বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে কেবল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বিবেচনায় নিলে হবে না। এনআইডির পাশাপাশি পাসপোর্টও বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা, অনেকের এনআইডি নেই।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে প্রবাসীদের ভোটদান পদ্ধতি নির্ধারণে আয়োজিত এক সেমিনারে অংশ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৪ সালে যখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল ইসি, তখন আমরা প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগের প্রস্তাব করেছিলাম। ২০১৭ সালের ভিশন থার্টি ঘোষণা, ২২ সালের ২৭ দফাতেও প্রবাসীদের ভোটের কথা বলেছি। ২০২৩ সালের ৩১ দফার রাষ্ট্র সংস্কারের সময়ও এই বিষয়টি বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। প্রবাসীদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগের প্রতি বিএনপির পূর্ণ সমর্থন আছে।
তিনি বলেন, সেমিনারে প্রবাসীদের ভোটিংয়ের জন্য তিন প্রস্তাব (অনলাইন, প্রক্সি ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির ভোটিং সিস্টেম) উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা আমাদের দলে আলোচনা করে মতামত দেবো। কোনটা সবচেয়ে ভালো হয়, সে মতামত দেবো।
এই দুনিয়ায় কোনো সিস্টেমই ফুলপ্রুফ না। কোর্টশিপ করে বিয়েও ফুলপ্রুফ না। ফুলপ্রুফ হলে সংস্কার, বিপ্লবের প্রয়োজন হতো না। আমরা বিবেচনা করবো—সবচেয়ে যেটা সহজ, বোধগম্য হবে, সবচেয়ে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে, যেটা সবচেয়ে সাশ্রয়ী হবে, সেই প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা সম্মত হতে পারবো বলে আশা করি।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে পার্সেন্টেজের কথা বলা হচ্ছে, এটার কোনো নির্ভরযোগ্যতা আছে কি না বলা যাবে না। একটা উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, যেমন সবচেয়ে বেশি ২৯ লাখ আছে ভারতে। আসলেই এটা সঠিক? ভারতে কি এত মানুষ আছে? ইউটিউবের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কোনো সূত্র নেই।
বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ প্রবাসে স্থায়ী হতে যায়, এই তালিকা কোথাও নেই। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা বিএমইটি—কোথাও নেই। কত প্রবাসী ফিরে এসেছে, সেই তালিকাও নেই। কাজেই এসব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়।
বিএনপির এই খ্যাতিমান শ্রমিক নেতা বলেন, আমেরিকার নাগরিক বাংলাদেশে এলে তাদের দূতাবাসে রিপোর্ট করতে হয়। আমাদের দেশের নাগরিকদের জন্য এমন সিস্টেম নেই। আমি নিজে দেখেছি অনেক প্রবাসীর পাসপোর্ট নেই। অনেকেই আবার মৃত ব্যক্তির পাসপোর্টে প্রবাসে যায়। তাই শুধু এনআইডি বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি যথেষ্ট নয়। কেননা, সবার এনআইডি নেই। তাই পাসপোর্টও বিবেচনায় নিতে হবে। আবার অনেকের কোনোটাই নেই। এই বিষয়গুলোর কী হবে?
তিনি বলেন, আমাদের দূতাবাসগুলোর যে অবস্থা, তাতে তাদের ওপর ভরসা করলে ঝুঁকি হবে। কারণ দূতাবাসগুলো তো প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সেবাই দিতে পারে না। কাজেই তাদের কতটুকু কাজে লাগানো যাবে, প্রশ্ন থেকেই যায়। দূতাবাসের সঙ্গে ইসির লোকবল যদি থাকে, সেটা যদি করা যায়, ডেটাবেজটা থাকলে অনেক কাজে লাগবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যাদের মর্যাদাবান বলি—ডাক্তার, শিক্ষক; বছরের পর বছর তারা টাকা পাঠান না। টাকা পাঠান শ্রমিকরা। অথচ মর্যাদা দেওয়া হয় যারা বড় বড় পদে আছেন বা অ্যাম্বাসির সঙ্গে যাদের খাতির আছে।
তিনি আরও বলেন, এটা ঠিক যে বহু জেলা আছে যেখানে প্রবাসী খুব কম। আবার কিছু জেলা আছে যেখানে এত প্রবাসী যে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রভাবিত করলে অসুবিধা নেই। তারা যদি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থাকেও যদি পাল্টে দিতে পারে, দিক না।
সেমিনারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনসহ অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব আখতার আহমেদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নিয়েছেন।
আমার বার্তা/এমই