ই-পেপার শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ

অনিরাপদ হচ্ছে ট্রেন যাত্রা

রতন বালো
০৪ মে ২০২৪, ১০:৪০
আপডেট  : ০৪ মে ২০২৪, ১১:১৯

  • ১৩ বছরে ৫১৪ জনের প্রাণহানি
  • সর্বশেষ দুর্ঘটনায় স্টেশন মাস্টারসহ তিনজন বরখাস্ত
  • এরপরেও রয়েছে ১৭৬১টি অনুমোদনহীন রেল ক্রসিং

ক্রমান্বয়ে অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ট্রেন যাত্রা। আরামদায়ক একই সঙ্গে নিরাপদ যাত্রার জন্য ট্রেনের সুখ্যাতি থাকলেও বর্তমান সময়ে তা অনেকটাই অপসারিত। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। যার সর্বশেষ সংযোজন গতকাল গাজীপুরের ট্রেন দুর্ঘটনা। রেলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছেই। ফলে অনেকটাই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে ট্রেন ভ্রমণ। যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে অনেকটাই ব্যর্থ রেল প্রশাসন। রেলের নিজস্ব সড়ক থাকার পরেও এই ধরনের দুর্ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

এছাড়াও রেল পরিচালনার জন্য রয়েছে শক্তিশালী ব্যবস্থা। যেখানে কর্মরত রয়েছেন দক্ষ রেল কর্মকর্তা কর্মচারীরা রয়েছে নিজস্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা রেল পুলিশ বলে চিহ্নিত। তারপরেও একই লাইনে দুটি ট্রেন সেই সাথে সংঘর্ষের ঘটনা রেলযাত্রায় ভীতি ছড়াতে শুরু করেছে। পরিবহনের ক্ষেত্রে রেল নিরাপদ ভেবেই মানুষ নিশ্চিন্তে ভ্রমণের জন্য রেলকে বেছে নেয়। সেখানেই যদি এমন অবস্থা চলে তাহলে নিশ্চিত নিরাপত্তার অবশিষ্ট কোথায়? গতকাল শুক্রবার গাজীপুরের রেল দুর্ঘটনা সেই প্রশ্নটি আবার সামনে নিয়ে এসেছে।

এদিকে সারাদেশে ২ হাজার ৮৩৫ কিলোমিটার রেলপথের ২ হাজার ৫৪১টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। যার মধ্যে অনুমোদিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা মাত্র ৭৮০টি। বাকি ১ হাজার ৭৬১টিই অনুমোদনহীন। আবার ৭৮০টি অনুমোদিত ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ২৪২টিতে রক্ষী বা গেইটকিপার আছে। বাকি ৫৩৮টি অনুমোদিত ক্রসিংয়ে কোনো গেইটকিপার নেই। জনগণ নিজ দায়িত্বে পারাপার হবেন এমন সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এসবই রেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা। যার কারণে বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা। সর্বশেষ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রবার। যদিও গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হাশেম,পয়েন্টম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যারা এই দুর্ঘটনায় আহত হলেন তাদের জন্য কোন সান্ত্বনা রেলের এই কর্মকাণ্ডে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গাজীপুরের দুর্ঘটনা নিয়ে গত ১৩ বছরে ৫১৪ জনের প্রাণিহানি ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন জয়দেবপুর রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার মো. হানিফ আলী। তিনি জানান, গতকাল সকাল ১১টার দিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর আউটার সিগন্যালের কাজীবাড়ি ছোট দেওড়া এলাকায় তেলবাহী ও যাত্রীবাহী দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে ওই ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় হাজারো যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে ডাবল লাইনের ডাউন লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করার কথা তিনি জানান। ইতোমধ্যে ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস জয়দেবপুর স্টেশন হয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরকিছু সময় পর একইভাবে একতা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে জয়দেবপুর স্টেশন হয়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এখন এক লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। বাকি লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রামের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে। পরে সকাল ১১টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। এক পর্যায়ে ট্রেনটি গাজীপুরের জয়দেবপুর আউটার সিগন্যালের কাজীবাড়ি ছোট দেওড়া এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় যাত্রীবাহী ট্রেনের চালকসহ কমপক্ষে চারজন আহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার দুই ঘণ্টা পর অন্য একটি লাইন দিয়ে ট্রেনচলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।

কিছু পরিসংখ্যান: গত বছর ২৩ অক্টোবর আউটার স্টেশনে একটি মালবাহী ট্রেন পেছন দিকে থেকে ধাক্কা দিলে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের দুটি বগি যাত্রীসহ উল্টে যায়। ভৈরবে দুই ট্রেনের সংঘর্ষের কারণ হিসেবে মালবাহী ট্রেনের সিগন্যাল না মানার কথা জানায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার জগন্নাথপুর রেলক্রসিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ভাবে লেভেল ক্রসিংয়ের এমন দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। এদিকে রেলওয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সালের গতকাল ৩ মে পর্যন্ত অন্তত লেভেল ক্রসিংয়ে ১ হাজার ৩৬৪টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫১৪ জন প্রাণ হারিয়েছে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা: দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘রোড সেফটিফাউন্ডেশন’ এর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লেভেল ক্রসিং এর দুর্ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা বলেছেন, ২০১২ সাল থেকে চলতি সময়ে পর্যন্ত (৩মে) সারাদেশে ১ হাজার ৩৬৪টি রেল দুর্ঘটনায় ৫১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটছে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। তবে এসব দুর্ঘটনার দায় নিচ্ছে না কেউ। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই রেলওয়ে দায় চাপাচ্ছেন সড়ক বিভাগের ওপর। আবার সড়ক বিভাগ বলছে এর দায়-দায়িত্ব রেলওয়ের। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা। ফলে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। লেভেল ক্রসিংয়ে রেলরক্ষী না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে এবং এতে ক্ষতি হচ্ছে রেলের সম্পদ।

