শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র শুনা যাচ্ছে ভ্রাম্যমান ছুরি, চাপাতি,দা, বটি বিক্রেতাদের হাকডাক । ব্যস্ততা বেড়েছে ছুরি, চাপাতি,দা, বটি প্রস্তুতকারকদের। কামার শিল্পীদের হাপরের অবিশ্রান্ত উঠানামা, টুংটাং শব্দ এই সবই জানান দিচ্ছে রাজবাড়ী শহরে ঈদুল আযহার আগমনী।
রাজবাড়ীর বিভিন্ন বাজার বা কামার-পাড়া ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যন্ত জনপদের কামাররা এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন ।
দিন রাত চলছে ছুরি, চাপাতি,বটি, দা, তৈরি ও শানের কাজ, খাওয়া দাওয়া ভুলে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের ৷ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ঈদুল আযহার এই সময়টায় ব্যস্ত সময় পার করেন তারা।
লাল আগুনের লোহায় কামারদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার দোকানগুলো। টুংটাং শব্দে মুখরিত এইপাড়া। ছন্দের তালে চলছে স্বহস্তের জাদুকরি হাতুড় আর ছেনির কলা কৌশল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন কামারের দোকানে গ্রাহকের আনাগোনা এখন বেড়েই চলেছে।
কামাররাও একদিকে দা, বটি, ছুরি,শান দিচ্ছে অন্যদিকে নতুন নতুন দা, ছুরি, বটি দোকানের সামনে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছেন ।
তাই এই সময়টাকে বেশ উপভোগ করেন তারা, তবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি হওয়ায় এখন আগের সেই জৌলুশ তেমন একটা নেই। আগামীতে এই পেশা টিকবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে কামার শিল্পীদের মাঝে।
কামার শিল্পী শম্ভু কর্মকার ও নির্মল কর্মকার বলেন, এই কাজের উপর তাদের পরিবারের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া জামা-কাপড়সহ সারা বছরের খোরাকী নির্ভর করে। যদিও কামার শিল্পের আনুসাঙ্গিক কয়লা ও লোহার দাম লাগামহীন ভাবে উঠানামা করতে থাকে। তাই কামাররা বাপ-দাদার এ পেশাকে ধরে রাখতে কয়লা ও লোহার দাম নিয়ন্ত্রন ও সহজ শর্তে ঋনের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
বিশেষ করে কোরবানির ঈদ আসলেই আমাদের ব্যবসা চাঙা হয়। শান দেওয়ার যন্ত্রে ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছে বাড়তি কয়লা ও হাতল, তবে আমাদের ব্যবসা আর আগের মত ভালো নেই। বিদেশী চাইনিজ প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে আমাদের তৈরীকৃত ছুরি, বটি, দা প্রভৃতির চাহিদা কমে যাচ্ছে।
তারা বলেন, আমরা এখন তৈরিকৃত মাল ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। দোকানিরা কমটাকায় বিক্রি করছে জানতে চাইলে বলেন আমরা অরিজিনাল পাতি দিয়ে তৈরি করি আমাদের খরচ বেশি হয়। খরচ বেশি হলেও ক্রেতাদের লাভ তারা ভালো মানের জিনিস পাচ্ছে।
এদিকে কামার ব্যবসায়ীদের সাথে একমত প্রকাশ করে এক ক্রেতা বলেন, আমরা এখন আর একান্তই প্রয়োজন ছাড়া কামারদের দিয়ে কোন কিছু তৈরী করি না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, খুব স্বল্প মূল্যেই এখন টেকসই চাইনিজ বিভিন্ন চাপাতি, চাকু রেডিমেট কিনতে পাওয়া যায়। এসব পণ্যে মরিচা ধরার সম্ভাবনা থাকে না। তাই ছুরি, চাপাতি, দা প্রভৃতি এখন আমরা বাজার থেকে কিনে নেই।
লোহার দোকানদার আনন্দ কর্মকার ও বাপ্পি কর্মকার বলেন, সারা বছর এই কোরবানির ঈদের (ঈদুল আযাহা) জন্য অপেক্ষায় থাকি আমরা। এ সময়টিতে যারা কোরবানির পশু জবাই করেন তারা প্রত্যেকে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টিতে মালামাল বেশি হওয়ার কারনে লাভও বেশি হয়। এখন আমরা ৫০০ - ৬০০ টাকা কেজি দরে যে দাম হয় সে ভাবে বিক্রি করে থাকি।
এবি/টিএ