বিদ্যুৎ ক্রয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ কোনও গ্রাহক একবার বিদ্যুৎ সংযোগ নিলেই তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন আর নাই করুন; তাকে ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতেই হয়। এই চার্জকে ফিক্সড বা স্থায়ী চার্জও বলা হয়। কিন্তু বাল্ক বা পাইকারি বিদ্যুৎ ক্রয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবিকে এই চার্জ পরিশোধ করতে হয় না। কিন্তু পিডিবি বলছে, এখন থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতে হবে।
স¤প্রতি বাল্ক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির যে আবেদন পিডিবি করেছে সেখানেই এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এর কাছে এই প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, দেশে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার পুরোটাই কিনে নেয় পিডিবি। সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের একক ক্রেতা পিডিবি। এরপর পিডিবি সেই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রির দাম ঠিক করে দেয় বিইআরসি। একই সঙ্গে বিইআরসি খুচরা বিদ্যুতের দামও ঠিক করে দেয়।
সবশেষ ২০২০ সালের বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সময় আবাসিকে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের জন্য ৩০ টাকা করে ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করে দেয় কমিশন। তবে আবাসিকে গৃহ নির্মাণের জন্য সংযোগ নিলে ডিমান্ড চার্জ প্রতি কিলোওয়াটে ১০০ টাকা। অন্যদিকে শিল্প এবং বাণিজ্যিক সংযোগে প্রতি কিলোওয়াটে ডিমান্ড চার্জ ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানেও কোনও অস্থায়ী সংযোগে ডিমান্ড চার্জ ১০০ টাকা ধরা রয়েছে।
অর্থাৎ কোনও গ্রাহক আবাসিকে ৫ কিলোওয়াটের একটি সংযোগ নিলে তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন আর না করুন মাসে তাকে ১৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। একই ক্ষমতার শিল্প বা বাণিজ্যিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩০০ টাকা। বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ বিক্রির বাইরেও ডিমান্ড চার্জ থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করে থাকে। কিন্তু বাল্ক বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবি এই চার্জ পায় না। কেবল মাত্র প্রতিষ্ঠানটি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বিক্রি করে ওই পরিমাণ চার্জই পেয়ে থাকে।
এখন পিডিবি বলছে, তাদেরও এই ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে এই চার্জ পরিশোধ করতে হবে বিতরণ কোম্পানিকেই। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো এই টাকা কোথা থেকে দেবে। একবার যদি বিইআরসি বাল্ক বিদ্যুৎ বিক্রিতে এই ডিমান্ড চার্জ আরোপ করে, তাহলে তার দায় শেষ অবধি গ্রাহকের কাঁধেই চাপবে।
জানতে চাইলে বিইআরসি এর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের কাছে এ বিষয়ে পিডিবি আবেদন করেছে। কিন্তু এখনও যেহেতু শুনানি হয়নি তাই এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
অন্যদিকে পিডিবি এমন দাবির যুক্তি হিসেবে বলছে, ডিমান্ড চার্জ না থাকায় বিতরণ কোম্পানি থেকে প্রতিদিনের মোট চাহিদার পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। বিতরণ কোম্পানি ভেদে বাল্ক বিদ্যুতের দাম আলাদা হওয়াতে একজনের জন্য উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যজনকে কম দামে দিয়ে দিতে হয়। এজন্য গড় বাল্ক দাম কমে যায়। এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়ে সরকারের ভর্তুকি বেশি প্রয়োজন হয় বলে দাবি করছে পিডিবি।