
দীর্ঘ এক যুগ পর বিপিএলের নিলাম সম্পন্ন হয়েছে গতকাল (রোববার)। ১২তম আসরের নিলামে উচ্চমূল্যে ক্রিকেটারদের দলে টেনেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। তবে এই নিলাম শুরুর আগেই গত আসরের ফিক্সিংয়ের সন্দেহের তালিকায় থাকা অভিযুক্তদের মধ্যে লাল তালিকাভুক্ত ৭ ক্রিকেটারকে নিলামের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। যা গত দু’দিন কম আলোচনা হয়নি। বিজয়-সৈকতদের বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিসিবির দুর্নীতিদমন বিভাগের প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল।
মূলত তার পরামর্শেই অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের বাইরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছিল বিসিবি। নিলামের আগে বিষয়টি স্পষ্ট করে মার্শাল বলেন, ‘অতীতের বিভিন্ন সমস্যার বেশিরভাগই স্বাধীন তদন্ত কমিটির বিস্তৃত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল। সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড সভাপতি সম্প্রতি এই (ইন্টিগ্রেটি) ইউনিটটি গঠন করেছেন। বিপিএল সামনে রেখে আমি গভর্নিং কাউন্সিলকে কিছু ব্যক্তির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি, যাদের এই বছরের আসরে আমন্ত্রণ না জানানোটাই সমীচীন হবে। এটা অনেক প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের মধ্যে মাত্র একটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং আমরা যখন সাম্প্রতিক বছরগুলোর ঘটনা আবার বিশ্লেষণ করছি, তখন কিছু মানুষকে দূরে রাখাই বেশি নিরাপদ বলে আমি মনে করেছি। আমাদের দায়িত্ব হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সুরক্ষা দেওয়া, বিশেষ করে এই মুহূর্তে দ্বাদশ বিপিএলের জন্য কাজ করা। আপনি মাঠে গিয়ে আইপিএলের খেলা দেখুন বা টেলিভিশনে বিপিএল দেখুন - সব জায়গাতেই চাইবেন উচ্চমানের খেলা এবং সম্পূর্ণ সৎ ও স্বচ্ছ একটি প্রতিযোগিতা। আমিও ঠিক সেটাই চাই।
বিসিবিতে প্রথমে দুর্নীতি দমন পরামর্শক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মার্শাল। পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন বিভাগের প্রধান পদে নিয়োগ পান। কেবল ক্রিকেটারই নয়, সংশ্লিষ্ট সবাইকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মার্শাল বলছেন, ‘যারা ক্রিকেটে কাজ করেন, খেলোয়াড়-কোচ-দল মালিক- দল ব্যবস্থাপনা, বোর্ড সদস্য কিংবা ইনটিগ্রিটি ইউনিট; আমরা সবাই দুর্নীতি-দমনবিরোধী নীতির আওতাভুক্ত। এই কোডে সুস্পষ্ট কিছু নিয়ম আছে। এতে বলা আছে, কোড লঙ্ঘন বলতে কী বোঝায় এবং যারা অন্যায় পথ বেছে নেবে, তাদের জন্য কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা পরিণতি থাকবে। এই কোড অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। কোড বাস্তবায়নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
দুর্নীতি-দমনবিরোধী নীতি সবাইকে পড়ার আহবান জানান আইসিসির সাবেক এই কর্মকর্তা, ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ সম্পর্কে পুরোপুরি পেশাদারির সঙ্গে, নিবিড়ভাবে এবং সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে তদন্ত পরিচালনা করা হবে। আমি ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে এই কোডটি পড়ার পরামর্শ দেব। আপনি যদি অনেক আগে এটি পড়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে আবারও পড়ুন। আপনাকে এটি পুরোপুরি বুঝতে হবে।’
সাধারণত ক্রিকেটের নীতি বিরোধী যেকোনো কাজে বিরত থাকার পাশাপাশি, সেরকম কোনো ইঙ্গিত পেলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানাতে হয়। সেটাই আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন মার্শাল, ‘ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তি সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে কোনো তথ্য পেলে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো তার জন্য বাধ্যতামূলক। অতীতের কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কেও যদি আপনার কাছে তথ্য থাকে, যত দ্রুত সম্ভব তা আমাদের জানান।’
‘আমরা বুঝি, অতীতে হয়তো কিছু তরুণ খেলোয়াড় চাপ অনুভব করেছিলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন, কিংবা নিরুপায় বোধ করেছেন। এখন এগিয়ে আসুন এবং আমাদের জানান। আপনার দেওয়া তথ্য সম্পূর্ণ সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা ও গোপনীয়তা বজায় রেখে গ্রহণ করা হবে। খেলাটিকে রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মনে রাখবেন, কিছু মানুষ এই আসরকে (বিপিএল) টার্গেট করার চেষ্টা করবে’, আরও যোগ করেন অ্যালেক্স মার্শাল।
আমার বার্তা/জেএইচ

