গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইএম কারখানা বিভাগ কি এখন বিএনপি-জামাত আর শিবির সম্পৃক্ত রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্তদের গোপন আস্তানায় পরিণত হয়েছে ? বলা চলে, এখানে এই বিএনপি-জামাত চক্র একটি বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। অভিযোগ আছে, রাষ্ট্রবিরোধী অনেক কাজেরই পরিকল্পনা বৈঠক হয় এই বিভাগের একজন কর্মকর্তার কক্ষে। সরকার বিরোধী সন্ত্রাস কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মোটা অঙ্কের টাকাও বিলি বণ্টন হয় এখানে। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভাষ্য, তাদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ এই সিন্ডিকেটের প্রধান হওয়ার কারণে তারা ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন না।
অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, অত্যন্ত ক্ষমতাধর কর্মকর্তা এই মো. ইউসুফ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঠিকাদারির কাজ ভাগাভাগি করে অর্থ লোপাটের অভিযোগ। আর এই অর্থই তিনি বণ্টন করেন এই সিন্ডিকেটের পেছনে।
সূত্র আরও জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ নিয়মিত অফিসে বসেন না। তার খোঁজে কেউ অফিসে গেলে কর্মচারীরা বলেন, ‘স্যারকে আমরাই অফিসে পাই না আপনারা কীভাবে পাবেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা আমার বার্তাকে বলেন, গণপূর্ত বিভাগে মূলত ঠিকাদারদের আনাগোনার বেশি। তাদের মন্ত্রী এবং প্রধান প্রকৌশলী অনেক কঠোর এবং চেষ্টা করেন সততার সাথে চলতে। সাধারণ ঠিকাদার আর কর্মকর্তা কর্মচারীরা মন্ত্রী আর প্রধান প্রকৌশলীর মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো খানে যেতেও পারে না। কারণ এতে করে প্রতিষ্ঠান এবং উনাদেরই সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। কিন্তু মো: ইউসুফ রয়েছে পৃথক একটি শক্তিশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট। মূলত: গণপূর্ত অধিদপ্তরে বিএনপি জামাত ঘরনার প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি। আর তার কাজ হচ্ছে এই সিন্ডিকেটকে যে কোনো ভাবে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া এবং সেখান থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নেওয়া। অর্থাৎ, এই সিন্ডিকেট গড়ে তোলার পেছনে মোটা অঙ্কের কমিশন নেওয়াটাইতার আসল কাজ। আই এই কমিশনের টাকার একটি অংশ ব্যয় করেন তিনি রাষ্ট্র বা সরকার বিরোধী কাজে জড়িতদের পেছনে।
গণমাধ্যম সব সময়ই এড়িয়ে চলেন তিনি। বিশেষ করে যে সকল গণমাধ্যমকে তিনি ম্যানেজ করতে পারেন না তাদের বেশি এড়িয়ে চলেন। তিনি যেহেতু কমিশন ছাড়া কাজ করেন না তাই নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখেন সবসময়ই।
কিছুদিন আগে একজন ঠিকাদার তার বিরুদ্ধে পাওনা টাকা আদায়ে থানায় অভিযোগ পর্যন্ত করেছিলেন। যা গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনামও হয়ে ওঠে । নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ তখন তড়িঘড়ি করে উক্ত ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করে বিষয়টি আপস করে ফেলেন।
সূত্র জানায়, অর্থ বছরের শেষের দিকে এসে এখন তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে তার কমিশনের টাকা আদায়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কাজ শেষ না করেও মোটা অংশের কমিশন খেয়ে ঠিকাদারদের কাউকে কাউকে পুরো বিল পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও আছে ইউসুফের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ পত্রিকায় শিরোনাম হয়ে এসেছে। তখন তাকে বদলির কথা উঠেছিলো। কিন্তু বিশেষ একটি মহলের জোরালো তদবিরের কারণে সেটা সম্ভব হয় নাই। এই বদলি ঠেকাতেও মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয়েছে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর এই নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফকে।
কর্মকর্তাদের কয়েকজন জানান, ইএম কারখানা বিভাগ একটি অত্যন্ত লোভনীয় পোস্টিং এখানে নয় ছয়ের সুযোগ খুব বেশী। তারা শুনেছেন, এই স্থানটিতে নির্বাহী প্রকৌশলী পদ নিয়ে আসতেও তাকে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।
এই সিন্ডিকেটে তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বিহারী কাওসার, আরিফ, বালা এবং নাজমা এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক ঠিকাদার আমার বার্তাকে বলেন, আগারগাঁওয়ে ২ বছর আগে শেষ হওয়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্পের কাজের বিল আটকিয়ে তার কাছ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ ৩৫ লাখ টাকা আদায় করেন। তিনি বাধ্য হন এই টাকা দিতে। এই কাজে তার লাভ দুরে থাক, আসলাটাই তার উঠাতে কষ্ট হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এই সিন্ডিকেট অবৈধ অর্থ ও সম্পদ এতটাই বেশী অর্জন করেছে যে কোন আইন ও নীতিমালা তাদের স্পর্শ করতে পারে না। এরা পুলিশ বা দুর্নীতি দমন কমিশনকে পর্যন্ত কেয়ার করে না। ওদের একটাই কথা, টাকা থাকলে সব ম্যানেজ হয়ে যায়।’
অধিদপ্তরে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, এই চক্রর একটাই কাজ, কমিশনের বিনিময় সিন্ডিকেটের ঠিকাদারদের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া। তা ছাড়া এই সিন্ডিকেটের একটা বড় গুণ হচ্ছে, তা হলো, যখন যিনিই মন্ত্রী, সচিব কিংবা প্রধান প্রকৌশলী হয়ে আসেন তাঁদের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সার্থক হয়। বর্তমান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং প্রধান প্রকৌশলী অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। এই দুজনকে ম্যানেজ করতে না পারলেও তাদের নাম এরা ঠিকই ভাঙ্গিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন এই নির্বাহী প্রকৌশলী চক্রকে কঠোর হস্তে দমন করতে না পারলে তাঁদের দুজনেরও সুনাম ক্ষুণ্ন হবে, যেটা ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে।
কর্মচারীরা আরও জানান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সিভিল শাখায় নতুন বেশ কয়েকটি টেন্ডার হয়েছে। এগুলো নিয়েও নির্বাহী প্রকৌশলীর সিন্ডিকেটে চলছে কমিশন বাণিজ্যের রফাদফা। ঊর্ধ্বতন মহল সচেতন আর সতর্ক না হলে এই প্রতিষ্ঠান একসময় পুরোটাই দুর্নীতিবাজ আর সরকারের উন্নয়ন বিরোধীদের একটি শক্তিশালী আখড়ায় পরিণত হবে।
তারা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফের অপশক্তির উৎস কি শুধুই টাকা নাকি এর পেছনে আর কারো মদদ আছে সেটাও খুঁজে বের করতে হবে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফের সাথে যোগাযোগ করলে, তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
আমার বার্তা/এমই