এএফসি অ-২৩ চ্যাম্পিয়নশীপে বাংলাদেশ কখনো মূল পর্বে খেলেনি। এবার বাছাইয়ের গণ্ডি পেরিয়ে চূড়ান্ত আসরে খেলার বেশ আশা ছিল। গ্রুপ পর্বে টানা দুই হারে সেই আশায় গুঁড়েবালি।
প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ভিয়েতনামের বিপক্ষে ২-০ গোলের পর আজ ইয়েমেনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ অ-২৩ দল। দুই ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে ইয়েমেন এখন টেবিলের শীর্ষে। আজ দিনের পরের ম্যাচে স্বাগতিক ভিয়েতনাম সিঙ্গাপুরকে হারালে তাদেরও পয়েন্ট ছয় হবে।
বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে সিঙ্গাপুরকে হারালে তিন পয়েন্ট পেতে পারে। তিন পয়েন্টে গ্রুপ রানার্স আপ হওয়ার সুযোগ একেবারে ক্ষীণ। সেখানে এগারো গ্রুপের মধ্যে সেরা চার রানার্স আপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে বাস্তবিক অর্থে এক ম্যাচ আগেই বাংলাদেশের টুর্নামেন্টের যাত্রা শেষ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেন আগের ম্যাচে সিঙ্গাপুরকে ২-১ গোলে হারিয়েছে। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে নাটকীয় জয় পেয়েছে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর্যন্ত খেলা গোলশূন্য ছিল। চতুর্থ রেফারি চার মিনিট ইনজুরি সময় দেন। সেই চার মিনিটের সময় এক আক্রমণে বাংলাদেশের ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণকে পরাস্ত করেন ইয়েমেন ফরোয়ার্ড আব্দুল আল আওমি। অন্তিম মুহুর্তে গোল করে ইয়েমেনের ফুটবলার-কোচিং স্টাফরা সিজদায় পড়েন। বাংলাদেশ ডাগ আউট স্তব্ধ হয়ে পড়ে। পুনরায় কিক অফের পরই রেফারির খেলা শেষের বাঁশি বাজে।
ম্যাচের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ বল দখল ও আক্রমণে প্রাধান্য দেখালেও দ্বিতীয়ার্ধে তেমনটা পারেনি। ইয়েমেন এই অর্ধে আরো গোছালো ফুটবল খেলেছে। বাংলাদেশের কোচ হাসান আল মামুন দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচটি পরিবর্তন করেন। ফাহমিদুল, আল আমিনকে এক সঙ্গে উঠিয়ে নেন। খেলার শেষ দিকে অধিনায়ক মোরসালিনকেও উঠান। আকাশ, তানিল সালিকরা নেমেও খেলা পরিবর্তন করতে পারেননি। অথচ ইনজুরি সময়ে নেমে মাত্র দেড় মিনিটের মাথায় গোল করেছেন ইয়েমেনের ফুটবলার আওমি।
বাংলাদেশ শেষ আট মিনিট এক জন কম নিয়ে খেলেছে। বাংলাদেশের বক্সের একটু সামনে ফাউল করেন মজিবুর রহমান জনি। বল দখলের লড়াইয়ে জনি পা বিপদজনকভাবে উপরে উঠিয়েছিলেন। রেফারি তাকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়া করেন। একজন কম নিয়ে খেলেও বাংলাদেশ বাকি সময় ভালোই সামাল দিচ্ছিল। কয়েকটি আক্রমণও করেছে। কিন্তু একেবারে শেষ মুহুর্তে আর নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি।
আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও বাংলাদেশ অ-২৩ দলের হেড কোচ সাইফুল বারী টিটু ডাগ আউটে দাঁড়াতে পারেননি। সহকারী হাসান আল মামুনই কাজ করছেন। তিনি আগের ম্যাচের একাদশ থেকে পরিবর্তন এনেছেন। আগের ম্যাচে কিউবা মিচেলকে শুরুর একাদশে রেখেছিলেন। আজ কিউবাকে একাদশের বাইরে রেখে ইতালিয়ান প্রবাসী ফাহমিদুল ইসলামকে নামিয়েছেন।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশের বল পজেশন ও আক্রমণ সন্তোষজনকই ছিল। ম্যাচের অধিকাংশ সময় বল ইয়েমেনের অর্ধেই ছিল। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা বক্সের আশেপাশে বল দখলেও রাখতে পারলেও গোল করতে সক্ষম হয়নি। বাংলাদেশের অধিনায়ক শেখ মোরসালিনের নেয়া একটি শট ইয়েমেন গোলরক্ষক দুর্দান্তভাবে সেভ করেন। ফাহমিদুল ইসলাম বল দখলের লড়াই কিংবা বল হারিয়ে একাধিকবার মেজাজ হারিয়েছেন। রেফারি ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়েছেন।
আমেরিকান প্রবাসী জায়ান আহমেদ গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও দৃষ্টি কাড়ছেন। লেফট ব্যাক পজিশনের এই ফুটবলার বাংলাদেশের আক্রমণের অন্যতম ভরসা। ডান প্রান্ত থেকে তিনি একাধিক কর্ণার নিয়েছেন। আবার বা প্রান্তে লম্বা থ্রো-ইন করছেন। এখন পর্যন্ত তার পারফরম্যান্স বেশ সন্তোষজনকই।
গত ম্যাচে বাংলাদেশ স্বাগতিক ভিয়েতনামের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছিল। ম্যাচে পরাজয়ের ব্যবধান আরো অনেক বেশি হতে পারত। গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ অসাধারণ সেভ করায় সেটি আর হয়নি। আজ অবশ্য শ্রাবণকে প্রথমার্ধ পর্যন্ত তেমন বড় ধরনের পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। ইয়েমেনের নেয়া শটগুলো পোস্টের উপর ও আশপাশ দিয়েই বেশি গেছে।
আমার বার্তা/এমই