জমে উঠেছে ঝালকাঠির আটঘরের নৌকার হাট। পিরোজপুর এবং বরিশালের ব্যবসায়ীরাও নিজেদের তৈরি নৌকা নিয়ে আসছেন এই হাটে।
ঝালকাঠির আটঘরের নৌকার হাট ভৌগোলিকভাবে পিরোজপুর জেলার একেবারেই শেষ সীমায় পড়েছে। তবে ঝালকাঠি জেলা সদর এবং বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সীমানা লাগোয়া। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ হাটের ক্রেতা-কিংবা বিক্রেতাদের মধ্যে তিন জেলার মানুষেরই অংশগ্রহণ রয়েছে।
সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার হাট বসে। বারোমাসই সংসারের প্রায় সবকিছুই এখানে পাওয়া যায়। তবে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমজুড়ে সপ্তাহের শুক্রবার নৌকা বিক্রিকে কেন্দ্র করে হাটটি সবচেয়ে বেশি জমে ওঠে। অসংখ্য খাল-বিল আর নদী মাতৃক হওয়ায় তিন জেলা লাগোয়া এই এলাকাটিতে বর্ষা থেকে শীত মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত চারিদিকে থৈ থৈ পানি থাকে।
ফলে কৃষি, মাছ ধরা এমনকি গ্রামীণ যাতায়াতেও নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাই কেবল খালের পানিতেই নয়, রাস্তার দুই পাশ জুড়ে এখন হাজারো নৌকার সমারোহ। এই হাটের নৌকা বেচাকেনার সঙ্গে যুগ যুগ ধরে জড়িয়ে আছে হাজারো মানুষ।
আটঘরের নৌকার হাট থেকে পিরোজপুর, বরিশাল ও ঝালকাঠির দশ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়। ছবি: সময় সংবাদ
পোষন্ডা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, সামনেই পেয়ারা ও আমড়ার মৌসুম। আমরা কান্দি পদ্ধতিতে পেয়ারা এবং আমড়া ফলাই। কান্দিতে এসময়টায় পানি থাকে। তাই নৌকাই একমাত্র ভরসা। চলতি বছর দুটি নৌকা কিনবো।
বরিশালের বানারীপাড়া থেকে হাটে আসা নৌকার কারিগর রমেশ কান্তি মজুমদার বলেন, আমার বাবাও নৌকা তৈরি করে এ হাটেই বিক্রি করতেন। এখন আমিও করি। বর্ষার মৌসুমেই কেবল নৌকা বিক্রি করি। বছরের অন্য সময় নানারকম কৃষি কাজ করি। তবে নৌকার আয় দিয়ে সংসারের প্রধান খরচ সামলাই।
হাটে বেড়াতে আসা সুমাইয়া নামে এক নারী বলেন, প্রতি বছরই আমি এখানে বেড়াতে আসি। খালের পানিতে আর হাটের রাস্তায় সারি সারি নৌকার সমারোহ আমাকে মুগ্ধ করে। তাই প্রতি বছরই নৌকার হাটে বেড়াতে আসি। আজও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসলাম নৌকার হাট উপভোগ করতে।
এদিকে, নৌকার কারিগরদের ক্ষুদ্র ঋণ ও কারিগরি সহযোগিতার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা বিসিক কর্মকর্তা। ঝালকাঠি বিসিকের (শিল্প সহায়তা কেন্দ্র) শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো. আল- আমিন জানালেন, প্রাচীন এ শিল্পটির প্রসার এবং এ অঞ্চলের নৌ-যোগাযোগের সংস্কৃতি রক্ষায় নৌকার কারিগরদের ক্ষুদ্র ঋণ ও কারিগরি সহযোগিতার দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, আটঘরের এই নৌকার হাট থেকে পিরোজপুর, বরিশাল ও ঝালকাঠির দশ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়।
আমার বার্তা/এল/এমই