সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে ‘ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি (ডিএসআর)’ নামে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়ন কার্যক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সমন্বয় শাখা থেকে প্রকাশিত একটি অফিসিয়াল স্মারকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। স্মারকে বলা হয়েছে, ডিএসআর বাস্তবায়ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের আটটি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে এই রেজিস্ট্রেশন প্ল্যাটফর্ম। সফল হলে ধাপে ধাপে এটি সারা দেশে সম্প্রসারিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিএসআর হবে একটি সমন্বিত জাতীয় ডাটাবেজ, যেখানে যেকোনো নাগরিক অনলাইনের মাধ্যমে সরকারি ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে চারটি কর্মসূচিতে এই ডেটাবেজ ব্যবহার করা হবে— বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। আবেদন যাচাই, পর্যালোচনা ও উপকারভোগী নির্বাচন হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নীতিমালার ভিত্তিতে।
ডিএসআর কার্যক্রম বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে অর্থ বিভাগের অধীন সোশ্যাল প্রোটেকশন বাজেট ম্যানেজমেন্ট (এসপিবিএমইউ)। তারা বিদ্যমান সিঙ্গেল রেজিস্ট্রি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে নতুন ডায়নামিক ফিচার সংযুক্ত করছে। এছাড়া সার্ভার ব্যবস্থাপনা, এমআইএস উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্যান্য ডেটাবেজের সঙ্গে আন্তঃসংযোগের কাজও তারা সম্পাদন করবে।
এই প্রকল্প কার্যক্রম তদারকির জন্য দুটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হবে। একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি অর্থ বিভাগ গঠন করবে, যা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম দেখভাল করবে। আরেকটি ১০ সদস্যবিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, যার আহ্বায়ক থাকবেন সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার)। এ কমিটিতে জনপ্রশাসন, সমাজকল্যাণ, পরিসংখ্যান, তথ্যপ্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধি থাকবেন।
ডিএসআর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তথ্য সুরক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্মারকে বলা হয়েছে, ডেটাবেজে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করতে হবে বিদ্যমান আইনগত কাঠামোর আওতায়। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্য সংগ্রহ, যাচাই ও ডিজিটাল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাঠপর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা এ কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করে তুলবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেও এসব দপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ডিএসআর কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম কমিয়ে প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা সম্ভব হবে। ডিজিটাল আবেদন প্রক্রিয়ায় সুবিধাভোগীদের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ হওয়ায় ভুয়া বা অযোগ্য আবেদনকারীদের বাদ দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
আমার বার্তা/এমই