ফ্যাসিস্ট ও খুনি হাসিনার পতনের পর এবার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মহান মে দিবস পালিত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা অভ্যুত্থানে অগনিত শ্রমিকের আত্মদান ফ্যাসিস্টের পতনকে ত্বরান্বিত করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ৭১জন নেতাকর্মী, ৩০জন রিকশাশ্রমিক ও অসংখ্য নাম না জানা শ্রমিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিক শ্রেণির এই আত্মত্যাগ কেউ কেউ স্বীকার করতে কার্পণ্য করে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তণ, ভোটাধিকার প্রয়োগ, শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা শ্রমিকের আজন্ম স্বপ্ন।
দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে জানিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শ্রমজীবী মানুষের আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে। এখনও প্রতিদিন শ্রমিক ছাঁটাই চলছে, বেকার হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। শ্রমিকের জীবনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নেই।
তিনি বলেন, পতিত হাসিনা সরকারের লুটপাট ও দুর্নীতির কারণে সরকারি পাট ও চিনিকলগুলো বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিককে পথে বসানো হয়েছে। তারা স্ত্রী সন্তানসহ অর্ধহারে, অনাহানে দিনাতিপাত করছে। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রচলিত নিয়মে পাঁচ বছর পর পর ন্যূনতম মজুরি ও জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা হয়ে থাকলেও বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ন্যূনতম মজুরি ও জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়নি। অথচ চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমজীবি মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের বিবিএসের হিসেব অনুযায়ী, ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে ৭ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিক। অথচ বাংলাদেশে আজ সবচেয়ে অবহেলিত শ্রমিক সমাজ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বাজার মূল্যের সঙ্গে অসঙ্গতি ও কম মজুরিতে শ্রমিক সমাজের এখন বেঁচে থাকাই কষ্টকর। অগণতান্ত্রিক শ্রম আইনে মালিক পক্ষের স্বার্থকে প্রধান্য দেওয়ায় শ্রমিক সমাজ সর্বত্র হয়রানিসহ নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল ২০২৩ এর মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের দাবি উত্থাপনের অধিকারকে আইন করে বন্ধ কারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে। মহান মে দিবস পালনের লক্ষ্যে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে গঠিত দুটি কমিটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, অধিকার প্রতিষ্ঠার এই মহান দিনে শ্রমজিবী মানুষ তাদের দুঃখ কষ্ট যাতনার প্রতিবাদে শ্রমিক দলের সমাবেশে উপস্থিত হবেন।
রিজভী বলেন, শ্রমিক দলের সমাবেশে বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি ও সসমসাময়িক জাতীয় রাজনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেবেন।
আমার বার্তা/এমই