দিনাজপুরের কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিন ইউনিটের মধ্যে দুটি বন্ধ থাকায় ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৫০ মেগাওয়াট; যা জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সবশেষ বন্ধ হওয়া তৃতীয় ইউনিটটির মেরামত কাজ চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই এটি আবার চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
তিনি জানান, ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটটির গভর্নর ভাল্ভ স্টিম সেন্সর-এর ৪টি টারবাইন নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ওই ইউনিটটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। তিনটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি চালু রয়েছে। কিন্তু এই ইউনিটটিতে ১২৫ মেগাওয়াটের স্থলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৫০ মেগাওয়াট। যা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদিত কয়লার উপর ভিত্তি করে খনির পাশেই ২০০৬ সালে গড়ে উঠে কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রথম অবস্থায় ১২৫ মেগাওয়াট করে মোট ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি ইউনিট চালু করে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২৫ মেগাওয়াট। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানান জটিলতায় কখনো এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একসঙ্গে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি।
এর আগেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিট এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর ২২ ফেব্রুয়ারি কোনোমতে চালু হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এরপর ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিট থেকে ১৬০ মেগাওয়াট এবং ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল।
এদিকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট একসঙ্গে চালাতে প্রতিদিন কয়লার প্রয়োজন পড়ে প্রায় ৫ হাজার ২শ টন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিনটি ইউনিট একসঙ্গে কখনো চালাতে না পারায় কোল ইয়ার্ডে জমেছে কয়লার বিপুল মজুত।
কয়লা খনি সূত্রে জানা গেছে, কোল ইয়ার্ডে বর্তমানে কয়লা মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার টন। খনি থেকে প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার টন কয়লা। কোল ইয়ার্ডে জায়গা না থাকায় অব্যাহত কয়লা উত্তোলন নিয়ে শংকায় রয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ।
আমার বার্তা/এমই