নাগরিক জোট সংবিধান সংস্কারের জন্য সাতটি প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছে, একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। তারা আরও বলেছে— বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
রোববার (১১ মে) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে এই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, আইন বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ সাহান নাগরিক জোটের পক্ষে প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেন। লেখক ও বিশ্লেষক জিয়া হাসান বলেন, এই সংস্কার দুটি উপায়ে করা সম্ভব। এক. বর্তমান সংসদের মাধ্যমে সংশোধন করে। দুই. গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমার প্রস্তাব জনপ্রিয় হলেও এর পক্ষে যুক্তি থাকতে হবে। তিনি বলেন, ভারত ও যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নেই। মেয়াদসীমা থাকলেও একজনের পরিবার থেকে একাধিকজন প্রধানমন্ত্রী হতে পারে। এতে স্বৈরতন্ত্র বন্ধ হবে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোই সবচেয়ে জরুরি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়। ফলে নির্বাহী বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু হয়েছিল। এখন মেয়াদসীমাও চালু করা সম্ভব।
তিনি বলেন, অতীতে নিয়োগ হয়েছে ব্যক্তিগত পছন্দে। তাই একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করতে হবে। এই কাউন্সিলে রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে। তারা মিলেই নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনা ট্যাংকে করে ক্ষমতায় আসেননি। কিন্তু সংবিধানের সুযোগ নিয়ে তিনি স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছেন। কারণ, সংবিধানের কাঠামোই এমন ছিল, যেকোনো সময় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারে। তিনি বলেন, এই কাঠামো না বদলালে ভবিষ্যতেও স্বৈরাচার ফিরে আসবে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে সংস্কার সফল হবে না।
আইরিন খান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করতে হবে। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি সময়সীমা ঠিক করে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সবকিছু সংবিধানে থাকতে হবে—এমন নয়। অনেক সংস্কার আইন করেও সম্ভব। তিনি বলেন, দেশে এখনো একটি সংবিধান আছে। তাই নতুন করে গণপরিষদের দরকার নেই।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অতীতে অনেকবার ব্যক্তির ইচ্ছায় সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে। এখন দরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে মৌলিক সংস্কার। তিনি বলেন, সংসদই আইনসভা ও গণপরিষদ হিসেবে কাজ করতে পারে।
গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, এটি নতুন সংবিধান নয়। বরং সংবিধানের ভেতরেই মৌলিক সংস্কার। এবি পার্টির মজিবুর রহমান মনজু বলেন, সংবিধান পুনর্লিখন করা জরুরি ছিল।
জামায়াতে ইসলামীর সেলিম উদ্দিন বলেন, বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।
নাগরিক জোটের সাত প্রস্তাব হলো— প্রধানমন্ত্রী পদে দুই মেয়াদের সীমা, ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ গঠন, নিয়োগে সংসদীয় অনুমোদন বা সাংবিধানিক কাউন্সিল, সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার, সংসদের চারটি স্থায়ী কমিটিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ২০ শতাংশ নারী প্রার্থী এবং নারী সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোট, ও সংবিধানে জুলাই সনদের উল্লেখ এবং পরিশিষ্টে অন্তর্ভুক্তি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী ও নাগরিক কোয়ালিশনের সহ-আহ্বায়ক শহিদুল আলম। অন্যদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এনডিএমের সভাপতি ববি হাজ্জাজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী উমামা ফাতেমা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইনজীবী মানজুর আল মতিন।
আমার বার্তা/জেএইচ