দেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ যেন দৈনন্দিন অনিবার্য হয়ে গেছে। আইন আছে, প্রচার চলছে, বিভিন্ন নিরাপত্তা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে—তবুও মৃত্যুর মিছিল থামছে না। প্রশ্ন উঠছে- নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে আমাদের কি ন্যূনতম চেষ্টা আছে, নাকি নিরাপত্তা শুধুই কাগজে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে?
এমন পরিস্থিতিতেই প্রেক্ষাপটেই মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য “মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি”।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ৫ হাজার ৮৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৪৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৭ হাজারের বেশি মানুষ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ৩ হাজার ৩৯টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে প্রায় ৩ হাজার মানুষের। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৫ জন মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন।
তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনেক বেশি উদ্বেগজনক। তাদের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩১ হাজার ৫৭৮ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান— যা সরকারি হিসাবের অন্তত পাঁচগুণ বেশি। অর্থাৎ সড়কে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮৬ জনের মৃত্যু হয়। যাদের বেশিরভাগই নারী শিশু ও শিক্ষার্থী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই মৃত্যুর পেছনে রয়েছে অতিরিক্ত গতি, অদক্ষ চালক, সড়কের নকশাগত ত্রুটি এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা।
সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকা ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কেবল বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ও বিধিমালা ২০২২ যথেষ্ট নয়, কারণ এগুলো মূলত পরিবহন নিয়ন্ত্রণের আইন—নিরাপত্তার নয়। সাম্প্রতিক সংশোধনীতে গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট ও সিটবেল্ট ব্যবহার সংক্রান্ত কিছু ধারা যুক্ত হলেও তা সড়কে মৃত্যুহার বা দুর্ঘটনা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে আইনটি বাস্তব প্রয়োগে ব্যর্থ হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে প্রাণহানি রোধে এখন সময় এসেছে একটি স্বতন্ত্র ও কার্যকর “সড়ক নিরাপত্তা আইন” প্রণয়ন ও তার কঠোর বাস্তবায়নের। বর্তমানে যে আইন কার্যকর আছে, তাতে সড়ক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধের বিষয়টি অনেকটাই উপেক্ষিত। সঠিক আইন, প্রশিক্ষিত চালক, প্রযুক্তিনির্ভর যানবাহন মনিটরিং এবং কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়া বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। কার্যকর সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও তার পূর্ণ প্রয়োগই পারে দেশের সড়ককে নিরাপদ ও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনামুক্ত করতে।
কেন ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো নতুন নয়— বহুদিন ধরে আলোচিত হলেও এর কার্যকর প্রতিকার আজও হয়নি। প্রতিদিনের দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে চালক, পথচারী, যানবাহন ও সড়ক ব্যবস্থার সম্মিলিত ব্যর্থতা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অতিরিক্ত গতি, বেপরোয়া ওভারটেকিং এবং ট্রাফিক নিয়ম না মানার প্রবণতা। অনেক চালক ঘুমন্ত অবস্থায় বা মাদক গ্রহণ করে গাড়ি চালান, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। একইসঙ্গে সড়কের সাইন, জেব্রা ক্রসিং ও ট্রাফিক সিগন্যাল উপেক্ষা করার প্রবণতা দুর্ঘটনা রোধে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সড়ক নিরাপত্তা প্রণয়নের এক প্রতিবেদনের উঠে এসেছে এমন চিত্র।
এছাড়া লাইসেন্সবিহীন বা অদক্ষ চালক, রাস্তার পাশে অবৈধ হাটবাজার, অনিয়ন্ত্রিত পার্কিং এবং অপরিকল্পিত ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ— এসবও দুর্ঘটনার স্থায়ী কারণ হয়ে আছে। অনেক স্থানে ফুটওভারব্রিজ নির্মিত হলেও তা ব্যবহারের উপযোগী নয় বা পথচারীরা ব্যবহার করেন না। অন্যদিকে, রাস্তায় হাঁটা বা পারাপারের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, হেডফোনে গান শোনা বা চ্যাটিং করার প্রবণতা পথচারীদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মানহীন সড়ক, পুরনো যানবাহন, প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতি ও আইনের প্রয়োগে দুর্বলতা। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা এখন কেবল চালক বা পথচারীর দোষ নয়, এটি একটি ব্যবস্থাগত ব্যর্থতা— যাকে বলা হয় “সিস্টেম ফেইলিওর।”
সড়কে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’-এর আলোকে একটি কার্যকর ও পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন এবং তার কঠোর বাস্তবায়নের কোনও বিকল্প নেই। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর নিরাপদ সড়ক অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন কতদূর
বাংলাদেশ সরকার একটি নতুন, সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের কাজ করছে, যা জাতিসংঘের 'সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ' মডেলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে। এই আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি, ২০১৯ সালে কার্যকর হওয়া 'সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮' সংশোধনের প্রস্তাবও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছে।
সড়ক নিরাপত্তা আইন: কোথায় থেমে আছে?
