ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড। তিন দেশের সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা বেড়ে দায়িয়েছে ১৪৭টি।
মঙ্গলবার (২৮ মে) এই তিন দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ বিষয়টিকে ইসরায়েলের জন্য ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর আল জাজিরা।
এর আগে গত ২২ মে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সান্তেজ এবং আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় দখলদার ইসরায়েল। তারা ওই সময় তিন দেশের রাষ্ট্রদূতদের তাৎক্ষণিকভাবে তলব করে।
মঙ্গলবার স্পেনের মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে। স্প্যানিশ সরকারে মুখপাত্র পিলার আলেগ্রিয়া বলেন, মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যার উদ্দেশ্য হলো- ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের শান্তি অর্জনে সহায়তা করা।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি অর্জনের জন্য একটি ‘প্রয়োজনীয়’ পদক্ষেপ বলে মনে করেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সান্তেজ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা সবাই শান্তি অর্জন করতে চাই। তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি একটি অপরিহার্য প্রয়োজন।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল আলবারেস, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইড এবং আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন। ছবি সংগৃহীত
তিনি আরও বলেন, পূর্ব জেরুসালেম হবে এই রাষ্ট্রের রাজধানী।
এদিকে গত ২২ মে সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইউনাস গার স্তুরে বলেন, যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ যখন হতাহত হচ্ছে, তখন আমাদের অবশ্যই এমন একটি বিষয়কে টিকিয়ে রাখতে হবে, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য নিরাপদ ভূমি নিশ্চিত করতে পারবে। তা হলো দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। যেন তারা একে অপরের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে পারে।
নরওয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিভিন্ন সময়ে নরডিক দেশটিকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিতে দেখা গেছে। এ ঘোষণার আগে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৩টির মতো দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সুইডেনের মতো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এক দশক আগেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আবার ফ্রান্সের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই।
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলে আসছিল। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য দ্বিরাষ্ট্র নীতি কার্যকর করতে হবে। অর্থাৎ দখলদার ইসরায়েলের পাশে আলাদা স্বাধীন ফিলিস্তিন থাকবে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ স্লোভেনিয়া ও মাল্টা ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। দেশ দুটির কর্তৃপক্ষ মনে করে, অঞ্চলটিতে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান জরুরি।
আমার বার্তা/এমই