গ্রীষ্মের এই অসহনীয় গরম থেকে স্বস্তি পেতে প্রাপ্তবয়স্করা একটু পর পর চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছেন, তৃষ্ণা পেলে পানি পান করছেন, রোদে বের হলে সঙ্গে ছাতা রাখছেন, রোদ চশমা ব্যবহার করছেন, কাজ করতে গিয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু শিশু ও নবজাতকদের বেলায় কী হচ্ছে?
শিশুরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না যে চৈত্রের কাঠফাটা রোদে তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তাই, গরমের সময় তাদেরকে বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে সুরক্ষিত রাখতে অভিভাবকদের বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে।
শিশুদের গ্রীষ্মকালীন রোগ-বালাই
বছরের উষ্ণতম মাস এপ্রিলে শিশুরা সাধারণত ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের চর্মরোগ, ভাইরাস জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। এসময় হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া ভীড় থাকে।
“এখন হাসপাতালে এক হাজার থেকে ১২০০ রোগী আসে। আউটডোরে রোগীর চাপ অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগী। প্রচুর চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীও আসছে,” বলছিলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ।
“শিশুরা এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ, গরমের সময় ভাইরাসগুলো বেশি জন্মায়। এসময় খাবারে অল্পতেই পঁচন ধরে। সেই খাবার যখন কেউ খেয়ে ফেলে, তাহলে তার ডায়রিয়া হয়ে যায়।”
এছাড়া, “চর্মরোগ ছোয়াঁচে হওয়ায় ছড়ায় বেশি। গরমের জন্য বাচ্চাদের বাইরে বড়দেরও এটি হচ্ছে।”
ডা. আহমেদ জানান, গরমে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, প্যারাসাইটজনিত রোগ বাড়ে। কারণ তাপমাত্রার সাথে এগুলোর সংক্রমণ বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক আছে।
ভাইরাল ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার বাইরেও বাংলাদেশে এইসময় চিকেন পক্স বা জলবসন্ত, রুবেলা, মাম্পস, স্ক্যাবিস বা খোঁসপাচড়া ইত্যাদি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
“স্ক্যাবিস খুব বেশি হয় এসময়। কিন্তু এর মূল কারণ, আমাদের দেশে ফাঙ্গাল ক্রিমের বেশিরভাগই তাদের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। অধিকাংশ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে,” তিনি যোগ করেন।
সংক্রমণজনিত ছোঁয়াচে রোগ ছাড়াও শরীর থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ঘাম বেরিয়ে যাওয়ায় তীব্র গরমে শিশুরা হিটস্ট্রোকেও আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া, গরমে অনেক শিশুর ঘামাচিও দেখা দেয়।
শিশু ও নবজাতকরা যাতে এই ধরনের রোগ-বালাইতে আক্রান্ত না হয়, তাই বাবা-মায়েদেরকে কিছু বিষয়ে এখন থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক আহমেদ।
অতিরিক্ত রোদ থেকে শিশুদের সাবধানে রাখা উচিৎ।
শিশুরা ঘরের বাইরে যেতে বা খেলাধুলা করতে পছন্দ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এক্ষেত্রে এটা সবার আগে মনে রাখা প্রয়োজন যে গরমের সময় শিশুদেরকে নিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ালে তাদের খুব সহজেই হিটস্ট্রোক বা ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সেজন্য “শিশুদের জন্য ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা” করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. আহমেদ।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এনএইচএস বলছে, ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখা উচিৎ। প্রাপ্তবয়স্ক শিশুদেরকেও গ্রীষ্মকালীন রোদ থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে, বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটার সময়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এন্ড মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি দ্বারা ১৮ বছরের নীচের শিশুদের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সেজন্য যদি কোনও কারণে শিশুদেরকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে সানস্ক্রিন ও সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষা দিবে, এমন পোশাক পরানো উচিৎ। সেইসঙ্গে, তাদেরকে ছাতার নীচে রাখতে হবে।
আমার বার্তা/এল/এমই