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মরক্কোয় অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল মিনিস্টেরিয়াল কনফারেন্স অন রোড সেফটি’-তে বাংলাদেশ ঘোষণা দেয়— ২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করবে। জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন এ আইন প্রণয়নের খসড়া প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এই আইনে নিরাপদ গতি, হেলমেট ব্যবহার, সিটবেল্ট বাধ্যতামূলক করা, সড়কের ডিজাইন মান উন্নয়ন, এবং দুর্ঘটনা-পরবর্তী চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করার বিধান রাখা হচ্ছে।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের মতে, সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ বহু আগেই শুরু হলেও এখনও কার্যকর হয়নি। আগের সরকারের ড্রাফটিং শেষ হলেও সরকার পরিবর্তনের পর তা আর অগ্রসর হয়নি। তিনি বলেন, ‘সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকারের তালিকায় এই আইন নেই বলেই মনে হয়।’ তার মতে, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রভাবও আইন প্রণয়নে বড় বাধা।
‘সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’: নিরাপত্তার নতুন দর্শন
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্বে উন্নত দেশগুলো একটি নির্দিষ্ট মডেল অনুসরণ করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করছে, যা পরিচিত ‘সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’ নামে। এই মডেলে মূলত পাঁচটি স্তম্ভের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়—নিরাপদ মানুষ, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যান, নিরাপদ গতি এবং দুর্ঘটনা-পরবর্তী দ্রুত সেবা। বাংলাদেশ সরকারও এই মডেলের ভিত্তিতে নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের কাজ করছে, যাতে দেশেও সড়ক ব্যবহারকারীরা নিরাপদ এবং সুরক্ষিতভাবে চলাচল করতে পারে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর ২০২০-২০৩০ পরিকল্পনায় বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এজন্য পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়—সিট বেল্ট ব্যবহার, অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণ, স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট ব্যবহার, ড্রিংক ড্রাইভিং প্রতিরোধ এবং শিশু আসনের ব্যবহার—চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক নিরাপত্তার পাঁচটি মূল স্তম্ভও নির্ধারণ করা হয়েছে: সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী করণীয়। বাংলাদেশে এই বিষয়গুলো কার্যকর করতে হলে আইন প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।
বিদ্যমান আইন ও সংশোধনের বিতর্ক
বর্তমানে বাংলাদেশে কার্যকর রয়েছে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮। তবে পরিবহন খাতের চাপের কারণে ২০২৪ সালের মার্চে মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪ এর খসড়া অনুমোদন করেছে। এই সংশোধনীতে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে এবং বেপরোয়া ড্রাইভিং ছাড়া অন্য বেশিরভাগ ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আইন নরম করা মানে সড়কে নৈরাজ্য বাড়ানো। কঠোর শাস্তি না থাকলে মানুষ আইন মানে না—এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা।’
আইনের প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ
২০১৮ সালের আইন কার্যকর হলেও বাস্তব প্রয়োগ ছিল সীমিত। বিআরটিএ, পুলিশ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে আইন প্রয়োগে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমও স্থায়ী কোনও কাঠামো পায়নি, ফলে অনেক ক্ষেত্রে শাস্তির পরিবর্তে ‘সমঝোতা’ হয়ে যায়। এছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর ২০২০-২০৩০ পরিকল্পনায় সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমানো লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য সিটবেল্ট, অতিরিক্ত গতি, মানসম্মত হেলমেট, মদ্যপ ড্রাইভিং এবং শিশু আসনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশে এসব ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে।
উন্নয়ন নাকি মানবিক বিপর্যয়?
