
বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে শীর্ষ দশে জায়গা নিয়ে আছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে ভারতের দিল্লির অবস্থা অনেকদিন ধরেই দুর্যোগপূর্ণ। অন্যদিকে ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৬৩। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় আজ ঢাকার অবস্থান ৯ ম।
অন্যদিকে শীর্ষ অবস্থানে থাকা দিল্লির একিউআই স্কোর ৪০৫। যা এই শহরের বাতাসকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।
বিশ্বের শীর্ষ ১০ দূষিত শহরের তালিকার বাকি শহরগুলো হলো—
(বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে)
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা (২৩৬, খুব অস্বাস্থ্যকর)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (২০৪, খুব অস্বাস্থ্যকর)। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয় (১৭৯, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (১৭৮, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।
শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:
৬. কুয়েত সিটি, কুয়েত (১৭১)
৭. বিশকেক, কিরগিজস্তান (১৭১)
৮. করাচি, পাকিস্তান (১৭০)
৯. ঢাকা, বাংলাদেশ (১৬৩)
১০. মানামা, বাহরাইন (১৬১)
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।
আমার বার্তা/জেএইচ

