ই-পেপার রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

অস্থির পেঁয়াজের বাজার

রতন বালো
১১ জুলাই ২০২৪, ১৪:২০

শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজও কি ভরিতে কিনতে হবে? সোনার দামের মতো পেঁয়াজও কি লাইসেন্সের তালিকায় উঠবে? বাজুসের মতো পেঁয়াজের দরও কি বেঁধে দেবে সিন্ডিকেটÑ এমন বহুবিধ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের ভেতরে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের ভেল্কিবাজি দেখে সাধারণ মানুষ এখন দাম আতঙ্কে ভুগছে।

এমন অস্থিরতা দেখে দেশের সাধারণ মানুষের ভেতরে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এদিকে ঊর্ধ্বমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রিতে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। শেষ এক সপ্তাহে কেজি প্রতি দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেড় মাসের ব্যবধানে হয়েছে দ্বিগুণ। যদিও মাত্র কয়েক মাস আগেই পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়েছে। বাজারে এখনো দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। যেখানে আগামী মৌসুম আসতে আরও প্রায় ছয়-সাত মাস বাকি। যে কারণে এখন সাধারণ মানুষের কাছে বড় প্রশ্নÑ মৌসুমের শেষে এ বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে? তবে এ প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারো কাছেই।

বাংলাদেশে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটছে। ২০১৯ সালে ঘাটতি দেখা দিলে কার্গো বিমানে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে। তবে ওই সময়ও সেসব পদক্ষেপে খুব বেশি সুফল আসেনি। আড়াইশ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে খেয়েছে মানুষ। এ অবস্থায়ও পেঁয়াজের দাম নিয়ে এখনো টনক নড়েনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। দ্রুত বেড়ে চলা এ পণ্যটির দাম কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।

মিসর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ এনে ব্যবসায়ীরা ২০১৯ সালে কোটি কোটি টাকা লোকসান করেছেন। এক কোটি টাকার পেঁয়াজ ২০ লাখ টাকা বিক্রি হয়নি। পচে নষ্ট হয়েছে। সে ঝুঁকি এবার কেউ নেবেন না, জানালেন আমদানিকারক আবদুল মাজেদ।

এদিকে সরকারিভাবে পেঁয়াজের দাম কমানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি-না, ভারত থেকে আমদানি বাড়াতে কোনো উদ্যোগ বা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কোনো পদক্ষেপ আছে কি-না এমন বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ নেই। যদিও মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মালেকা খায়রুন্নেছা বলেন, এখনো কিছু চূড়ান্ত নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কিভাবে পেঁয়াজের দাম কমানো যায় সে পথ খুঁজছে। আমরা আলোচনার মধ্যে আছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত এখনো আসতে পারিনি।

পেঁয়াজের মৌসুম শেষে দামে অস্থির পরিস্থিতি ২০১৯ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই হয়ে আসছে। এর আগে অস্থিরতা দেখা দিতো মৌসুমের শেষ ভাগে নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে। এ বছর সে সময় আরও আগেভাগে এসেছে, যখন নতুন মৌসুমের এখনো সাত মাস বাকি। এ বছর ওই সময় পেঁয়াজের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেÑ সাধারণ ভোক্তাদের কাছে এটিই এখন সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয়।

এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম এবার স্থিতিশীল থাকবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। দাম আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে, যদি সময়মতো সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হয়। আগে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লে ভারত থেকে আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করা হতো। এবার ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে। যে কারণে সে দেশেও পেঁয়াজের দাম বেশি। ভারতে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) এখন টনপ্রতি ৫৫০ মার্কিন ডলার। যা আমদানি করতে আরও প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক-কর রয়েছে। এতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০ টাকা। যে কারণে এখন খুব বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছেন না বাংলাদেশের আমদানিকারকরা।

কৃষকের কাছে পেঁয়াজ নেই : দেশের কৃষকদের ঘরেও এবার পেঁয়াজের মজুত একেবারে কম। কারণ, দেশের বাজারে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই পেঁয়াজের দাম অস্থিতিশীল। সাধারণত প্রতি বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত মূল মৌসুমের পেঁয়াজ বা হালি পেঁয়াজ তোলেন কৃষক। এ বছর ওই সময়ও পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। যে কারণে দাম বেশি থাকায় আগে ভাগেই উত্তোলন করে বিক্রি করেছিলেন চাষিরা। এতে তারা লাভবান হলেও সার্বিকভাবে দেশের মোট উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। এখন পেঁয়াজের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে মজুতদারদের হাতে।

কোথায় গিয়ে ঠেকবে পেঁয়াজের ঊর্ধ্বগতি : পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় একটি জেলা পাবনা। সেখানকার পেঁয়াজ বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। জেলার সুজানগরের চাষি মানিক হোসেন এবার পাঁচ বিঘা জমি থেকে ৩০০ মণ পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করেছেন মার্চের শুরুতে। যা পরিপক্ব হলে প্রায় ৫০০ মণ ছাড়িয়ে যেত। তখন তিনি দাম পেয়েছেন মণপ্রতি প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।

