মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও রহস্যের জট খুলতে পারেনি পুলিশ। গ্রেফতার হয়নি মূল অপরাধীরা। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করার কারণে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় নিহতের পরিবার।

এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাঝেরকান্দি এলাকার সৌদি আরব প্রবাসী সোহাগ হাওলাদারের সঙ্গে চাচা শাহাদাৎ হাওলাদারের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান।

স্বজনদের অভিযোগ, এরই জেরে গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘরে ঢুকে একা থাকা সোহাগের স্ত্রী পাখি আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করে শাহাদাৎ ও তার লোকজন। পরে পালিয়ে যায় তারা।

এই ঘটনায় নিহতের মা শারমিন বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার কালকিনি থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দায়ের করেন। তবে মামলাটি রেকর্ডের সময় অজ্ঞাত আসামিদের নামে করা হয়। এতে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশা ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে পরিবারে।

এলাকাবাসীর দাবি, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে অভিযুক্ত শাহাদাৎ হাওলাদারকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।

তার স্ত্রী পলি আক্তার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকলেও এই হত্যায় আমরা জড়িত নই। আমাদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। আমরাও চাই ঘটনার বিচার হোক।’

এদিকে স্ত্রীর মৃত্যুর খবরে গত শুক্রবার সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন সোহাগ হাওলাদার। নিহত পাখি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া গ্রামের দোলোয়ার হোসেন মল্লিকের মেয়ে। বিয়ের কিছুদিন পরই প্রবাসে চলে যান সোহাগ। তাদের সংসারে চার বছরের এক ছেলে রয়েছে।

পাখির মা শারমিন বেগম বলেন, ‘থানায় আমাকে একাধিক কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলা হয়েছিল। আমি না বুঝেই স্বাক্ষর করেছি। তখন আমি মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলাম। আমি যাদের নাম বলেছিলাম, পুলিশ তাদের বাদ দিয়ে অজ্ঞাত আসামি করেছে। তাহলে কি আমার মেয়ের হত্যার বিচার পাবো না? মূল অপরাধীরা কি তাহলে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে?’

পাখির স্বামী সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘আমার শাশুড়ির কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে পুলিশ অজ্ঞাত আসামি করেছে। তিনি কিছুই বোঝেননি, আর আমি দেশেও ছিলাম না। এতে ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচার প্রতিষ্ঠা হোক।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রবাসীর স্ত্রী হত্যাকাণ্ড একটি ক্লুলেস ঘটনা। রহস্য উদঘাটনে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও কাজ করছে। জহির নামের একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। শিগগিরই মূল অপরাধীরা ধরা পড়বে।’

আমার বার্তা/এল/এমই