ই-পেপার শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

যুদ্ধ নয় শান্তি আসুক : মানবতার জয় হোক বিশ্বজুড়ে

প্রজ্ঞা দাস:
২৩ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৯

আগুনে পোড়া মাংসের গন্ধে ভারী হয়ে আছে বাতাস। শিশুর কান্না বোমার বিকট শব্দে হারিয়ে গেছে, মায়েদের আর্তনাদ শহরের ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে।ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পরে আছে কেবল শরীর নয়, সভ্যতার অন্তঃসারশূন্য আত্মাও। শূন্য দৃষ্টিতে ছাইয়ের স্তূপের দিকে তাকিয়ে থাকা শিশু, যার চারপাশে পড়ে আছে নিথর দেহ, যার আঙুলে মায়ের উষ্ণ হাতের স্মৃতি এখন শুধুই বরফের মতো ঠান্ডা। যে আকাশ একদিন মুক্ত ছিল, তা আজ ধোঁয়া আর বিস্ফোরণের আগুনে ঢেকে গেছে, সেখানে নক্ষত্র নেই, নেই স্বপ্ন দেখার অবকাশ। যে ঘরগুলো একসময় আলোয় ঝলমল করত, সেখানে এখন মৃতদেহ শুয়ে আছে সারি সারি, হাসপাতালগুলোর বারান্দায় স্তূপ হয়ে আছে ছিন্নভিন্ন শরীর, তারা এখন কেবল পরিসংখ্যানের সংখ্যা।যুদ্ধ এখানে রাজনীতির খেলা, গণহত্যা এখানে ‘প্রতিরক্ষা নীতি’। ন্যায়বিচার এখানে অর্থহীন শব্দ, মানবতা এখানে মৃত কোনো সভ্যতার প্রাচীন গল্প।

গাজা শহরের প্রতিটি ইট সাক্ষী, প্রতিটি গলির প্রতিধ্বনি জানে কেমন করে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হয়, কেমন করে আর্তনাদকে নীরবতায় পরিণত করতে হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই পৃথিবীর শ্রবণশক্তি এখন এতই দুর্বল যে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ভেসে আসা চিৎকার কেউ শুনতে পায় না। কেউ দেখে না সে নবজাতকের মুখ, যে জন্ম নেওয়ার আগেই অনাথ হয়েছে; কেউ শোনে না সেই বৃদ্ধার কণ্ঠস্বর, যে শেষ নিঃশ্বাসের আগে জানতে চায় এই মৃত্যুর হিসাব কেউ রাখবে কি না।যুদ্ধের নামে এই হত্যাযজ্ঞ কোনো রাজনৈতিক কৌশল নয়, এটি সভ্যতার বিরুদ্ধে মানবজাতির সবচেয়ে লজ্জাজনক বিশ্বাসঘাতকতা।কোনো নীতি নেই, কোনো মূল্যবোধ নেই, শুধু স্বার্থ আছে। যারা একসময় মানবতার কথা বলত, তারা এখন যুদ্ধের মুনাফা গুনছে। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কূটনৈতিক সভাগুলোতে এখন শুধুই সময়ক্ষেপণ, সেখানে মানবতার মৃত্যু নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই।

যুদ্ধবিরতি শব্দটি এখন প্রতারণার সমার্থক। প্রতিবার অস্ত্রবিরতির নামে নতুনভাবে ধ্বংসের পরিকল্পনা করা হয়। শান্তির আলোচনার আড়ালে লুকিয়ে থাকে আরও ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞের ছক। যারা বলেছিল মানবতা রক্ষা করবে, তারাই আজ নির্বিকার দর্শক হয়ে আছে।গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পরে আছে হাজারো মানুষের ভবিষ্যৎ, সেখানে কেউ নিরাপদ নয়। সবাই যেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ পার করছে। সাথে লাশের ভিড়ে নিজের মৃত্যু নাই তাদের এখন নিত্যদিনের কর্মে পরিণত হয়েছে। বর্বরোচিত হামলায় মৃত্যুর সারি এতটাই দীর্ঘ যে মৃতদের শবদেহ বয়ে নিয়ে যাওয়ার মানুষও নেই।শান্তির নামে যুদ্ধের পরিকাঠামো রচিত হচ্ছে। যারা সহানুভূতির বুলি আওড়ায়, তারা একইসাথে অস্ত্রের চালান পাঠাচ্ছে। যুদ্ধ এখন আর ক্ষমতার খেলা নয়, এটি সরাসরি ইচ্ছামাফিক হত্যাকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। যারা যুদ্ধ চায়, তারা মানবতার মৃত্যু চায়, তারা ধ্বংস চায়। এ অবস্থা চলতে দিলে সভ্যতা বিনষ্ট হবে। তখন আর মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না। শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে এই উপত্যকায় একদিন মানুষ ছিল কিন্তু মানুষের মারামারি, হানাহানিতে, সংঘাত আর বর্বরচিত কর্মকাণ্ডে সব শেষ হয়ে গেছে। এমন পৃথিবী থেকে কি লাভ যদি তা মানুষের বাসযোগ্যই না হয়। তাই এ অবস্থার উন্নতি করতে মানবতার পুনর্জাগরণই একমাত্র পথ।