রেলপথে যেকোনো স্থানে অনুমোদন ছাড়াই লেভেল ক্রসিং বানাচ্ছে স্থানীয়রা। তাদের যুক্তি সহজে চলাচলের জন্য তারা এসব ক্রসিং তৈরি করছে। তবে এসব কাজে সায় দিচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা। তাদের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ সহযোগিতায় রেলের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের মৌন সমর্থনে গড়ে ওঠেছে এসব রেল ক্রসিং। ফলে রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আর এসব কারণে সবগুলো লেভেল ক্রসিংয়ে রক্ষী দেয়া সম্ভব হয়। এমনটিই দাবি করছে রেলওয়ে।

অপরিকল্পিত রেলক্রসিং: রাজধানীতে রেলপথের প্রতি ১ থেকে ২০০ গজ পর পর লেভেল ক্রসিং বানাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এসবের জন্য রেলের কাছ থেকে তারা কোনো অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন দেখছেন না। রেলওয়ে সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পূর্বাঞ্চলে ২৩৭টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৫৮টি, ইউনিয়ন পরিষদের পূর্বাঞ্চলে ২৯৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২০৪টি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) পূর্বাঞ্চলে ৫টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭টি, সিটি করপোরেশনের পূর্বাঞ্চলে ২২টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৩২টি, উপজেলা পরিষদের পূর্বাঞ্চলে ৭টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২টি, পৌরসভার পূর্বাঞ্চলে ৫৭টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৫৯টি রেল ক্রসিং নির্মাণ করেছে। এর বাইরেই পূর্বাঞ্চলে অন্তত ১০৯টি ও পশ্চিমাঞ্চলে অন্তত ৬১টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে।

লেভেল ক্রসিং বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম জানান, রেল নিজস্ব পথে চলে, রেল কখনও সড়কে উঠে না। দিনের পর দিন লেভেল ক্রসিংয়ে সড়ক যান উঠে পড়ছে। দুর্ঘটনায় রেলের ব্যাপক ক্ষতিসহ সাধারণ ট্রেনযাত্রীও নিহত হচ্ছেন। লেভেল ক্রসিং বৈধ কিংবা অবৈধ যেটাই দুর্ঘটনা ঘটে, সেজন্য রেল দায়ী নয়। তবুও রেলকে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার দায় সড়ক বিভাগেরও রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আমার বার্তা/জেএইচ

তাদের চোখে পানি, মুখে হাসি

জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত হওয়া ২৩ নাবিক দেশে ফিরেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে

কোতোয়ালি থানা পুলিশের ৬ লাইনম্যানের চাঁদাবাজি

রাজধানীর সদরঘাট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর বিভিন্ন পরিবহন চালকরা এখন চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ। কোতোয়ালী থানা

ফরিদপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকল ব্যক্তি মালিকানায় দেয়ার পাঁয়তারা

করপোরেশনে নিজেদের মধ্যে কোনো প্রকার আলোচনা বা বোর্ড মিটিং ছাড়াই এক কর্মকর্তার সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্তে

লাগামহীন ডলার বাজার

দেশে অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করা যাচ্ছে না। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলার সঙ্কটের অজুহাতে প্রয়োজনীয়
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঝড়ের কারণে শঙ্কায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ

যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে নামছে বিএনপি

তাপসকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান খোকনের

চলন্ত বাসে আগুনে পুড়ে ৯ জনের মৃত্যু

ধোলাইখালে বাণিজ্যিক ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

রাঙামাটিতে ২ ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা

রাজধানীর ওয়ারিতে বালতির পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

‘সরকারের ধারাবাহিকতায় এবং স্থায়িত্বতায় উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে’

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি-বাতাসে রাজধানীতে স্বস্তি

পিরামিড তৈরির রহস্য উন্মোচনের দাবি বিজ্ঞানীদের

তাইওয়ানের পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতাদের তুমুল মারামারি

যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি ৩০ ব্যাংকের এমডি

টাঙ্গাইলে বজ্রপাতে ২ ভাইয়ের মৃত্যু, আহত ৪

দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস যেসব এলাকায়

ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে হিজবুল্লাহ: গ্যালান্ত

মালয়েশিয়ায় প্রতারিত হওয়া শ্রমিকরা পাচ্ছেন আড়াই কোটি টাকা

১৭০ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে ফিলিস্তিন

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও এফবিআইকে হাতের মুঠোয় রাখতে চান ট্রাম্প

সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

সাতক্ষীরায় ধানবোঝাই ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত