গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ‘ধর্ষণ’ ও তার বন্ধুকে মারধরের ঘটনায় জড়িতরা সবাই মাদকসেবী বলে জানিয়েছে র্যাব।
ওই ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারদের কারোরই কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। একেকজন একেক পেশায় জড়িত। তারা নিয়মিত মাদক সেবন করত এবং জুয়া খেলত।”
বুধবার রাতে গোপালগঞ্জ শহর থেকে মেসে ফেরার পথে ধর্ষণ ও মারধরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়টির এক ছাত্রী ও তার বন্ধু।
এরপর অভিযানে নেমে বৃহস্পতিবার রাকিব মিয়া ইমন (২২), পিয়াস ফকির (২৬), প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), নাহিদ রায়হান (২৪), মো. হেলাল (২৪) এবং তূর্য মোহন্ত (২৬) নামে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বা তার বন্ধুর সঙ্গে গ্রেপ্তারদের আগে কোনো পরিচয় ছিল না জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, “গোপালগঞ্জ শহরে কেনাকাটা বা খাওয়া শেষে নিজ নিজ মেসে ফিরছিলেন ওই দুই শিক্ষার্থী। এ সময় অভিযুক্তরা ইজিবাইকে করে নবীনবাগ হেলিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় যাওয়ার পথে তাদের থামিয়ে নাম পরিচয় জিজ্ঞাসা করে।
“তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নানা অশালীন মন্তব্য করতে থাকে। এ সময় তাদের সঙ্গে বাগ-বিতÐা হয়। তারা শিক্ষার্থীদের ঘটনাস্থলের পাশে ঢালু জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলে ছাত্রীর বন্ধু বাধা দেয়। এ সময় গ্রেপ্তাররা তাকে মারধর করে।”
মঈন বলেন, “পরে তারা ওই ছাত্রীকে স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে কেউ ধর্ষণে আর কেউ তার বন্ধুকে মারধরে যুক্ত ছিলেন।”
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তাররা একেকজন একেক পেশায় জড়িত। এদের মধ্যে রাকিব মিয়া ইমন স্থানীয় একটি মাদ্রাসা হতে দাখিল ও আলীম পাস করে একটি ক্লিনিকে রিসেপশনিস্ট হিসেবে চাকরি করেন। তার বিরুদ্ধে আগের মাদক ও মারামারির মামলা রয়েছে।
পিয়াস ফকির গোপালঞ্জের একটি পাওয়ার হাউজে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। প্রদীপ বিশ্বাস গোপালগঞ্জে হোম সার্ভিসের মাধ্যমে এসি ও ফ্রিজ মেরামতের কাজ করেন।
নাহিদ রায়হান স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। মো. হেলাল ওই কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি তিনি একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার হিসেবে চাকরি করেন।
আর তূর্য মোহন্ত খুলনার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। শেষ বর্ষে থাকাকালীন কোভিড পরিস্থিতির কারণে দেশে ফিরতে হয় তাকে। স¤প্রতি গোপালগঞ্জে সদরে গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তূর্যের বিরুদ্ধে আগের একটি মারামারির মামলা রয়েছে বলে জানায় র্যাব।
ধর্ষণের ওই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে বুধবার রাতেই সদর থানায় প্রক্টর মো. রাজিউর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। ভুক্তভোগীকে শিক্ষার্থীকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ১১ ঘণ্টা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পর পিয়াস সিকদার (২২), অন্তর (২১) ও জীবন (২০) নামে অন্য তিন সন্দেহভাজনকে আটক করেছিল গোপালগঞ্জ পুলিশ।
এদের মধ্যে অন্তর ও জীবন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাদের আটকের কারণে শহরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নবীনবাগে রাস্তার ওপর আবর্জনা ফেলে অবরোধ করেছিল।