বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট একটি সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচন করা। আমরা বলেছিলাম, যথেষ্ট হয়েছে। নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার দরকার। আমরা পরামর্শ দিয়েছি, জরুরি সংস্কার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন, আবার আপনি সরে গেলেন। গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু মনে করবেন না রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদের আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইব।
শনিবার (১৭ মে) বিকালে খুলনা মহানগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ ময়দানে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক বিশাল সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুলসংখ্যক তরুণ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সমালোচনা করে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, আপনি মনে করেছেন আপনাকে জনগণ অসীম ক্ষমতাবান বানিয়েছে। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলসমূহের কোনো পরামর্শ দরকার নাই। যদি তাই মনে করেন আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হবে। ইতিমধ্যে দুই উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে উচ্চাভিলাষ প্রণয়ন করছে। তাদের উদ্দেশ্য অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অনির্বাচিতভাবে এ সরকার থাকতে পারে। আপনার অবশ্য কী উদ্দেশ আমরা তা জানি না। যদি কোনো দিন নির্বাচনের দাবিতে এ অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘেরাও করতে হয় তা হবে আমাদের জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্য।
তিনি বলেন, আপনি কী চান এই নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? এ দেশের জনগণ সংশয় প্রকাশ করুক? যমুনামুখী লংমার্চ করুক? আপনাকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই ইউনূস সাহেব। আপনি বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন ডিসেম্বরের মধ্যে। যেই কথা আপনি আমাদের দিয়েছিলেন সংস্কার এবং বিচার চলমান প্রক্রিয়া- দুটোই চালু থাকবে যারাই সরকারে আসুক। অনন্তকাল ধরে আপনি বিচার এবং সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করবেন না। যাদের কথায়, যাদের পরামর্শে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন, সেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আপনি তাদের অপসারণ করুন।
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, আপনার উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে, আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। এখন কিছু বিদেশি দোসর আছে, আমরা এখন তাদের অপসারণের কথা বলছি। আর যারা এনজিও উপদেষ্টা আছে, তারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের কথা শোনার প্রয়োজন নাই। তাদের আপনি অপসারণ করুন। না করলে সসম্মানে বিদায় নিতে পারবেন কি না আমি সংশয় প্রকাশ করছি।
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, আপনার সরকারকে লোকজন বলছে এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দুইজন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা এবং এনসিপি সংগঠন করে। আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাইলে তাদের পদত্যাগ করতে বলুন। পদত্যাগ না করলে আপনি বিদায় করুন।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কি সেই আক্কেল জ্ঞান নেই, একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী কিভাবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে? তিনি রোহিঙ্গা, মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বিদায় করুন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ১৬ বছরে সাত হাজারেরও বেশি মানুষকে অপহরণ, গুম এবং সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে হত্যা করেছে। সর্বশেষ তারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৪শ’ মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকারসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ধ্বংস করেছে। লুটপাট করে ব্যাংকিং খাতও ধ্বংস করেছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে এনেছে। ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে।
তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই বিশাল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন স্বেচ্ছাসেবক যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম রবিন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিহত বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম ভূঁইয়া তনুর স্ত্রী কানিজ ফতিমা, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/এমই