এবারের বাজেটে আমরা একদিকে দেখতে পাচ্ছি, আইএমএফের একটা প্রভাব। আরেক দিকে আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব দেখলাম। ট্রাম্প ও আইএমএফের দুই পায়ের ওপর দাঁড়ানো এবারের বাজেট।
শনিবার (১৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরাম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট : দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শিল্পের মধ্যে ক্ষুদ্র শিল্প, স্থানীয় শিল্পসহ অনেক রকম শিল্প নিজেরা দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আইএমএফের প্রভাবে আমরা দেখলাম এ ধরনের স্থানীয় শিল্প যেগুলো ছিল সেগুলোর ভ্যাট অব্যাহতি অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে। কর অব্যাহতি বাতিল হয়েছে ও গৃহস্থালির জিনিসপত্রের ওপর কর আরোপ হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে নতুন করে শুল্কারোপ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর কর স্থাপন করা হচ্ছে। আইএমএফ যেহেতু বলছে, কর বাড়াতে হবে, সেই কর বাড়ানোর চেষ্টায় ছোট ছোট শিল্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘করের এই চাপ ট্রাম্পকে আরো খুশি করার জন্য বাড়ছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বিশ্ব উম্মাদনা তৈরি করল।
ট্যারিফ ঘোষণাসহ অদ্ভুত রকম যুক্তি এবং হিসাব দিয়ে তারা বলল, আমদানি-রপ্তানির পার্থক্য যেখানে বেশি রয়েছে তাঁদের ওপরে কর নতুন করে চাপিয়ে দাও। ট্রাম্প এটি ঘোষণা করার পরই বাংলাদেশের দিক থেকে দেখা গেল, খুব তড়িঘড়ি করে ট্রাম্প প্রশাসনকে খুশি করার চেষ্টা চলল। আর এই চেষ্টা করতে গিয়ে এবারের বাজেটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১০টি পণ্যের শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এর ফলেই ছোট ছোট শিল্পের ওপর করের চাপ তৈরি হচ্ছে।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাজেটে আয়ের জন্য ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানোর কথা বলা হয়। কিন্তু মার্কিন কম্পানির কাছে আমাদের যে ক্ষতিপূরণ তা আদায় করতে হবে। মাগুরছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণে সম্পদ ও প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসে যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোনো সরকারই চেষ্টা করেনি। এই ক্ষতিপূরণ আদায় অন্তর্বতী সরকারের দায়িত্ব। আর চট্টগ্রাম বন্দর ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ছেড়ে দেওয়া তো শেখ হাসিনার প্রকল্প ছিল। ড. ইউনূস কেন তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইছেন?’
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, বর্তমান সরকারের বাজেটে সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটানোর কথা নেই। সম্পদ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কাছ থেকে গিয়ে কিছু মানুষের কাছে পুঞ্জিভূত হয়। এবারের বাজেটেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। এবারের বাজেটে প্রতারণা ও অস্বচ্ছতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, সেটা অব্যাহত থাকুক আমরা চাই না। আগামী ২২ জুন বাজেট অনুমোদনের আগে এর ত্রুটিগুলো দূর করতে হবে। বাজেটে জাতীয় সক্ষমতা সৃষ্টির ন্যূনতম উদ্যোগ নিতে হবে।’
আলোচনাসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ার ড. গোলাম রসুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহা মির্জা, চিকিৎসক ডা. হারুণ অর রশীদ, লেখক-গবেষক প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা ও মাহতাব উদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।
আমার বার্তা/এমই