ই-পেপার শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক ঋণ জালিয়াতিই জয়নালের পেশা, হাতিয়েছেন ৩০ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০৮
অভিযুক্ত জয়নাল আবেদীন ও তার সঙ্গীরা। ছবি: সংগৃহীত

জয়নাল আবেদীনের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে। আগে তিনি অন্য কাজ করতেন। কিন্তু এক সময় প্রতারণা তার পেশা হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে শুরু করেন। ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ৩০ কোটির বেশি টাকা ঋণ নিয়ে করেছেন সাততলা বাড়ি, কিনেছেন জমি ও নয়টি ফ্ল্যাট। বসেন দামি অফিসে। ভুয়া এনআইডি, ডকুমেন্টস ও ভুয়া তথ্য দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে জয়নাল এসব ঋণ নিয়েছেন। সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিতে গেলে তার ব্যাপারে যাচাই-যাছাই শুরু করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। এতে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ প্রতারণার তথ্য।

এই জয়নাল নিজের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা এবং ভিন্ন ভিন্ন ছবি ব্যবহার করে অন্তত ১০টি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। তার ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন রংপুরের নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মচারী পল্লব দাস। তার সহায়তায় তিনি সব তথ্য ঠিক রেখে শুধু নম্বরটা আলাদাভাবে বসিয়ে এসব এনআইডি তৈরি করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বোকা বানিয়েছেন।

অবশেষে সেই প্রতারক জয়নালসহ চারজনকে রংপুর ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। পুলিশ বলছে, তার টার্গেট ছিল আরও ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিবারসহ বিদেশে পালিয়ে গা ঢাকা দেবেন। তবে এর আগেই তিনি ধরা পড়ে যান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস (৪২), নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী পল্লব দাস (৩৬), রফিকুল ইসলাম খাঁন (৩৮) ও আলিফ হোসেন (২০)।

শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসের ১৩ নম্বর রোডের ৯৪০/৪১ বাসার নিচ তলায় জয়নালের অফিস থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে ডিবির নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবিপ্রধান বলেন, জয়নালকে প্রতারণায় মাস্টারপিস বলা যায়। কারণ তিনি বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ধোঁকা দিয়ে ৩০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন। এসব অর্থ দিয়ে তিনি সাততলা বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি কিনেছেন। তার টার্গেট ছিল আরও ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করবেন। কিন্তু এর আগেই ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

এনআইডি জালিয়াতি করে চলত যত প্রতারণা

ডিবির হারুন বলেন, জয়নাল ভিন্ন ভিন্ন নামে শুধু নম্বরগুলো পরিবর্তন করে এনআইডি বানাতেন। এজন্য কোনোটাতে দাড়িসহ ছবি দিতেন। আবার কোনোটাতে গোফ, কোনোটা দাড়ি গোফ ছাড়া থাকত। কোনোটা দুই বছর আগের আবার কোনোটা পরের। একই জমি, একই ফ্ল্যাট ও একই অফিস দেখিয়ে ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন জয়নাল। কিছু ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন আবার কিছু ব্যাংক থেকে তার ঋণ পেন্ডিং অবস্থায় ছিল। এমন ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটির টাকার কম নয়। একই এনআইডি ও ভুয়া দলিল দিয়ে জয়নাল একই নামে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ তুলেছেন। যে তার এনআইডিগুলো তৈরি করে দিতেন পল্লব দাস, আমরা তাকেও গ্রেপ্তার করেছি।

প্রতারণা করে সাততলা বাড়ি, ফ্ল্যাট জমির মালিক

ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, জয়নাল ডিওএইচএসে ইআর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নিয়েছিলেন। মুলত একটি অফিসকে সাত ভাগে সাত নামে একই ঠিকানায় বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন। এ যাবৎ জয়নাল বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু তা ফেরত দেননি। আর এসব টাকায় তিনি বসুন্ধরা এলাকায় একটি সাত তলা বাড়ি, উত্তরায় আট থেকে নয়টি ফ্ল্যাট ও মাদারীপুরে বাড়ি করেছেন।

বহুবিধ প্রতারণার কারিগর জয়নাল

ডিবি জানায়, তার অফিস থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ৫০টি সিল উদ্ধার করা হয়েছে। যা তিনি প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন। ইনকাম ট্রাক্সের বিভিন্ন ভুয়া ফাইল তৈরি করতেন তিনি। ভূমি অফিসের সহযোগিতায় বিভিন্ন মালিকের ভুয়া দলিলও তৈরি করতেন জয়নাল। তার বাসা থেকে কয়েক বস্তা দলিল উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কাগজপত্র ও ভাউচার তৈরি করতেন তিনি এবং তার সহযোগীরা।

হারুন জানান, জয়নাল ভুয়া দলিল বানিয়ে জমির নামজারি করতেন। এরপর খাজনা কপি ভুয়া তৈরি করতেন তিনি। এজন্য তাকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা সহায়তা করতেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভুয়া জমির নামজারি খারিজ কপি বিভিন্ন তারিখে সরকারি কর্মকর্তার সহায়তায় এনআইডি কার্ড, দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। জয়নাল একই নামে একই রকম সাত থেকে আটটি ভুয়া দলিল তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিতেন।

