সদ্য সমাপ্ত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ বিউটি কনটেস্ট ‘মিস ওয়ার্ল্ড ২০২৫’। ভারতে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে এ বছর সেরার মুকুট উঠেছে মিস থাইল্যান্ড সুচাতার মাথায়।
বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ নিয়মিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। তবে এবারেই প্রথম বাংলাদেশ থেকে মিস ওয়ার্ল্ডে প্রতিনিধি পাঠানোর লাইসেন্স পেয়েছেন দেশের প্রখ্যাত মডেল ও কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ।
তিনি সল্প সময়ের এক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে আকলিমা আতিকা কনিকাকে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ হিসেবে এই প্রতিযোগিতায় পাঠান। সেখান থেকে কি অভিজ্ঞতা সঞ্চার করলেন এই তরুণ মুখ তা জানাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আজ।
ঢাকায় আজরা মাহমুদ ট্যালেন্ট ক্যাম্পের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে কনিকার মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে শুরু করে বৈশ্বিকমঞ্চে অংশগ্রহণের এই অভিযাত্রাকে সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরা হয়। কনিকা খোলামেলাভাবে জানান তার প্রস্তুতির কঠোরতা, আবেগঘন মুহূর্ত আর স্মরণীয় সব অভিজ্ঞতা।
কনিকা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলেন, ‘আমি যখন ঐ মঞ্চে পা রাখি, তখন আমি শুধু একজন প্রতিযোগী ছিলাম না— আমি ছিলাম বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। প্রতিটি পদক্ষেপ, হাসি, শব্দে আমি আমার জাতির গর্ব বহন করেছি।’
যদিও তিনি বিজয়ীর মুকুট জিততে পারেননি, তবুও কনিকার আচরণ, স্বতঃস্ফূর্ততা আর দৃঢ় উপস্থিতি দেশ-বিদেশের দর্শক ও বিচারকদের মন জয় করেছে। এই প্রতিযোগিতা প্রমাণ করেছে, পুরস্কার মানেই কেবল জয় নয়— জয় মানে আত্মপরিচয়, অধ্যাবসায় আর হৃদয়ের শক্তি।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এমবিআইটি (মিস বাংলাদেশ টিম ইন ট্রেনিং)— যারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের প্রস্তুতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। কনিকাকে তৈরি করতে তারাও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
কনিকার পোশাক পরিকল্পনার সঙ্গে প্রধান ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে যুক্ত ছিলেন জুরহেম ব্র্যান্ডের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মেহরুজ মুনির
অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেওয়া হয় কনিকার পোশাক পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত প্রধান ফ্যাশন ডিজাইনার মেহরুজ মুনিরকে। এছাড়াও সম্মাননা জানানো হয় অনান্য প্রতিভাবান ডিজাইনার রাইসা আমিন শৈলী, ফারদিন বায়েজিদ, বিশ্বজিৎ ও তৃষাকে; যারা কনিকার পোশাক পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কনিকাকে পরিপাটি করে তোলা ক্রিয়েটিভ টিমও। তাদের মধ্যে ছিলেন ফটোগ্রাফার নাইমুল ইসলাম, সিনেমাটোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান শেখর, এডিটর পলাশ বিশ্বাস এবং ড্যান্স কোরিওগ্রাফার আসাদ খান।
কনিকার রূপসজ্জা করেছেন মেকাপ আর্টিস্ট ফারিন খান বাঁধন আর স্টাইলিস্ট ও ইমেজ আর্কিটেক্ট হিসেবে পুরো সময় ছিলেন এফা তাবাসসুম। তার নিখুঁত পরিকল্পনায় কনিকার প্রতিটি লুক হয়েছে আকর্ষণীয়। কনিকার উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সম্মান ও সাংস্কৃতিক গর্বের অভিব্যক্তিকে প্রতীয়মান করার ঐকান্তিক চেষ্টা করেছেন এফা। এই অনুষ্ঠানে তাকেও সম্মানিত করা হয়।
কনিকা বলেন, ‘এই যাত্রা কখনোই আমার একার ছিল না। এই প্রয়াস পূর্ণতা পেয়েছে আমার মেন্টর, সৃজনশীল দল, বন্ধু আর আমার ওপর যারা আস্থা রেখেছেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। আজ আমার এই উপস্থিতিতে বলতে গেলে আপনাদের সবারই প্রতিচ্ছবিই প্রতীয়মান হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মঞ্চের আলো থেকে দেশে ফিরে, এই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির আয়োজন কেবলই ঘরে ফেরা নয়; বরং কোন সন্দেহ নেই, এটা সম্মিলিত স্বপ্নপূরণের উদযাপন। আমার গল্প আজ বাংলাদেশের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। আবারও প্রমাণিত হল, লক্ষ, প্রস্তুতি আর আবেগ থাকলে বিশ্বমঞ্চও জয় করা সম্ভব।’
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৫-এর ন্যাশনাল ডিরেক্টর আজরা মাহমুদ বলেন, ‘আকলিমার জন্য আমি ভীষণ গর্বিত। তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের প্রতীক—সাহসী, সহানুভূতিশীল এবং আন্তর্জাতিক মনোভাব–সম্পন্ন।’
আমার বার্তা/এল/এমই