গাজায় যা ঘটছে, তা এক ধরণের মর্মান্তিক গণহত্যা। এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। বিশ্বকে বুঝতে হবে, নীরব দর্শক হওয়াও এক ধরণের অপরাধ। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুই সমান অপরাধী। মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো এখন প্রত্যেকের দায়িত্ব হওয়া উচিত। কূটনৈতিক ভণ্ডামি বন্ধ করতে হবে। কূটনীতির নামে শোষণ নিপীড়ন আধিপত্য বিস্তারের চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।শান্তিপূর্ণ কূটনীতিকে মূল মন্ত্র হিসেবে মানতে হবে। সব রাষ্ট্রকে যুদ্ধ নয়, শান্তির ভিত্তিতে কূটনীতি পরিচালনা করতে হবে। পারস্পরিক আলোচনা, সমঝোতা এবং সংলাপই হতে পারে স্থায়ী শান্তির চাবিকাঠি। যুদ্ধবিরতির নামে প্রতারণার খেলা বন্ধ করতে হবে। শান্তির নামে ধ্বংস নয়, প্রতিটা প্রাণ অমূল্য। মানুষ হিসেবে আরেক প্রাণের রক্ষা ও নৈতিক দায়িত্ব। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা অনেক দৃশ্যপটের পরিবর্তন করে দিতে পারে। যুদ্ধবাজদের পক্ষে দাঁড়ানো সংবাদমাধ্যমগুলো মানবতার বিরুদ্ধেই কাজ করছে। এই অন্যায় অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সত্য প্রকাশ করতে হবে, যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা তুলে ধরতে হবে, যেন বিশ্ববাসী সত্য দেখতে পায়। বিশ্বজুড়ে জনগণের মধ্যে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সাধারণ মানুষ যদি একত্রিত হয়, তবে যুদ্ধবাজ শক্তিগুলো পিছু হটতে বাধ্য হবে। শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রচার বাড়াতে হবে। সেই লক্ষ্যে যুদ্ধের মূল উৎপাটনে প্রয়োজন একটি প্রজন্মকে মানবিক মূল্যবোধে গড়ে তোলা।

শিক্ষা, সংস্কৃতি, এবং চিন্তার প্রসারই পারে সহিংসতাকে প্রতিহত করতে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুদ্ধবিরোধী বিশ্বনীতি গঠন করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যুদ্ধ কখনো অস্ত্র দিয়ে শেষ হয় না, যুদ্ধ শেষ হয় তখনই, যখন মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়। শান্তির জন্য শুধু অস্ত্রবিরতি বা কূটনৈতিক আলোচনা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক পরিবর্তন। বিশ্বকে যদি সত্যিকার অর্থে শান্তির পথে হাঁটাতে হয়, তবে যুদ্ধের বাজারে যারা লাভবান হয়, সেই শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।নাহলে ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকবে মানবতা একদিন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, অথচ কেউ কিছুই করতে পারেনি।যুদ্ধ কোনো সমস্যা সমাধানের পথ নয়, বরং এটি নতুন সংকট সৃষ্টি করে। আজ আমাদের অস্ত্রের নয়, শান্তির প্রয়োজন। আগুন দিয়ে আগুন নেভানো যায় না, নির্মমতা দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমাদের প্রয়োজন সহমর্মিতা, সংলাপ এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। যুদ্ধবাজদের শাসন নয়, শান্তির বাণীই হোক সভ্যতার পথপ্রদর্শক। সময় এসেছে, বিশ্বজুড়ে একসঙ্গে আওয়াজ তোলার “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই!”

লেখক : শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ।

আমার বার্তা/জেএইচ

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনির বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তন

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়ে আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন মধ্য বামপন্থী লেবার পার্টির অ্যান্থনি আলবানিজ।

অনিয়ন্ত্রিত ঋণ ও খেলাপি সংস্কৃতি : ব্যাংকিং খাতের আত্মহননের ছক

ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে বলা হয় অর্থনীতির হৃদযন্ত্র। এই হৃদযন্ত্র যদি রক্ত পাম্প না করে, রাষ্ট্র নামের

নৈতিক সাহসের অভাবেই রাষ্ট্রব্যর্থতা, নিজেকে বদলানোই জাতির মুক্তি

আমি কখন ভালো হবো?—এই প্রশ্নটি যতটা ব্যক্তিগত মনে হয়, বাস্তবে তা একটি জাতির আত্মার আর্তনাদ।

রাখাইন পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক করিডোর

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশীরভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে এবং পুরো রাজ্যের নিয়ন্ত্রন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতকে সিনেমা থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসার আহ্বান পাকিস্তানের

আ.লীগ নিষিদ্ধে ভরসা করার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব: মাহফুজ

দুপুরের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন: শফিকুল ইসলাম

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক হাসনাতের

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত আমাদের কোনও বিষয় নয়: জেডি ভ্যান্স

নতুন পোপ হলেন আমেরিকান রবার্ট প্রিভোস্ট

বাড়ছে তাপপ্রবাহ, ৪৫ জেলায় অসহনীয় গরম

‘গুজবের রজনি’ পাকিস্তান নিয়ে মিথ্যাচারে মশগুল ভারতীয় মিডিয়া

নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ : আসিফ মাহমুদ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল আ.লীগকে নিষিদ্ধ করা: নাহিদ

৯ মে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, নিহত আরও ১০৬ ফিলিস্তিনি

তিনটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, বলছে ভারত

সকালেও বিক্ষোভ চলছে যমুনার সামনে

রাতভর নাটকীয়তার পর অবশেষে সকালে গ্রেপ্তার আইভী

বিএনপি সংস্কার চায়, কিন্তু পরিস্থিতি জটিল করা হচ্ছে: ফখরুল

জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে পদত্যাগ করব

বিনিয়োগ সম্ভাবনার বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা: তাকুইয়া কাওয়ামুরা

শ্রমবাজার ধ্বংসে ভয়ানক অপতৎপরতা বহিস্কৃত বায়রা নেতা ফকরুলের

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়লো