ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা খুব জরুরি। নইলে হিট স্ট্রোকের মতো ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। তবে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচাতে যেসব লক্ষণ জানা জরুরি তা হলো- প্রথমেই রোগীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করুন, সাহস দিন এবং স্টেপ বাই স্টেপ চিকিৎসা ও আন্তরিক দায়িত্ব পালন করুন। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্বজুড়েই বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, বিশ্বে দ্বিতীয় প্রধান মৃত্যুর কারণ মস্তিষ্কের এ রোগ। প্রতিবছর প্রায় এক কোটি ৩৭ লাখের বেশি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশই মৃত্যুবরণ করেন। বেঁচে থাকা রোগী দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক পঙ্গুত্বে ভুগে থাকেন।
>> শুরুতে যা করবেন :
স্ট্রোক অনেকটা হঠাৎ করে হলেও এর বেশ কিছু লক্ষণ আগে থেকেই শরীরে প্রকাশ পায়। তবে অনেকেই তা টের পান না। স্ট্রোকের আগে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বাঁধাগ্রস্থ হয়। ফলে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা তাৎক্ষণিকভাবে টের পেলে আপনিও আশপাশের রোগীকে বাঁচাতে পারবেন।
স্ট্রোকের আগে মারাত্মক ৬টি লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা সবার জানা জরুরি। এ লক্ষণগুলোকে সংক্ষেপে বলে ‘ইঊ ঋঅঝঞ’। চলুন, জেনে নেওয়া যাক বি ফাস্ট-এর অর্থ।
বি’তে ব্যালেন্স বা ভারসাম্য হারান স্ট্রোকে আক্রান্তরা। এর সঙ্গে মাথা ঘোরা বা মাথা ভারী হওয়ার মতো সমস্যা থাকে। স্ট্রোক হওয়ার আগে আক্রান্ত ব্যক্তি কিছু ধরে রাখতে বা বসে থাকতে পারেন না। ই’তে আই বা চোখের সমস্যা বোঝায়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। অনেকেই মনে করেন, রোদে হাঁটা বা দিনে পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ায় এমনটি হচ্ছে। আসলে এ সামান্য লক্ষণও হতে পারে স্ট্রোকের আগাম ইঙ্গিত। এফ’তে ফেসিয়াল ড্রপিং বা মুখ ঝুলে পড়া। স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের অর্ধেক (বিশেষ করে মুখের এক পাশের নিচের অর্ধেক) নিচু বা ঝুলে যাওয়ার মতো দেখায়। কথা বলতে গেলে মনে হবে, মুখের একপাশ অসাড় হয়ে পড়েছে।
এ’তে আর্ম উইকনেস বা বাহু দুর্বলতা। একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি যদিও সমস্যাটি এড়িয়ে যান। যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছেন কিংবা কোনো কিছু ধরতে অসুবিধা হচ্ছে, ততক্ষণ অনেকেই টের পান না। এস’তে স্পিচ বা কথা বলতে সমস্যা হওয়া। স্ট্রোকটি মস্তিষ্কের বাম দিকে হলে হঠাৎ কথা বলতে কষ্ট হয় রোগীর। স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে এটিই সর্বপ্রথম প্রকাশ পায়। টি’তে টাইম বা সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচাতে। এক্ষেত্রে চিকিৎসায় বেশি সময় পাওয়া যায় না। এ কারণে সময়মতো রোগী চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুবরণও করতে পারে রোগী। এ কারণেই বলা হয় ‘টাইম ইজ ব্রেইন’। এসব লক্ষণের কোনো একটি দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাহলে হয়তো ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার আগেই আপনি বেঁচে যাবেন। এ কারণেই ইঊ ঋঅঝঞ জানা জরুরি। এটি হলো স্ট্রোক শনাক্তের প্রাথমিক জ্ঞান। সময়মতো সাবধান হোন, পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করুন। চিকিৎসকের পরামর্শে থাকুন। আপনার সচেতনতাই পারে একটি জীবন রক্ষা করতে।
লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল।