ই-পেপার সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

অস্থির পেঁয়াজের বাজার

রতন বালো
১১ জুলাই ২০২৪, ১৪:২০

শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজও কি ভরিতে কিনতে হবে? সোনার দামের মতো পেঁয়াজও কি লাইসেন্সের তালিকায় উঠবে? বাজুসের মতো পেঁয়াজের দরও কি বেঁধে দেবে সিন্ডিকেটÑ এমন বহুবিধ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের ভেতরে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের ভেল্কিবাজি দেখে সাধারণ মানুষ এখন দাম আতঙ্কে ভুগছে।

এমন অস্থিরতা দেখে দেশের সাধারণ মানুষের ভেতরে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এদিকে ঊর্ধ্বমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রিতে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। শেষ এক সপ্তাহে কেজি প্রতি দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেড় মাসের ব্যবধানে হয়েছে দ্বিগুণ। যদিও মাত্র কয়েক মাস আগেই পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়েছে। বাজারে এখনো দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। যেখানে আগামী মৌসুম আসতে আরও প্রায় ছয়-সাত মাস বাকি। যে কারণে এখন সাধারণ মানুষের কাছে বড় প্রশ্নÑ মৌসুমের শেষে এ বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে? তবে এ প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারো কাছেই।

বাংলাদেশে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার ঘটনা গত কয়েক বছরে ঘটছে। ২০১৯ সালে ঘাটতি দেখা দিলে কার্গো বিমানে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে। তবে ওই সময়ও সেসব পদক্ষেপে খুব বেশি সুফল আসেনি। আড়াইশ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে খেয়েছে মানুষ। এ অবস্থায়ও পেঁয়াজের দাম নিয়ে এখনো টনক নড়েনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। দ্রুত বেড়ে চলা এ পণ্যটির দাম কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।

মিসর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ এনে ব্যবসায়ীরা ২০১৯ সালে কোটি কোটি টাকা লোকসান করেছেন। এক কোটি টাকার পেঁয়াজ ২০ লাখ টাকা বিক্রি হয়নি। পচে নষ্ট হয়েছে। সে ঝুঁকি এবার কেউ নেবেন না, জানালেন আমদানিকারক আবদুল মাজেদ।

এদিকে সরকারিভাবে পেঁয়াজের দাম কমানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি-না, ভারত থেকে আমদানি বাড়াতে কোনো উদ্যোগ বা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কোনো পদক্ষেপ আছে কি-না এমন বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ নেই। যদিও মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মালেকা খায়রুন্নেছা বলেন, এখনো কিছু চূড়ান্ত নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কিভাবে পেঁয়াজের দাম কমানো যায় সে পথ খুঁজছে। আমরা আলোচনার মধ্যে আছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত এখনো আসতে পারিনি।

পেঁয়াজের মৌসুম শেষে দামে অস্থির পরিস্থিতি ২০১৯ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই হয়ে আসছে। এর আগে অস্থিরতা দেখা দিতো মৌসুমের শেষ ভাগে নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে। এ বছর সে সময় আরও আগেভাগে এসেছে, যখন নতুন মৌসুমের এখনো সাত মাস বাকি। এ বছর ওই সময় পেঁয়াজের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেÑ সাধারণ ভোক্তাদের কাছে এটিই এখন সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয়।

এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম এবার স্থিতিশীল থাকবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। দাম আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে, যদি সময়মতো সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হয়। আগে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লে ভারত থেকে আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করা হতো। এবার ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে। যে কারণে সে দেশেও পেঁয়াজের দাম বেশি। ভারতে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) এখন টনপ্রতি ৫৫০ মার্কিন ডলার। যা আমদানি করতে আরও প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক-কর রয়েছে। এতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০ টাকা। যে কারণে এখন খুব বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছেন না বাংলাদেশের আমদানিকারকরা।

কৃষকের কাছে পেঁয়াজ নেই : দেশের কৃষকদের ঘরেও এবার পেঁয়াজের মজুত একেবারে কম। কারণ, দেশের বাজারে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই পেঁয়াজের দাম অস্থিতিশীল। সাধারণত প্রতি বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত মূল মৌসুমের পেঁয়াজ বা হালি পেঁয়াজ তোলেন কৃষক। এ বছর ওই সময়ও পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। যে কারণে দাম বেশি থাকায় আগে ভাগেই উত্তোলন করে বিক্রি করেছিলেন চাষিরা। এতে তারা লাভবান হলেও সার্বিকভাবে দেশের মোট উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। এখন পেঁয়াজের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে মজুতদারদের হাতে।

কোথায় গিয়ে ঠেকবে পেঁয়াজের ঊর্ধ্বগতি : পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় একটি জেলা পাবনা। সেখানকার পেঁয়াজ বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। জেলার সুজানগরের চাষি মানিক হোসেন এবার পাঁচ বিঘা জমি থেকে ৩০০ মণ পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করেছেন মার্চের শুরুতে। যা পরিপক্ব হলে প্রায় ৫০০ মণ ছাড়িয়ে যেত। তখন তিনি দাম পেয়েছেন মণপ্রতি প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।

এই পেঁয়াজচাষি বলেন, অন্যান্য বছর ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের মণ থাকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। এবার দ্বিগুণের বেশি ছিল। দাম ভালো থাকায় আগেভাগে তুলে বিক্রি করেছি। কম ফলন পেলেও লাভ ভালো হয়েছে। পেঁয়াজের দাম এবার স্থিতিশীল থাকবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। দাম আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে, যদি সময়মতো সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হয়। শুধু মানিক হোসেন নন, বেশ কয়েকজন কৃষক জানান একই ধরনের তথ্য। গত মার্চেও পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় বেশির ভাগ কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন।

নভেম্বর-ডিসেম্বরে কী হবে? : বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলা গবেষণা কেন্দ্র। এ সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার পেঁয়াজ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সাধারণত পেঁয়াজের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি থাকে। এবার এখনই পেঁয়াজের বাজার চড়া। ওই সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের বড় অংশ হয় বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে, যা হালি পেঁয়াজ নামে পরিচিত। ওই সময় মোট দেশীয় উৎপাদনের ৮০ শতাংশ পেঁয়াজ কৃষক ঘরে তোলেন। তাই পেঁয়াজের দাম মার্চ থেকে পরবর্তী কয়েক মাস কম থাকে। এ ছাড়াও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে হওয়া মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও জুন-জুলাইয়েও অল্প পরিমাণ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ হয়ে থাকে। তবে এতে সরবরাহ পরিস্থিতি খুব বেশি পরিবর্তন হয় না।

যে কারণে সেপ্টেম্বরের পর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের ফলন হওয়ার আগের সময়টায় বাজারে পেঁয়াজের কিছুটা ঘাটতি থাকে। ওই সময় কৃষকের কাছে পেঁয়াজের মজুত থাকে না। কিন্তু মজুতদারদের কাছে পেঁয়াজ থাকে তখন। এ সময়ে তারা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা ও দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন।

দেশে এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে বড় ঘাটতি থাকায় মৌসুম শেষ হতে না হতেই বাজার তেঁতে উঠছে। এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার। তিনি বলেন, দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ পেঁয়াজের চাহিদা থাকে, তার বেশির ভাগই দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ হলেও ঘাটতির পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। যার অধিকাংশই আসে ভারত থেকে। যেহেতু ভারত রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে রেখেছে, সে কারণে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। আমদানির কোনো বিকল্প নেই।

আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, ভারতের পরে সবচেয়ে ভালো হয় মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনতে পারলে। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ চলছে। আমদানির সুযোগ নেই। এছাড়া মিসর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ এনে ব্যবসায়ীরা ২০১৯ সালে কোটি কোটি টাকা লোকসান করেছেন। এক কোটি টাকার পেঁয়াজ ২০ লাখ টাকা বিক্রি হয়নি। পচে নষ্ট হয়েছে। সে ঝুঁঁকি এবার কেউ নেবে না। তিনি বলেন, এবার পেঁয়াজের দাম স্বস্তিদায়ক হবেÑ এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। উৎপাদন অনেক কমেছে। সরকার যা বলছে, তার চেয়েও বেশি কমেছে। ফলে ক্রেতাদের বেশি দামেই কিনতে হবে।

আমার বার্তা/জেএইচ

চাঁনখারপুলে হত্যাকান্ডে কনস্টেবল সুজনসহ ৪ জন ট্রাইব্যুনালে হাজির

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুলে ৬ জনকে হত্যা মামলায় কনস্টেবল সুজনসহ ৪

অস্ত্র মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফাতেহ

যুগান্তরের সম্পাদককে ৫ দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে আইনি নোটিশ

সোহাগ হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদারকে পাঁচ

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির

আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদসহ
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতের ওপর পরমাণু হামলা চালাতে চেয়েছিল পাকিস্তান

পানি আনতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ৬ শিশুসহ নিহত ১০

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে: ম্যাক্রোঁ

সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড় ও ভারি বর্ষণের আশঙ্কা

সোহাগকে বাঁচাতে কেউ না এলেও, ওয়ারীতে হত্যাচেষ্টায় জনতার প্রতিরোধ

৭ লাখ টাকা নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, যে ব্যাখ্যা দিলেন এনসিপি নেতা

শুধু আজকের জন্য বিকেল থেকে ঢাবি স্টেশনে থামবে না মেট্রোরেল

চাঁনখারপুলে হত্যাকান্ডে কনস্টেবল সুজনসহ ৪ জন ট্রাইব্যুনালে হাজির

দুপুরে গণভবনে প্রধান উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন

ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প

উড়ন্ত পিএসজিকে মাটিতে নামিয়ে চেলসির বিশ্বকাপ জয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ভবন থেকে পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

খুলনায় অপহরণের শিকার খাদ্য পরিদর্শক হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার

মার্কিন ডলারের বিপরীতে মান বৃদ্ধি পেয়েছে টাকার

চাঁদপুরে ১১ কেজি গাঁজাসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতায় নিহত ছাড়িয়ে গেল ৫৮ হাজার

১৪ জুলাই ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা

বড় ব্যবধানে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

৩২৯ টেকনিক্যাল স্কুল নির্মাণে বছরে সনদ পাবে ৩ লাখ ৫৫ হাজার শিক্ষার্থী

মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব কমিশনগুলোকে কেউ দেয়নি: খসরু