ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বেসামরিক পরমাণু প্রকল্প তৈরির জন্য দেশটিকে ৩০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। পাশাপাশি ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও বিভিন্ন দেশে জব্দ থাকা কয়েক বিলিয়ন ডলার তহবিল মুক্ত করে দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন চারটি সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে এমনকি ইরান ও ইসরায়েলের তীব্র সংঘাতের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও এসব আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, বেশ কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং পরিবর্তনশীল। তবে একটি শর্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয়, সেটা হলো—ইরান আর কখনোই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে পারবে না। যদিও ইরান বরাবরই বলে এসেছে, তাদের কাছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুই সূত্র সিএনএনকে জানায়, প্রস্তাবে ইরানের জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইরানে মার্বিন হামলার আগের দিন গত শুক্রবার (২০ জুন) ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ ও উপসাগরীয় দেশগুলোর অংশীদারদের প্রতিনিধিরা হোয়াইট হাউসে ঘন্টাব্যাপী এক গোপন বৈঠক করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং বৈঠকের বিষয়ে জানেন এমন সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হলো ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের একটি নতুন বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ, যার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতা থাকবে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য জ্বালানি উৎপাদন করা হবে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, এই অর্থ সরাসরি দেবে না যুক্তরাষ্ট্র বরং ওয়াশিংটন চায় আরব অংশীদাররা এতে অর্থায়ন করুক। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সম্ভাব্য পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাতেও দেশটির পরমাণু কর্মসূচিতে বিনিয়োগ নিয়ে আলাপ হয়েছিল বলে জানান তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে এই আলোচনার নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই পরমাণু কর্মসূচি স্থাপ কাউকে না কাউকে অর্থ প্রদান করতে হবে, কিন্তু আমরা সেই প্রতিশ্রুতি দেব না।’
সিএনএন আরও জানিয়েছে, অন্যান্য প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে- ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোতে আটকে থাকা ৬ বিলিয়ন ডলারের ও বেশি অর্থ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া।
অন্য দুটি সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহের আলোচনায় ইরানের ফোরদো পরমাণু স্থাপনা সরিয়ে একই অবস্থানে নতুন পরমাণু প্রকল্প স্থাপনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাঙ্কার বাস্টার বোমার আঘাতে ওই স্থাপনার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। এতে ইরান নিজেই এই স্থানটি ব্যবহার করতে পারবে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয় এবং সেই প্রস্তাবটি কতটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে তাও স্পষ্ট নয়।
সূত্র আরও জানায়, আলোচনায় বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন চিন্তা, মত ও প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে অনেকগুলোই বেশ সৃজনশীল চিন্তা।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের পাঁচ দফা আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন অপর এক সূত্র বলেন, ‘আমার মতে, পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে তা একেবারেই অনিশ্চিত।’
এদিতে গত বুধবার সিএনবিসিকে উইটকফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘ব্যাপক ভিত্তিক শান্তিচুক্তি’ খুঁজছে। আরেক ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা বলেন, এই সব প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য হলো ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে একটি পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে পারে, তবে তারা নিজেরা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। তবে ইরান চাইলে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আমদানি করতে পার বলে যুক্তরাষ্ট্র পরামর্শ দিয়েছে।
ইরানের জন্য এই প্রস্তাবিত কর্মসূচিটি অনেকটা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো হবে উল্লেখ করে উইটকফ বলেন, ‘এখন ইরানের সঙ্গে আলোচনার বিষয় হলো, আমরা কীভাবে আপনার জন্য একটি উন্নত বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্নির্মাণ করব যা সমৃদ্ধ করা সম্ভব নয়?’।
এদিকে বৃহস্পতিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে কোনো আলোচনা শুরু করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগামী সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে পরিকল্পিত বৈঠকের দাবির প্রত্যাখ্যান করে আরাঘচি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে পরোক্ষ আলোচনার কোনো ব্যবস্থা হয়নি, তাদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধীতায় পূর্ণ।’
আমার বার্তা/জেএইচ