পাকিস্তানকে হারিয়ে এবারের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে শুভসূচনা করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তারা টানা দ্বিতীয় জয়ের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল। তবে তৃতীয় আম্পায়ার গায়ত্রি ভেনুগোপালের একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে কপাল পুড়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতিদের। ভিডিও রিপ্লেতে স্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় তিনি হিদার নাইটকে দেওয়া অনফিল্ড আম্পায়ারের দুটি আউটের সিদ্ধান্ত বদলে দেন।
বাংলাদেশি মেয়েদের দেওয়া ১৭৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ইংল্যান্ড। ১০৩ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতনে জ্যোতি-ফাহিমাদের জয়ের সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিদার নাইটের অপরাজিত ৭৯ রানে ভর করে ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে ইংলিশ মেয়েরা। অথচ অনফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে দু’বার আউট হয়েছিলেন নাইট। দুই বারই তৃতীয় আম্পায়ার গায়ত্রির সিদ্ধান্তে তিনি বেঁচে যান।
কেবল দুটি ওয়ানডেতে টিভি আম্পায়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই নাকি এই টুর্নামেন্টে নিয়োজিত হয়েছেন গায়ত্রি। এই তথ্য জানিয়ে উইজডেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুটি নারী বিশ্বকাপ এবং ২০২২ কমনওয়েলথ গেমসের ধারাবাহিকতায় এবার মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও পুরো আম্পায়ার প্যানেল নারীদের নিয়ে গঠন করে আইসিসি। যেখানে সু রেডফার্ন, ক্লেইরে পোলোসাক ও জ্যাকুলিন উইলিয়ামসের মতো অভিজ্ঞরা আছেন। তবে অনভিজ্ঞ আম্পায়াররাও এবার বিশ্বকাপের দায়িত্ব পেয়েছেন, তেমনি একজন গায়ত্রি ভেনুগোপাল।
অনভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও এই বিশ্বকাপের আম্পায়ারিং প্যানেলে থাকা ব্যক্তি আরও আছে। চলতি বছর প্রথমবার ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালনা করা ক্যানডেস লা বোর্ডে এবং টিভি আম্পায়ার এন জননী এর মধ্যে অন্যতম। ভারতীয় আম্পায়ার এন জননী আবার বাংলাদেশ ও ভারতের বিশ্বকাপ ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। বিশ্বকাপের আগে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও এই টুর্নামেন্ট দিয়েই তাদের অভিজ্ঞ করার পন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে উইজডেন।
আইসিসির এলিট প্যানেলে কোনো নারী আম্পায়ার নেই। তবুও পুরো প্যানেল নারী আম্পায়ার দিয়ে পূর্ণ করার জন্য বিশ্ব ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি অনভিজ্ঞদের ম্যাচ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব তুলে দিয়েছে। অথচ ছেলেদের বিশ্বকাপে কোনো উদীয়মান আম্পায়ারকেও ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় না। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ১৬ আম্পায়ারের মধ্যে ১২ জনই ছিলেন এলিট প্যানেলের। এ ছাড়া নারী আম্পায়াররা এখনও পুরোপুরি প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে উঠতে না পারায় মেয়েদের দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও ডিআরএস প্রযুক্তি এখনও নিয়মিত নয়।
এদিকে, বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে প্রথম বিতর্কিত ঘটনাটি ঘটে টাইগ্রেস পেসার মারুফা আক্তারের করা দ্বিতীয় ওভারে। তার প্রথম ডেলিভারি উইকেটের পেছনে থাকা জ্যোতির গ্লাভসে জমা পড়ার পর নাইটের বিরুদ্ধে কট বিহাইন্ডের আবেদন ওঠে। তাতে সাড়া দিয়ে আউট দেন অন-ফিল্ড আম্পায়ার। কিন্তু বল নিজের ব্যাট স্পর্শ করা নিয়ে সংশয় থাকায় ইংলিশ ব্যাটার রিভিউয়ের আবেদন করেন। আল্ট্রা এজে দেখা যায়, বলটি নাইটের ব্যাট-প্যাডের মাঝখান দিয়ে গেছে। তবে ব্যাটে লেগেছে কি না তা স্পষ্ট নয়। এরপর টিভি আম্পায়ার গায়ত্রি ভেনুগোপাল ‘বল ব্যাটে স্পর্শ করার সুস্পষ্ট প্রমাণ অনুপস্থিত’ জানিয়ে সিদ্ধান্ত বদলে নটআউট দেন। পরে এলবিডব্লিউ পরীক্ষা করে বলের লাইন ‘আউটসাইড’ বলে উৎরে যান সেবারও।
ফের প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনা ঘটে ১৫তম ওভারে। ফাহিমা খাতুনের বল কভার অঞ্চলে খেলেছেন নাইট, শূন্যে থাকা বলটি সামনের দিকে ঝুঁকে তালুবন্দী করেন স্বর্ণা আক্তার। আউট ধরে নিয়ে নাইটও ক্রিজ ছেড়ে হাঁটা শুরু করেন। এরপর আম্পায়ার তাকে থামিয়ে সিদ্ধান্তের ভার পাঠান তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে। আম্পায়ার গায়ত্রি আউটের স্থিরচিত্র বিশ্লেষণ করে জানান, ‘বেশ অস্পষ্ট দৃশ্য’ এবং ‘বলটি নিশ্চিতভাবে দেখতে পাচ্ছেন না।’ সেই যুক্তি দেখিয়ে তিনি প্রথমে অন-ফিল্ড আম্পায়ারের দেওয়া আউটের সিদ্ধান্ত বদলে দেন। নট আউট জানিয়ে তৃতীয় আম্পায়ার জানান, ‘বলের নিচে ফিল্ডারের হাত/আঙুল থাকা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না।’ ০ রানের পর ফের ১৩ রানে জীবন পেলেন নাইট।
আমার বার্তা/জেএইচ