বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি ঘিরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। চলমান কম্বাইন্ড কমান্ডার্স কনফারেন্সে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, চীনের সঙ্গে সীমান্ত অচলাবস্থা, পাকিস্তানের চোখ রাঙানি এবং নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ভারতের চারপাশে নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে কলকাতায় অনুষ্ঠিতব্য ভারতের উচ্চপর্যায়ের দ্বিবার্ষিক সামরিক সম্মেলনে। সম্মেলনে জাতীয় নিরাপত্তা, সীমান্ত পরিস্থিতি, বিদেশি হুমকি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া তিন দিনের এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ, নেপাল ও পাকিস্তানে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ ভারতের জন্য নতুন করে নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাড়তে থাকা ভারতবিরোধী মনোভাব শুধু সীমান্ত নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও বিপজ্জনক।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা এবং এর প্রেক্ষিতে উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর উত্থান ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মতে, এসব গোষ্ঠীর ভারতবিরোধী বক্তব্য এবং তৎপরতা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো মনে করছে, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের হার বাড়ছে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। এতে ওই অঞ্চলের জনসংখ্যাগত ভারসাম্যে পরিবর্তন আসছে, যা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে সম্মেলনে চীনের সঙ্গেও ভারতের সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লাদাখ, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (PLA) সঙ্গে চলমান অচলাবস্থা ভারতের জন্য ‘পরোক্ষ হুমকি’ তৈরি করছে বলে মত দিয়েছেন সামরিক কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী অবস্থান নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
পাকিস্তান ইস্যুতেও কড়া অবস্থান নেওয়ার সুপারিশ এসেছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে, পাকিস্তান এখনও বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীতে সরাসরি অর্থায়ন করছে, যা সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর জন্য বিশেষ হুমকি। সম্মেলনে ভারতের সামরিক প্রস্তুতির রূপরেখা নির্ধারণ, ভবিষ্যৎ সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং যুদ্ধ ও শান্তির সময় দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর প্রতিক্রিয়ার কৌশল তৈরি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতা, আঞ্চলিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং উদীয়মান নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটের মুখে ভারতকে আরও শক্তিশালী, কৌশলগত এবং সমন্বিত নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। তিনি জানান, ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে এবং যেকোনো সম্ভাব্য হুমকির মোকাবেলায় দেশ প্রস্তুত।