ই-পেপার মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভূমিকম্প কেন হয় এবং নরসিংদী এর কেন্দ্র কেন? এ নিয়ে কিছু কথা

মো. মোশারফ হোসাইন:
০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৪

ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় ভূত্বকের গভীরে। ভূমিকম্প যেখানে সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু। কেন্দ্রবিন্দু বলা হলেও আসলে এটা হলো যথেষ্ট বিস্তৃত স্থান। এই স্থানের ঠিক উপরের মাটিকে বলা হয় ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পের ঢেউ চার দিকে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে। যার কম্পনের ফলে ভেঙে পড়ে বাড়িঘর। ভূমিকম্প হয় মূলত মাটির নিচের শিলা আচমকা ভেঙে যাওয়ার ফলে। হঠাৎ করে এই ভাঙন মাটির তলার প্রচণ্ড শক্তির সৃষ্টি করে এবং এটা ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মাটি কেঁপে ওঠে এবং মাটির ওপরে থাকা সবকিছু দুলতে থাকে। যখন মাটির নিচে দুটি ব্লক অথবা দুটি শিলার মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন সেগুলো নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে যায়। তবে এটি খুব ধীরে ধীরে হয় এবং ভেঙে যাওয়া শিলাগুলো একে অপরের সাথে গায়ে গায়ে লেগে থাকে এবং একে অপরের ওপর চাপ দিতে থাকে। ভেঙে যাওয়া শিলাগুলো চাপের মধ্যে থাকায় একসময় সেগুলো ভাঙতে শুরু করে। যখন শিলাগুলো ভেঙে যায়, তখনই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। যে স্থানে শিলাগুলো ভেঙে যায়, সেটাকেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বলা হয়। একটা ছোট্ট পরীক্ষা করলে নিজেরাই ব্যাপারটা বুঝতে পারবে।

১. এক টুকরো ফোমকে দুই টুকরো করে ছিঁড়ে নিয়ে একটা সমতল টেবিলের ওপরে রাখেন।

২. ফোমের টুকরো দুটির ওপর হাত রেখে দুটি ফোমকে দুদিকে এমনভাবে চাপ দেন যাতে ফোম দুটির একটির সাথে আরেকটির জোরে ঘষা লাগে।

৩. বেশ কিছুক্ষণ এভাবে ঘষা দিলে দেখবে দুটি ফোম থেকেই একটু একটু করে টুকরা আলাদা হয়ে পড়ছে।

ঠিক এভাবেই দুটি শিলার সংঘর্ষের মাধ্যমে মাটির নিচে ভূমিকম্প হয়। এ ছাড়া মাটির নিচে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হলেও ভূমিকম্প হতে পারে। মাটির নিচে রেলপথ, টানেল ইত্যাদি নির্মাণের জন্য বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে এ ধরনের বিস্ফোরণের প্রভাব অতটা টের পাওয়া যায় না।

ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় ভূত্বকের গভীরে। ভূমিকম্প যেখানে সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু। কেন্দ্রবিন্দু বলা হলেও আসলে এটা হলো যথেষ্ট বিস্তৃত স্থান। এই স্থানের ঠিক উপরের মাটিকে বলা হয় ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পের ঢেউ চার দিকে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে। যার কম্পনের ফলে ভেঙে পড়ে বাড়িঘর। আরেকটা কথা ভূমিকম্প বিষয়ে মানুষ টের না পেলেও অনেক প্রাণী (বিড়াল, কুকুর, বিভিন্ন পাখি ইত্যাদি) কিছুটা টের পেয়ে থাকে। কেননা, ভূমিকম্পের আগে মাইক্রো ভাইব্রেশন, শিলার চাপ থেকে উৎপন্ন ক্ষুদ্র শব্দ (ultra/infra sound), বায়ুমণ্ডলে বৈদ্যুতিক পরিবর্তন, এমনকি জলের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। মানুষ এগুলো অনুভব না করলেও অনেক প্রাণীর সেন্সর অত্যন্ত সংবেদনশীল।

ভূমিকম্পের দেশ’ হিসেবে পরিচিত জাপান বারবার বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। ভূমিকম্প, ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট সুনামিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয় জাপানিদের। কিন্তু জাপানে কেন এত ভূমিকম্প? ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘রিং অব ফায়ার’ অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলায় যার অর্থ হয় ‘আগুনের গোলা’। ‘রিং অব ফায়ার’ এমন একটি কাল্পনিক বেল্ট যা ঘোড়ার খুর আকৃতির মতো প্রধানত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে রেখেছে। রিং অব ফায়ারে যেসব অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ। এই রিং অব ফায়ারই ৯০ শতাংশ ভূমিকম্পের কারণ। ৪০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই ‘রিং অব ফায়ার’ অঞ্চলে ৪৫২টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যা পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থিত মোট আগ্নেয়গিরির ৭৫ শতাংশ। এশিয়ার জাপান, পলিনেশিয়ার টোঙ্গো, দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর এই রিং অব ফায়ারের অন্তর্ভুক্ত। তাই এসব অঞ্চলেই বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে। পৃথিবীর কাঠামো মোটামুটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমত, বহির্ভাগের লবণাক্ত ও কঠিন ভূত্বক (পুরুত্ব প্রায় ৩০ কিমি.), দ্বিতীয়ত এর নিচে ২৯০০ কিমি. পুরু এক ধরনের ঘন ও আঠালো অংশ আর তৃতীয়ত সাড়ে তিন হাজার ব্যাসের কেন্দ্রীয় পৃষ্ঠ। দ্বিতীয় ভাগের ঘন ও আঠালো অংশের উপরিভাগ সাতটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে বিভক্ত। এগুলোই হচ্ছে টেকটোনিক প্লেট। প্লেটগুলোর নাম- প্রশান্ত মহাসাগরীয়, ইউরেশীয়, আফ্রিকান, আটলান্টিক, উত্তর আমেরিকান, দক্ষিণ আমেরিকান ও ইন্দো-অস্ট্রেলিয়। টেকটোনিক প্লেটগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে ধাক্কা লাগলে বা সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। গত বছর নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণ ছিল ভারতীয় প্লেট (ইন্দো-অস্ট্রেলীয় প্লেটের অংশবিশেষ) ও ইউরোশীয় প্লেটের সংঘর্ষ। এই দুটো প্লেটের

