বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ায় বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছাড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ ডলারের মাইলফলক।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৬০০ ডলার পার করে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৩৪ দশমিক ২৫ ডলারে, যা এদিন পৌঁছেছিল রেকর্ড ৩ হাজার ৬৪৬ দশমিক ২৯ ডলারে।
আর ডিসেম্বরে সরবরাহের জন্য মার্কিন স্বর্ণ ফিউচার শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৬৭৭ দশমিক ৪০ ডলারে।
মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় এবং বেকারত্ব বেড়ে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ শিগগিরই সুদের হার কমাবে। সেই প্রত্যাশার ফলেই মূল্যবান এই ধাতুর বাজারে দেখা দিয়েছে বড় উত্থান।
জ্যানার মেটালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনিয়র মেটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট পিটার গ্রান্ট বলেছেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৭৩০ ডলারের ওপরে উঠতে পারে। দাম সামান্য কমলে সেটিকে ক্রয়ের সুযোগ হিসেবে নেয়া যেতে পারে। শ্রমবাজারের ধীর গতিবিধি এবং ২০২৬ সালের গোড়ার দিকে ফেড সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা স্বর্ণের জন্য স্থায়ী সমর্থন দিতে পারে।’
মার্কিন চাকরির শুক্রবারের (৫ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগস্টে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গতি তীব্রভাবে কমেছে। সিএমই ফেডওয়াচ টুল অনুযায়ী, ব্যবসায়ীরা ফেডের সেপ্টেম্বর সভায় সুদের হার কোয়ার্টার-পয়েন্ট কমানোর ৮৮ শতাংশ সম্ভাবনা দেখছেন, আর ৫০-বিপিএস কমানোর প্রায় ১২ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। সুদের হার কমলে অ-ফলনশীল স্বর্ণ ধরে রাখার খরচও কমে যায়।
২০২৪ সালে ২৭ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার পর, চলতি বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। ডলারের দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্তিশালী সঞ্চয়, অর্থনীতির নরম অবস্থা এবং বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তার কারণে স্বর্ণের বাজার আরও শক্তিশালী হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগস্ট মাসে টানা দশম মাস ধরে স্বর্ণ কিনেছে। একই সঙ্গে, বেঞ্চমার্ক ১০ বছরের মার্কিন ট্রেজারি ইল্ড পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিনিয়োগকারীরা ফেডের নীতি বোঝার জন্য বুধবারের (১০ সেপ্টেম্বর) মার্কিন উৎপাদক মূল্য সূচক এবং বৃহস্পতিবারের ভোক্তা মূল্য সূচকের তথ্যের দিকে তাকিয়ে আছেন।
সিটি ইনডেক্স ও ফরেক্স ডটকমের বাজার বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাজাকজাদা বলেন, ‘যদি মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্য দুর্বল থাকে, তাহলে স্বর্ণের দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে, কারণ ডলার ও ট্রেজারি ইল্ড উভয়ই কমবে। আর যদি তথ্য আশ্চর্যজনকভাবে ভালো আসে, তাহলে স্বর্ণের দাম এই উচ্চ স্তর থেকে কিছুটা কমতে পারে।'
এদিকে, স্পট সিলভার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪১ দশমিক ২৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। প্লাটিনামের দাম শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৮১ দশমিক ৪৯ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের দাম ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৩২ দশমিক ৮৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
আমার বার্তা/এল/এমই