এই পেঁয়াজচাষি বলেন, অন্যান্য বছর ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের মণ থাকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। এবার দ্বিগুণের বেশি ছিল। দাম ভালো থাকায় আগেভাগে তুলে বিক্রি করেছি। কম ফলন পেলেও লাভ ভালো হয়েছে। পেঁয়াজের দাম এবার স্থিতিশীল থাকবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। দাম আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে, যদি সময়মতো সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হয়। শুধু মানিক হোসেন নন, বেশ কয়েকজন কৃষক জানান একই ধরনের তথ্য। গত মার্চেও পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় বেশির ভাগ কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন।

নভেম্বর-ডিসেম্বরে কী হবে? : বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলা গবেষণা কেন্দ্র। এ সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার পেঁয়াজ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সাধারণত পেঁয়াজের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি থাকে। এবার এখনই পেঁয়াজের বাজার চড়া। ওই সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের বড় অংশ হয় বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে, যা হালি পেঁয়াজ নামে পরিচিত। ওই সময় মোট দেশীয় উৎপাদনের ৮০ শতাংশ পেঁয়াজ কৃষক ঘরে তোলেন। তাই পেঁয়াজের দাম মার্চ থেকে পরবর্তী কয়েক মাস কম থাকে। এ ছাড়াও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে হওয়া মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও জুন-জুলাইয়েও অল্প পরিমাণ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ হয়ে থাকে। তবে এতে সরবরাহ পরিস্থিতি খুব বেশি পরিবর্তন হয় না।

যে কারণে সেপ্টেম্বরের পর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের ফলন হওয়ার আগের সময়টায় বাজারে পেঁয়াজের কিছুটা ঘাটতি থাকে। ওই সময় কৃষকের কাছে পেঁয়াজের মজুত থাকে না। কিন্তু মজুতদারদের কাছে পেঁয়াজ থাকে তখন। এ সময়ে তারা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা ও দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন।

দেশে এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে বড় ঘাটতি থাকায় মৌসুম শেষ হতে না হতেই বাজার তেঁতে উঠছে। এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার। তিনি বলেন, দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ পেঁয়াজের চাহিদা থাকে, তার বেশির ভাগই দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ হলেও ঘাটতির পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। যার অধিকাংশই আসে ভারত থেকে। যেহেতু ভারত রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে রেখেছে, সে কারণে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। আমদানির কোনো বিকল্প নেই।

আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, ভারতের পরে সবচেয়ে ভালো হয় মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনতে পারলে। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ চলছে। আমদানির সুযোগ নেই। এছাড়া মিসর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ এনে ব্যবসায়ীরা ২০১৯ সালে কোটি কোটি টাকা লোকসান করেছেন। এক কোটি টাকার পেঁয়াজ ২০ লাখ টাকা বিক্রি হয়নি। পচে নষ্ট হয়েছে। সে ঝুঁঁকি এবার কেউ নেবে না। তিনি বলেন, এবার পেঁয়াজের দাম স্বস্তিদায়ক হবেÑ এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। উৎপাদন অনেক কমেছে। সরকার যা বলছে, তার চেয়েও বেশি কমেছে। ফলে ক্রেতাদের বেশি দামেই কিনতে হবে।

আমার বার্তা/জেএইচ

একযোগে নিম্ন আদালতের ১৬৮ বিচারককে বদলি

অতিরিক্ত জেলা জজ, যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পদমর্যাদার ১৬৮ জন

ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে এ কে এম সহিদের নিয়োগ স্থগিত

ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী

কলেজছাত্র খালিদ হত্যা মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে ইনু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক

সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে কারাগারে প্রেরণ

রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের রিমান্ড শেষ না করেই
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অতিরিক্ত সময়ে ভুটানের চমকে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

প্রভু চলে গেলেও দাসরা আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে

ডিসেম্বরের মধ্যে এডিবি থেকে মিলবে ৪০০ মিলিয়ন ডলার

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে সমতা-ন্যায্যতার ভিত্তিতে: ড. ইউনূস

দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত চার সংস্থা

সেভেন সিস্টার্সের ৬০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকেছে চীনা সৈন্যরা

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৫ জনকে জেল-জরিমানা

একযোগে নিম্ন আদালতের ১৬৮ বিচারককে বদলি

ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে এ কে এম সহিদের নিয়োগ স্থগিত

অন্য ভাষাচর্চার আহ্বান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার

১৫ বছর আ.লীগের অত্যাচারে সহায়তা করেছে ভারত: সেলিমা রহমান

দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ধর্ম উপদেষ্টা

ব্যাংক যে অবস্থাতেই থাকুক গ্রাহকের ক্ষতি হবে না: গভর্নর

হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি শহীদ পরিবারের স্বজনদের

গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গণবিজ্ঞপ্তি জারির সিদ্ধান্ত

কিছু দল প্র‌তি‌বেশী দে‌শের ফাঁদে পা দি‌য়ে‌ছে: তা‌রেক রহমান

রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের জোর দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন ও কবির আহম্মদ

আত্মপ্রকাশ করল নতুন প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটি

ভৈরবে ট্রেনের ধাক্কায় ব্রিজ থেকে ছিটকে পড়ে নারীসহ নিহত ২