সংঘর্ষের ফলেই একসময় হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি হয়েছিল।

আজ শুক্রবার সকালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তার কেন্দ্র ছিল নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার মাধবদী এলাকায়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত কয়েক দশকে দেশের ভেতরে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। এর আগে সিলেট বা নোয়াখালী অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হলেও এবার তা ঢাকার আরও কাছে নরসিংদীতে। ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করেন এমন অনেকে বলছেন, এর আগে ঢাকার এত কাছে এই মাত্রার ভূমিকম্প উৎপত্তি হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। বিবিসি বাংলার সাথে, ভূমিকম্প গবেষক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী এই কেন্দ্রস্থলের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে টেকটোনিক প্লেটের যে পাঁচটি উৎস বা সোর্স আছে, তার মধ্যে নোয়াখালী থেকে শুরু করে কক্সবাজার, নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং আরেকটি সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে। তিনি মনে করেন, নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃত এই অংশে যে বড় ফাটল রয়েছে, তারই একটি ছোট অংশ নরসিংদী। ফলে এই এলাকায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। উল্লেখ্য প্রায় একশ বছরের মধ্যে দেশে বড় ভূমিকম্প হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশে বড় ভূমিকম্প হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। সেদিক থেকে এই ভূমিকম্পটিকে 'ফোরশক' বলা যায়। অর্থাৎ, একটি বড় ভূমিকম্প আসার আগে যে ছোট ছোট ভূমিকম্পগুলো হয়, এটি তার মধ্যে একটি। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ১০০ থেকে ১২৫ বছর পরপর এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পরপর আসার সম্ভাবনা থাকে। ১৯৩০ সালের পর দেশে বড় ভূমিকম্প না হওয়ায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

লেখক : উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পরশুরাম, ফেনী।

আমার বার্তা/ মো. মোশারফ হোসাইন/এমই

ভূমিকম্পের পরিমাপক রিখটার স্কেল: ভূমিকম্প পরিমাপের বিজ্ঞান

ভূমিকম্প মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক অনিবার্য ও ভয়ংকর প্রাকৃতিক ঘটনা, যা পৃথিবীর ভূত্বকের অভ্যন্তরের শক্তি সঞ্চয়

সমন্বিত চিন্তায় এফবিসিসিআই: শিল্প, বাণিজ্য ও প্রযুক্তির সেতুবন্ধন

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক ক্রান্তিলগ্নে অবস্থান করছে, যখন ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উত্তরণ

ভূমিকম্প: একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক বিশ্লেষণ

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে সারাদেশে একটি ভূমিকম্প অনুভূত

ক্লাউড, স্টোরেজ ও ইন্টারনেট গেটওয়ের স্বনির্ভরতা অর্জনে বাংলাদেশের করণীয়

একবিংশ শতাব্দীর ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো (ICT Infrastructure) এখন একটি দেশের সার্বভৌমত্ব,
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে

বাংলাদেশ থেকে পোশাক সোর্সিং বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ

আগামী রোববার চূড়ান্ত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা আগামী সপ্তাহ থেকে টাকা তুলতে পারবেন

দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৫ জন

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে সুখবর দিলেন মির্জা ফখরুল

ক্যাডেটরা হতে চলছে গভীর সমুদ্রের অকুতোভয় কাণ্ডারী: মৎস্য উপদেষ্টা

অনেকের শাসন দেখেছেন, এবার ইসলামপন্থীদের সুযোগ দিন: চরমোনাই পীর

এবার কমপ্লিট শাটডাউনে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা

বাংলাদেশে কারো কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি বা শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান

ভূমিকম্প কেন হয় এবং নরসিংদী এর কেন্দ্র কেন? এ নিয়ে কিছু কথা

তামিম-ইমনের ব্যাটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ অবিলম্বে বাতিলের দাবি

নির্বাচনের দিনে গণভোট নিয়ে আপত্তি নেই আট দলের: মাওলানা আব্দুল হালিম

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি নাজমুল, সম্পাদক সানাউল্লাহ

এবার লটারিতে দেশের ৫২৭ থানার ওসি পদায়ন

দাম বাড়ল এলপিজির, ডিসেম্বরে ১২ কেজি সিলিন্ডার ১২৫৩ টাকা

তারেক রহমান এখনো ট্রাভেল পাস চাননি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

৭ ডিসেম্বরের পর যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা: ইসি আনোয়ারুল