* জাহানপুর-দোরমুটিয়া গ্রামের মাঝামাঝি প্রধান সড়কের সাথে অবস্থিত সোনা মুন্সি পুকুর নামক স্থানটি সবার কাছে পরিচিত।। কিন্তু, এর ইতিহাস ঐতিহ্য সবার নিকট অজানা। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায় যে প্রায় ১৮০০-১৮৫০ শতকে সোনা মুন্সি জনকল্যাণমূলক পুকুর ঘাটটি প্রতিষ্ঠা করেন, বর্তমান এ পুকুর ঘাটের বয়স প্রায় তিনশত বছর। তৎকালীন সময়ে সোনা মুন্সি একজন কামেল ও বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন, বিভিন্ন বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বিদের মাধ্যমে জানা যায় যে, তারা তাদের বাপ দাদাদের নিকট থেকে জেনেছেন সোনা মুন্সি ফুরফুরা দরবার শরীফ পীরের একজন শিষ্য বা মুরিদান ছিলেন।
* তৎকালীন সময়ে রাসুলের দরবার অর্থাৎ হজ্জে যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কিন্তু কোন একটি অসুবিধার কারণে তিনি যেতে পারেননি বলে জানা যায়। তখন তিনি হজ্জে যাওয়া খরচের পুরোপুরি টাকাটি জনকল্যাণে (সদকায়ে জারিয়া) ব্যবহারের জন্য তিনি একটি পুকুর, ঘাটসহ সিঁড়ি, অযু করার স্থান ও রাস্তার পাশে পথচারীদের বিশ্রাম বা আশ্রয়স্থলসহ একটি পাঞ্জেগানা নির্মাণ করেন।
* প্রায় ১৮০০-১৮৫০ শতকে কেশবপুরের অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা কলকাতায় কেশবপুর-ত্রিমোহিনী ভায়া কলারোয়া রাস্তা দিয়ে ওপারে (ভারত) ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে নিয়মিত যাতায়াত করতেন । কেউ ঘোড়ার গাড়ি বা গরুর গাড়ি, কেউ সাইকেল বা দুই তিন দিন নাগাদ পায়ে হেঁটে তারা কলকাতা থেকে যশোর আবার যশোর থেকে কলিকাতা যাতায়াত করেছেন।
* পথিমধ্যে খারাপ আবহাওয়া, অসুস্থ জনিত বা ক্লান্ত থেকে কিছুটা উপশম পেতে রাস্তার পাশে সোনা মুন্সির পুকুর থেকে গোসল বা পবিত্র হয়ে নামাজ কায়েম কিংবা ক্ষনিকের জন্য বিশ্রাম নিতেন। বর্তমান ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সের মুরুব্বিদের নিকট থেকে জানা যায় যে তারা তাদের বাপ দাদাদের নিকট থেকে জেনেছেন যে, সোনা মুন্সি একজন আধ্যাত্মিক ও পরহেযগারি ব্যাক্তি হিসেবে এলাকায় খুবই স্বনামধন্য ব্যক্তিছিলেন। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধক, তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধক ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি, তিনি লোক দেখলেই ভালো মন্দের বিচার করতে পারতেন ও তার কৃতকর্ম তার সামনেই বলতে পারতেন। তত্কালীন সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও বিভিন্ন জটিলতা বিষয়ে তার কাছে উপস্থিত হলে তিনি সমস্যার সমাধান করতেন এবং ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করতেন।
* সোনামুন্সির বংশধররা দোরমুটিয়া গাজী পাড়া বসবাস করছেন, খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে তাঁর বংশের নাতি-নাতনীর ছেলেমেয়েরা যার যার মতো বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।
* তার স্থাপত্যের পাশেই তিনি শায়িত আছেন। মহান এ ব্যক্তি তার জনকল্যাণমূলক নিদর্শনের জন্য আজও স্থানীয় মানুষের হৃদয়ে যুগে যুগে বেঁচে আছেন।
* এলাকাবাসী এই স্থাপত্য স্থায়ীভাবে টেকসই ও ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষার জন্য সরকারি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর (Archeology Department) এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আমার বার্তা/জেএইচ