বাংলাদেশে সড়ক উন্নয়নে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, অথচ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সেই বিনিয়োগ দেখা যায় না। অতিরিক্ত ওজনের ট্রাক, অবৈধ রিকশা-ভ্যান, অপরিকল্পিত সড়ক সংস্কার—সব মিলিয়ে দুর্ঘটনা যেন অবশ্যম্ভাবী। প্রতিদিনের দুর্ঘটনায় শুধু চালক বা পথচারী নয়, পুরো পরিবার, অর্থনীতি ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ সড়কের জন্য এখন “বিক্ষোভ নয়, কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন”। তারা বলছেন, সড়ক নিরাপত্তা আইন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, চালকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ডিজিটালি যাচাই করা উচিত। পাশাপাশি ট্রাফিক মনিটরিংয়ে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন সিসিটিভি, স্পিড সেন্সর ও ই-চালান ব্যবহার করা, সড়ক ও যানবাহনের মান নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং দুর্ঘটনা-পরবর্তী দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য বিশেষ ইউনিট গঠন করা জরুরি।
এসব পদক্ষেপ একসঙ্গে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা আরও নিরাপদ, কার্যকর ও টেকসই হয়ে উঠবে।
নিরাপদ সড়ক প্রণয়নে নাগরিক সচেতনতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
একজন পথচারী যদি জেব্রা ক্রসিং এড়িয়ে রাস্তায় পার হন, কিংবা একজন চালক যদি ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করেন, তবে সড়ক নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়। অর্থাৎ সরকার, চালক, পথচারী ও যাত্রী—সকলেরই দায়িত্ব নিতে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে। ফলে সামাজাকি সচেনতার পাশাপাশি স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকে শিখতে হবে সড়ক সড়ক চলাচল ব্যবস্থা।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, ‘দেশে প্রতিদিন দুর্ঘটনা বাড়ছে, নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে পরিবারগুলো কর্মক্ষম মানুষ হারাচ্ছে, আহতরা পরিণত হচ্ছেন পরিবারের আর্থিক বোঝায়।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ‘ফাইভ পিলার’ নীতিমালা অনুসারে আইন, অবকাঠামো, যানবাহনের মান ও সচেতনতা—সবদিকেই একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
ক্ষতিপূরণ ও ইনস্যুরেন্সের প্রয়োজনীয়তা
ইকবাল মাসুদ বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহত বা পঙ্গুত্ব বরণকারীদের জন্য দেশে কার্যকর ইনস্যুরেন্স বা ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা নেই। এতে তারা চিকিৎসা ব্যয়ে অসহায় হয়ে পড়েন।’ তার মতে, ‘যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক ইনস্যুরেন্স চালু করা গেলে অন্তত দুর্ঘটনার পর তারা কিছুটা আর্থিক সুরক্ষা পেত।’
সমন্বিত পরিবহন কৌশলের অভাব
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনও সমন্বিত সড়ক পরিবহন কৌশল গড়ে ওঠেনি। ফলে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বিশৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা সংকট তৈরি হয়েছে। তার মতে, আইনের শাসনের ঘাটতি ও প্রশাসনিক অদক্ষতাই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা।’ তিনি বলেন, ‘কমিটি নয়, এখন দরকার টেকসই ও বাস্তবমুখী পরিবহন কৌশল—যেখানে গণপরিবহন আধুনিক ও নিরাপদ হবে।’
কারিগরি ত্রুটি ও প্রকৌশলভিত্তিক সমাধানের প্রয়োজন
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কখনোই হঠাৎ ঘটে না—এর পেছনে থাকে যানবাহনের ত্রুটি, রাস্তার নকশাগত সমস্যা, আইন প্রয়োগের ঘাটতি ও সচেতনতার অভাব।’
তিনি মনে করেন, কেবল প্রশাসনিক পদ্ধতিতে নয়, প্রকৌশলভিত্তিক পরিকল্পনায় সমস্যা সমাধান করতে হবে। রাস্তা নির্মাণ, সিগন্যাল ব্যবস্থা, ও যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণে প্রযুক্তিনির্ভর ও বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোর
পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইস এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পুলিশসহ একাধিক সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রাফিক আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছি।’
তার মতে, সড়ক নিরাপত্তা একটি সমন্বিত বিষয়—তাই স্থানীয় সরকার, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগ ও ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাস্তব অগ্রগতি আসে।
আমার বার্তা/জেএইচ