অন্যকে ঋণ পাইয়ে দিয়ে কমিশন নিতেন জয়নাল

হারুন আরও জানান, জয়নাল একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর একটি লোন নেওয়ার পরে পরবর্তী সময়ে আবারও এনআইডি কার্ডের ছবি তারিখ পরিবর্তন করে জমির দলিলের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিতেন। অন্যকেও লোন করে দিতেন। এরপর সেই লোকদের কাছ থেকে লোনের কমিশন নিতেন। একাধিক এনআইডি তৈরি করে একই ফ্ল্যাট/জমি/বাড়ি দেখিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে উধাও হয়ে যান। এছাড়াও বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের কাগজ তৈরি করে ব্যাংক লোন নিতেন।

ডিবি জানায়, জয়নাল পল্লব দাসের পাসওয়ার্ড দিয়ে একাধিক এনআইডি তৈরি করেন। পল্লব দাস রংপুরে এনআইডি সার্ভারে আউট সোর্সসিংয়ে ডাটা এন্টি অপারেটরের কাজ করেন। এসব ভুয়া এনআইডি দিয়ে তিনি বিভিন্ন ভুয়া নামজারি ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সিল স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন। এছাড়াও ভুয়া ইনকাম ট্যাক্সের কর্মকর্তাদের সিল স্বাক্ষরে বিভিন্ন কাগজ তৈরি করে সেগুলো বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিতেন। চক্রটি একই নামে একাধিক কার্যকর এনআইডি তৈরি করে ব্যাংক ঋণ নিতো।

ডিবিপ্রধান বলেন, জয়নাল তার প্রতারণার জন্য একটি কোম্পানি খুলে সেখান থেকে আরও সাতটি কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিলেন। পরে সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের দিয়ে তিনি ঋণ নিতেন। আমরা তাকেসহ পল্লব দাসকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব। পল্লব দাস জয়নালের মতো আর কতজনকে সার্ভার ব্যবহারে এমন কার্যকর এনআইডি তৈরি করে দিয়েছেন, এছাড়া তারা আর কতটি ব্যাংক থেকে এমন ঋণ নিয়েছেন তা আমরা খতিয়ে দেখব। এই পল্লবের সাথে ইসির যদি আরও কেউ জড়িত থাকে তাদেরও আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

হারুন বলেন, এই প্রতারক জয়নালের এক সময় কিছুই ছিল না। তিনি ইমিটেশন পণ্যের ব্যবসা করতেন। কিন্তু সেই ব্যবসায় লস করে তিনি ব্যবসা ছাড়েন। এরপর জড়িয়ে পড়েন প্রতারণায়।

ডিবি জানায়, পল্লব প্রতি এনআইডি বাবদ জয়নালের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ করে টাকা নিতেন। তিনি এনআইডি বানিয়ে দিয়ে কত টাকা কামিয়েছেন এবং তার অর্থ সম্পদ করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখবে ডিবি।

ডিবি বলছে, জয়নালের কার্যকর ১০টি এনআইডি ছিল। এসব এনআইডি দিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতেন। ‍এনআইডির নাম ও ঠিকানা ঠিক থাকত, শুধু সেটির নম্বর পরিবর্তন করে আরেকটি তৈরি করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিবির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল এবং অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাবেদ ইকবাল।

আমার বার্তা/এমই

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে ডেমরায় বাসে আগুন

রাজধানীর ডেমরায় অছিম পরিবহনে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে

পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যেভাবে চলতো কারসাজি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে চাওয়া হতো চাঁদা। চাহিদামতো টাকা পেলে দুর্বল কোম্পানির নামে ভালো তথ্য ছড়িয়ে

শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁস, ঢাবির তিন শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির হোতা ফখরুজ্জামানসহ গ্রেপ্তার ২

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির হোতা টিআইএম ফখরুজ্জামান ওরুফে টিপু কিবরিয়া ও তার সহযোগী কামরুল ইসলাম ওরফে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্টেশন মাস্টারসহ তিনজন বরখাস্ত

নাইজারে মার্কিন ঘাঁটিতে প্রবেশ করেছে রুশ সেনারা

ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর: ২ আসামী গ্রেপ্তার

বোলিংয়ে বাংলাদেশ, তানজিদ তামিমের অভিষেক

চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করল পাকিস্তানের স্যাটেলাইট

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কঠিন শর্ত দিলো সৌদি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করবেন সৈকত

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ : গ্রেপ্তার ২,২০০ শিক্ষার্থী

‘সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ মাহি ভাই’

‘আচরণবিধি ভাঙলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’

টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া, পেছাল ভারত

মিয়ানমারে পুরুষকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না জান্তা

ঢাবির প্রশ্নপত্র ফাঁস: ৮৭ শিক্ষার্থীসহ সব আসামি খালাস

ঢাবির কার্জন হলের ফুটপাতে পড়েছিল বৃদ্ধের মরদেহ

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ভবন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু

বনানীতে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে সিএনজির ধাক্কা, আহত ৬

ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার মধ্যেই কুবিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

ডিডাব্লিউর বাকস্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন ইউলিয়া নাভালনায়া

বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সাকিবের সেঞ্চুরি

মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে দুই ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ ১৬৫তম