অনগ্রসর জনপদের মধ্যে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নাম উঠে এলেও এখানকার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন। এতে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল চেয়ে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও কাঙ্ক্ষিত জনবল মিলছে না।
চরাঞ্চল সমৃদ্ধ ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এ উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবার জন্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া পার্শ্ববর্তী সাঘাটা ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষও চিকিৎসা নেয় এ হাসপাতাল থেকে। কিন্তু গরিবের ভরসাস্থল এ হাসপাতালটিতে জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটি ২০১১ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনো জনবল রয়েছে ৩১ শয্যার। হাসপাতালে গাইনি এন্ড অবস, মেডিসিন, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া এই চার বিভাগে জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১১টি পদের মধ্যে ১০টি শূন্য।
অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক মাহফুজা আখতার খাতা-কলমে হাসপাতালে থাকলেও যোগদানের দিন থেকেই তিনি প্রেষণে ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটে কর্মরত আছেন। এছাড়া মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সালেহীন কাদেরী ২০০৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এবং সহকারী সার্জন ডা. মাজেদুল ইসলাম ২০১১ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বিষয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৯টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী, ফার্মাসিস্টসহ বিভিন্ন পদে মোট ৪৮টি শূন্যপদ দীর্ঘদিনেও পূরণ হয়নি।
ফুলছড়ি উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম-সমন্বয়ক আহসানুল হক স্বাধীন বলেন, ‘ফুলছড়ির মতো অনগ্রসর এলাকায় অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসককে ঢাকায় প্রেষণে রাখা মোটেও কাম্য নয়। প্রয়োজনীয় জনবল ছাড়া হাসপাতাল চলতে পারে না।’
উদাখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ কাবিল উদ্দিন বলেন, গাইনি ডাক্তার না থাকায় প্রসূতিরা হাসপাতালমুখী হতে চান না। দরিদ্র মায়েদের জন্য এই সরকারি হাসপাতাল হলেও সিজারের সুবিধা না থাকায় তাদের ভোগান্তি বেড়েছে। হাসপাতালটিতে অপারেশন চালুর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রুহুল আমিন মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে গড়ে প্রতিমাসে আন্তঃবিভাগে ৫০০ জন, বহির্বিভাগে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ১০ হাজার ও জরুরি বিভাগে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া এনসিডি কর্নারে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০০ জন রোগী উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় কোনো কারণে আমি ফিল্ড ভিজিটে গেলে রোগীদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তারপরও এনসিডি কর্নারে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা চলছে এবং রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। জটিল রোগীদের প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি রেখে ইনসুলিন প্রদান করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহির্বিভাগে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার না থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করাতে রোগীদের গাইবান্ধায় যেতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। বিষয়টি একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএম তানভীর রহমান বলেন, ‘গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন চালু করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে জনবলের সংকট রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল চেয়ে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সীমিত সংখ্যক লোক দিয়ে সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল বরাদ্দ দেওয়া হলে অপারেশন থিয়েটার চালু সম্ভব হবে।’
আমার বার্তা/এল/এমই