একটানা কয়েক ঘণ্টা ঝগড়াঝাটির পর আমার মনে হয়, দোষটা আসলে আমারই ছিল। কিন্তু ভাবটা এমন রাখতে হবে যেন সব দোষ ইফতিরই। ও-ই যেন নিজে থেকে এসে আমার রাগ ভাঙায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, আমিই আগে গিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলে ফেলি।
এগুলো আমার রোজকার অভ্যাস। সেদিন রাতে মশারি টানানোর কথা ছিল ইফতির। কিন্তু ভুল করে আমি মশারি টানিয়ে ফেলি। শুয়ে পড়ার পর মনে পড়ল আজ তো মঙ্গলবার। আমার মশারি টানানোর কথা শনি, রবি আর সোমবার। বাকি চারদিনের মধ্যে তিনদিন ইফতির জন্য বরাদ্দ। আর শুক্রবার আমরা কেউ-ই মশারি টানাই না। এটা অফ ডে হিসাবে ধরা হয়। ইফতি ওয়াশ রুমে যেতেই আমি তাড়াতাড়ি উঠে মশারি খুলে ফেললাম। সকালে আমার সঙ্গে যে ঝগড়া করছে এটা তারই শাস্তি।
নিজে টানিয়ে নিক। আমি কেন টানাবো! এমনিতেও তো আজ আমার টানানোর কথা না। ইফতি রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল, ‘আমাকে একটু বেরোতে হবে। বন্ধুর বাসায় আজকে ব্যাচেলর পার্টি আছে।’ আমি বড় বড় চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ব্যাচেলর পার্টি মানে! কিসের ব্যাচেলর পার্টি! আর ব্যাচেলর পার্টিতে তোমার কী কাজ! তুমি তো আর ব্যাচেলর নও, তুমি একজন বিবাহিত পুরুষ।’ ইফতি হেসে বলল, ‘সামনে আফতাবের বিয়ে তাই আজকে ও ব্যাচেলর পার্টি করছে।
আর আমি বিবাহিত! তোমার কোন দিক থেকে মনে হইলো আমি বিবাহিত! আমি যখন বন্ধুদের সঙ্গে মেছে থাকতাম তখনো আমাকে এইভাবে সপ্তাহে দিন ভাগ করে মশারি টানাতে হতো। আর এখনো সেটাই করতে হয়। তাহলে বিবাহিত কেমনে হইলাম! লজিক ছাড়া কথাবার্তা বইলো না প্লিজ। তুমি আমায় বড়জোর এটা বলতে পারো যে, আমি হলাম সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর। এমনিতেও আমার নিজেকে সেটাই মনে হয়।’ একথা বলেই ইফতি পার্টি করতে চলে গেল। আমি অসহায়ের মতো আবারও মশারি টানিয়ে শুয়ে পড়লাম। শয়তানটাকে শায়েস্তা করতে গিয়ে এখন নিজেরই দুইবার করে মশারি টানানো লাগল। কপাল দোষে এমন বদমাশ বর পাইছি একটা।
কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বেজে উঠল। আমি দরজা খুলতেই দেখি ইফতি বত্রিশ দাঁত বের করে হাসছে। দেখে রাগি স্বরে বললাম, ‘তুমি না পার্টিতে গেলা!’ ইফতি হাসতে হাসতে ভেতরে ঢুকে বলল, ‘তোমার যে হাঁটুর নিচে বুদ্ধি সেটা আবারও প্রমাণ হলো। তুমি ইচ্ছা করে মশারি টানিয়েও আবার খুলে ফেলছিলা না আমাকে দিয়ে কামলা খাটানোর জন্য! এটা তারই প্রতিশোধ। কোনো পার্টি ফার্টি নাই।’ আমি অবাক দৃষ্টিতে ইফতির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুমি বর নাকি বর্বর!’ ইফতি হাসতে হাসতে বলল, ‘নাহ, আমি সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর।’