
গ্রিসে শরণার্থী স্বীকৃতি পাওয়া কোনো ব্যক্তি যদি নিজ দেশে ভ্রমণ করেন, তাহলে তার বা তাদের আশ্রয় মর্যাদা বাতিল করবে গ্রিস।
আশ্রয়নীতি কঠোর করতে প্রণীত নতুন বিধিমালার আওতায় এমন ঘোষণা দিয়েছে দেশটির অভিবাসন ও আশ্রয় মন্ত্রণালয়। গ্রিসের সংবাদপত্র কাথিমেরিনি ৩০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোনো দেশ থেকে নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা কোনো ব্যক্তি যদি গ্রিসে আশ্রয় চেয়ে শরণার্থী মর্যাদা পান এবং পরে যদি তিনি নিজ দেশ সফর করেন তাহলে ধরে নেওয়া হবে, ওই দেশে তিনি আর ঝুঁকির মুখে নেই।
ফলে, এমন পরিস্থিতিতে গ্রিক কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির আশ্রয় মর্যাদা স্থগিত বা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করবে।
সম্প্রতি আশ্রয়প্রার্থীদের আর নিজ দেশ বা তৃতীয় কোনো দেশে ভ্রমণের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোট নিরপেক্ষ ইউরোপীয় দেশ সুইজারল্যান্ড।
দেশটিতে বসবাসরত সব আশ্রয়প্রার্থী, অস্থায়ী সুরক্ষা পাওয়া এবং সুরক্ষার প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিয়মটি কার্যকর হবে। আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুর মতো জরুরি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে।
জরুরি পরিস্থিতিতে আশ্রয়প্রার্থীরা সুইজারল্যান্ডের অভিবাসন বিষয়ক সচিবালয় (এসইএম)-এর কাছে ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। সংস্থাটি তা যাচাই-বাছাই করে আবেদনকারীকে নিজ দেশ বা তৃতীয় কোনো দেশে ভ্রমণের অনুমতি দেবে।
২২ অক্টোবর সুইস সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির পর এই নীতিমালা চূড়ান্ত করবে দেশটি।
শরণার্থীদের সামাজিক সুবিধাও কমছে গ্রিসে
সরকার স্বীকৃত শরণার্থীদের জন্য সামাজিক সুবিধা ব্যাপকভাবে কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে গ্রিস। দেশটির অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয় সুবিধার জন্য মোট বরাদ্দ প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা হচ্ছে। এতে বার্ষিক খরচের পরিমাণ চারশ মিলিয়ন ইউরো থেকে কমে হচ্ছে ২৮৮ মিলিয়ন ইউরো।
হেলিওস আবাসন কর্মসূচিতে ভর্তুকি বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় শরণার্থীদের আবাসনের নিশ্চয়তা দিতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। এই সুবিধা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
৬ অক্টোবর গ্রিসের অভিবাসন ও আশ্রয়বিষয়কমন্ত্রী থানোস প্লেভরিস এবং দেশটির গ্রোথফান্ডের নির্বাহী পরিচালক প্যানাগিওতিস স্ট্যাম্পুলিদিস অভিবাসন সংক্রান্ত পরিষেবা বিষয়ক একটি নতুন চুক্তিতে সই করেছেন। এই উদ্যোগটি সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির অংশ।
মন্ত্রী আরও বলেন, যারা গ্রিসে আশ্রয় চান, তাদের ‘কাজের সুযোগ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি’ দেওয়া হবে, ভর্তুকি নয়।
প্লেভরিস বলেন, ‘এটাই আমাদের নীতি: যাকে গ্রিসে আশ্রয় দেওয়া হবে, তিনি আর ইউরোপীয় ও গ্রিক করদাতাদের ভর্তুকির ওপর নির্ভর করতে পারবেন না। তাকে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে; ফলে বর্তমানে এথেন্স শহরের কেন্দ্রে থাকা বাসাগুলো বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
স্বাধীন আবাসন সুবিধাগুলো এথেন্সের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে এবং যাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাদের আর্থিক সহায়তা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাঠামোর আওতায় মৌলিক প্রয়োজন পূরণে সীমিত রাখা হবে।
হেলিওস আবাসন কর্মসূচির প্রসঙ্গে প্লেভরিস বলেন, আগে যে অর্থ ভাড়ার সহায়তা হিসেবে দেওয়া হতো, তা এখন পেশাগত প্রশিক্ষণ ও গ্রিক ভাষা শেখার কোর্সে ব্যয় করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তা শুধু ‘অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন’ মেটানোর জন্যই সীমিত থাকবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানাননি মন্ত্রী।
আমার বার্তা/এল/এমই

