টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে তথাকথিত ‘ভণ্ডপীর’ মিনজু শাহ’র ভূয়া পানি থেরাপি চিকিৎসায় এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে । মৃত ব্যক্তির নাম হাবিবুর রহমান (হবুল মিয়া) ওই এলাকার পরিচিত নার্সারির ব্যবসায়ী ছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে কাজ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন হবুল মিয়া। তাকে দ্রুত ময়মনসিংহ ও পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে না পেরে পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।
বাড়িতে ফেরার পর পরিবারের একজন সদস্য স্থানীয়ভাবে পরিচিত পীর মিনজু শাহ’র এক অনুসারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর সেই অনুসারীর পরামর্শে হবুল মিয়াকে মিনজু শাহ’র দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে শুরু হয় তথাকথিত ‘পানি থেরাপি’ নামক একটি অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা।
পরিবারের দাবি অনুযায়ী, চিকিৎসার প্রথম দিন হবুল মিয়াকে হাত-পা বেঁধে একটি পানির মটরের নিচে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ধরে বসিয়ে মাথায় অনবরত পানি ঢালা হয়। দ্বিতীয় দিন তাকে পাশের একটি পুকুরে নিয়ে ১০০১ বার ডুব দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়। ছেলের বাধা সত্ত্বেও পীরের লোকজন জোরপূর্বক এই ‘ডুব থেরাপি’ চালিয়ে যান।
চিকিৎসার নামে এই কার্যক্রমের জন্য পরিবার থেকে দাবি করা হয় ১৩,০০০ টাকা। পরে ৮,০০০ টাকা দেওয়ার পর পীরের লোকজন তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে বলেন। বাড়ি ফেরার পর হবুল মিয়ার শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায় এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
আবারও যোগাযোগ করা হলে মিনজু শাহ পীর বলেন, "এখন ভালো ডাক্তার দেখাও।" এরপর হবুল মিয়াকে পুনরায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও তার মৃত্যু হয়।
হবুল মিয়ার ছোট ছেলে জানান, “আমার বাবার মতো ভাগ্য যেন আর কারও না হয়। এই আধুনিক যুগে এসে কেউ যেন এমন ভণ্ড, অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা কিংবা ভণ্ডপীরের ফাঁদে না পড়েন।”
হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর পর এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এলাকার সচেতন মহল এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।