ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় পরিবেশ সংরক্ষণ ও নদী রক্ষা সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ এবং নির্বিচারে নদী দখলের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার (১ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মীরেরশরাই মৌজায় শাহ সিমেন্ট প্রায় ২৪ একর নদীভূমি বালু ও মাটি ফেলে ভরাট করেছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে শ্রেণি পরিবর্তন ঘটেছে। দখল করা জায়গায় নির্মিত স্থাপনাগুলো ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার পানিপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া কারখানায় ব্যবহৃত ক্লিংকার ধুলো বাতাসের মাধ্যমে নদীতে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে।
টিআইবি জানিয়েছে, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি) ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে শাহ সিমেন্টকে ‘নদী দখলদার’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নদী দখল করে দুটি নদী ধ্বংসের এই কার্যক্রম কোনো যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের কাজ শুধু নদীর নাব্যতা নয়, দেশের পরিবেশ ও জনজীবনকেও চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। ২০১৯ সালের হাইকোর্টের রায়ে দেশের সব নদ-নদীকে আইনিসত্তা বা জীবন্তসত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষাপটে নদী দখল মানেই হত্যাকাণ্ডের শামিল।
শাহ সিমেন্টকে ‘নদীখেকো’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখার অধিকার রাখে না। তাই শাহ সিমেন্টকে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্ত করে সব সরকারি কার্যাদেশ, লাইসেন্স ও আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখার দাবি জানান তিনি।
একইসঙ্গে, সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে শাহ সিমেন্টের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ব্যবসায়িক বয়কটের আহ্বান জানায় টিআইবি।
টিআইবি আরও দাবি করেছে, প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে বালু ও মাটি ফেলে নদীর মোহনা ভরাট করেছে তা ‘পোর্ট অ্যাক্ট, ১৯০৮’, ‘পোর্ট রুলস, ১৯৬৬’ ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার লঙ্ঘন।
ড. জামান আরো বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতি শাহ সিমেন্টসহ অন্যান্য দখলদারদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে, বারবার নদী ‘দখলদার’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার পেছনে কারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানাই। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নদী ও পরিবেশের ক্ষতির জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের নদী দখল ঠেকাতে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। দখলকৃত নদী অবিলম্বে উদ্ধার করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমার বার্তা/এমই