ছুরিকাঘাতে নিহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইনের প্রথম জানাজা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সম্পন্ন হয়েছে।
আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন প্রাঙ্গণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরদেহ নিজ জেলা কুমিল্লার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়, সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।
এর আগে, শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর বংশাল এলাকার নূরবক্স রোডে টিউশনি করতে গিয়ে এক বাসার নিচে ছুরিকাঘাতের শিকার হন জোবায়েদ। আহত অবস্থায় সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করলে তিনি তিনতলায় পড়ে যান। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
জোবায়েদ হোসাইন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন।
জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এ সময় এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমার বিভাগের পক্ষ থেকে তার জন্য মাগফিরাত কামনা করছি। তার শোকাহত পরিবারের প্রতি দোয়া ও ধৈর্য ধারণের জন্য প্রার্থনা করছি।”
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, “জুনায়েদ গতকাল সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে শহীদ হয়েছেন। আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি। এই মাসেই আমাদের আরেকজন সহযোদ্ধা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এটাকে আমরা নিছক একটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছি না। আমরা এই হত্যাকাণ্ডগুলো কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। তবুও আমাদের দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে হবে। আমরা এসব হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক রঙ দেব না। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব, আপনারা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করুন।”
তিনি বলেন, “আমার গ্রামের পাশের স্কুলে পড়াশোনা করতেন। আমি খুবই মর্মাহত। আমরা তার বিদায়ী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।”
এছাড়া শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, “আইন অনুযায়ী দ্রুত বিচার করতে হবে। আমরা আল্লাহর কাছে তার মাগফিরাত কামনা করি।”
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ্ উদ্দিন বলেন, “আমার শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন আমাদের পাশেই শুয়ে আছে। তার এই পরিণতি আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি। তাকে সামনে রেখে জানাজার নামাজের পূর্বে কথা বলব এটা ভাবতেও পারিনি। সমাবর্তনে তার মাথায় আমার ক্যাপ তুলে দেওয়ার কথা ছিল। তার বাবা-মা তাকে ডিগ্রি অর্জনের জন্য পাঠিয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “রাত্রি সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তার লাশ পড়ে ছিল। আমরা প্রশাসনকে বিষোদ্গার করতে চাই না। আপনাদের নিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা দুই দিনের শোক ঘোষণা করেছি। আগামীকাল আমাদের শোকসভা হবে। পরদিন প্রতিবাদ র্যালির আয়োজন করেছি। এটা আমাদের শেষ কর্মসূচি না। জানাজার পর আমরা প্রেস ব্রিফিং করব। আমাদের শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার স্বার্থে যা করা দরকার তাই করব। বিচার ছাড়া ক্লাসে ফিরে যাব না।”
তিনি বলেন, “আমি দেখেছি, কাল রাতে তার বাবা-চাচারা ৫ ঘণ্টা থানায় বসে ছিলেন। এমন ওসির দরকার নেই। আমরা কোনো গাফিলতি মেনে নেব না। প্রয়োজনে পুরো ঢাকা ব্লকেড ঘোষণা করা হবে। আপনারা দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিন। আমার শিক্ষার্থী আমার সন্তান। সন্তানের লাশ বাবার কাঁধে নেওয়ার চেয়ে ভারী কিছু হতে পারে না।”
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “জোবায়েদকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। জুনায়েদ একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিল। মাঝে মাঝে আমার কাছে আসত। খুবই ভালো ছেলে ছিল সে। এমন একটি ছেলের শত্রু থাকতে পারে এটা আমাদের কল্পনায় ছিল না। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।”
ভাঙা স্বরে জোবায়েদের বাবা মোবারক হোসেন বলেন, “কালকে আমার ছেলের মৃত্যুর পর আমি দেখেছি সকল শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছে। আমার এই ছেলেকে ভার্সিটিতে পাঠিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম অনেক বড় হবে। আমার ছেলে লাশ হয়ে গেল আমি বাবা বেঁচে আছি। আমার ছেলেকে আমি যুব বলে ডাকতাম। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।”
আমার বার্তা/এমই