে টিকে থাকা তার বড় প্রচেষ্টার প্রমাণ’, আরও যোগ করেন ক্রিস ব্রড। ২০২৩ অ্যাশেজ সিরিজে ব্রডের ছেলে ও ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ডেভিড ওয়ার্নারকে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৭তম বারের মতো আউট করেছিলেন। যা নিয়ে নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে মজা করে একটি মিম শেয়ার করায় আইসিসি থেকে তিরস্কৃত হয়েছিলেন ক্রিস ব্রড। 

আইসিসির অধীনে কাজ করা ব্যক্তিরাও রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে দাবি ব্রডের, ‘আমরা ভিন্স ভ্যান ডার বিলের (তৎকালীন আইসিসি আম্পায়ার্স ম্যানেজার) কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছি, যখন তিনি দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ক্রিকেট ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ওই পর্যায়ে এসেছিলেন, তার বিদায়ের পর ম্যানেজমেন্ট অনেক দুর্বল হয়ে যায়। ভারত টাকা নিয়ে আসে এবং বিভিন্ন উপায়ে আইসিসির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। আমি আনন্দিত যে এখন আর সেখানে থাকতে হচ্ছে না, কারণ বর্তমানে এখানে থাকাটা অনেক বেশি রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখার মতো, যেমনটা আমি আগে কখনও দেখিনি।’ 


আমার বার্তা/জেএইচ