দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় প্রধান অভিযুক্ত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ এখনও পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, আজিম উদ্দিন পলতক অবস্থায় এই মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে চালাচ্ছেন নানামুখি তৎপরতা।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্মনাতের বিষয়ে দুদকের দায়ের করা এই মামলায় চেয়ারম্যান এবং চার ট্রাস্টিসহ মোট ছয় জনকে আসামি করা হয়। চেয়ারম্যান ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ গত ২২ মে আগাম জামিন নেয়ার জন্য আবেদন করলে তাদের আবেদন খারিজ করে পুলিশে সোপর্দ করেন হাইকোর্ট। তারা এখন কারাগারে থাকলেও মামলার ১ নম্বর আসামি আজিম উদ্দিন আহমেদ পলাতক রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে অভিযুক্তরা কয়েকবার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এখন এই মামলা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে নানা মূখী তৎপরতা চালাচ্ছেন আজিম উদ্দিন আহমেদসহ অন্যরা। এর মধ্যে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে আশাহত হয়েছেন অভিযুক্তরা। ট্রাস্ট্রিদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির ঘটনা, জঙ্গী অর্থায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে বিলাসবহুল গাড়ী ক্রয়সহ নানা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে মামলা দায়ের করে দুদক।
সূত্র আরো জানায়, সরকার সংশি¬ষ্টদের আনুকূল্য না পেয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে দেশত্যাগী এক ফেসবুক অ্যাকটিভিস্টের মাধ্যমে রাষ্ট্র-বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন অভিযুক্ত ট্রাস্ট্রিরা।
হাইকোর্টের দেয়া আদেশে বলা হয়, বর্তমান সময়ে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার খুনের চেয়ে ভয়াবহ অপরাধ। জামিন আবেদনকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আবেদনকারী অভিযুক্তরা আগাম জামিন পেতে পারেন না। এ ছাড়া আগাম জামিন পাওয়ার মতো যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য কারণ তারা আদালতকে দেখাতে পারেননি। যে কারণে আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হলো।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন ট্রাস্টির দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান ও তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মে মাসে ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়টির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী এটি একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের সুপারিশ/অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কয়েকজন সদস্যের সম্মতির মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অন্যায়ভাবে লেনদেন হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বেআইনি কার্যকলাপ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিশ্বাস ভঙ্গ করে অন্যায়ভাবে লাভবান হয়ে বেআইনি কার্যক্রম করে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ায় এ ছয়জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলা করা হয়েছে।