বাজারে বন্ধ থাকা কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে টার্গেট করে আটা ময়দা দিয়ে নকল জীবনরক্ষাকারী ওষুধ তৈরী করতো একটি চক্র। পরে সেগুলোর মোড়কজাত থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসপত্র নকল করে আসল অ্যান্টিবায়োটিক বলে বাজারজাত করতো চক্রটি। এমনই এক ওষুধ নকল করা প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধানের তথ্য মতে, এই চক্রটি রাজধানীর অদূরে সাভারের একটি কারখানায় নকল অ্যান্টিবায়োটিকগুলো তৈরি করতো। পরে তা ট্রাক বা পিকআপে ভরে নিয়ে যাওয়া হতো বরিশালে। সেখানে গুদামজাত করে পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হতো। চক্রটি দীর্ঘ ৮ বছর এভাবেই নকল এন্টেবায়োটিক তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে এ বিষয়ে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শাহীন (৩৪), শহীদুল ইসলাম (৪০), সিরাজুল ইসলাম (৩৬), হৃদয় (২০), হুমায়ুন (৩৬)। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৯৬ হাজার পিস নকল এন্টিবায়োটিক উদ্ধার করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। উদ্ধারকৃত নকল অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আটা, ময়দা, সুজি ও বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হতো।
ডিবি বলছে, চক্রটি বাজারে থাকা ও বাজার থেকে বিলুপ্ত এমন ওষুধের মধ্যে রিলামক্স-৫০০ ট্যাবলেট, মক্সিকফ-২৫০, সিপ্রোটিম-৫০০ এমজি, এমোক্সস্লিন, জিম্যাক্স, মোনাস-১০ নকল করে বাজারে ছাড়তো। তারা কাফকা ফার্মাসিউটিক্যালস, ডক্টর টিমস ফার্মাসিউটিক্যালস, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস, কুমুদিনি ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধ নকল করতো।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শহীদুল দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল কোতয়ালী থানা এলাকার নথুল্লাবাদ এলাকায় নকল বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক মজুদ করে বিভিন্ন পরিবহন ও গ্রেপ্তারকৃত শাহিনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে আসছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত হুমায়ুন রাজীব অপসোনিন কোম্পানির বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ফার্মেসীতে নকল অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় করতেন তিনি। এছাড়াও সিরাজুল ইসলাম ও হৃদয় নকল ওষধ বিক্রয়ের যাবতীয় কাজে অধিক মুনাফার জন্যে শহীদুলকে সহায়তা করতেন। কারখানায় নকল ওষুধ তৈরি করে সেগুলো কুমিল্লার আবু বক্কর বিভিন্ন কুরিয়ারের মাধ্যমে ও শহীদুলের মাধ্যমে বাজারে সরবারাহ করতেন।
তিনি বলেন, মূলত কুমিল্লার আবু বক্বর এসব নকল ওষুধ তৈরি করে শহীদুলকে দিতেন। তিনি সেগুলো বরিশালে গুদামজাত করে পরে অন্যদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হতো। যেসব ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশে নেই এবং যে ওষধুগুলো বাজারে নেই সেগুলোই তারা তৈরি করে বাজারজাত করতো। এছাড়াও তারা বিভিন্ন ব্র্র্যান্ডের ওষুধ নকল করে সেগুলোর ভেতরে আটা, ময়দা ও সুজি দিয়ে তৈরি করতো। পরে তা বাজারে বিক্রি করতো। আমরা তাদের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার নকল ওষুধ উদ্ধার করেছি। এর আগেও তারা কোটি কোটি টাকার নকল ওষুধ তৈরি করে বিক্রিও করেছে।
তিনি আরও বলেন, তারা গত আট থেকে ১০ বছর ধরে এই ভেজাল ওষুধ তৈরি করে আসছিল। যারা এসব ওষুধ উৎপাদন করে আমরা তাদেরও খুজছি। তাদের নামে এখন পর্যন্ত ১৫টি মামলা রয়েছে। আমরাও তাদের তিনজনকে আগেও গ্রেফতার করেছি। তারা জামিনে বেরিয়ে আবারও এই ব্যবসা শুরু করে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৮০টি ইউনানী ওষুধ কোম্পানির ভেজাল ওষুধ তৈরির বিষয়ে তথ্য তারা ওষুধ প্রশাসনকে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে ডিবি।