শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন বিজয়া দশমী আজ বৃহস্পতিবার। মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা আজ দেবী দুর্গাকে সিঁদুর দিয়েছেন। খেলেছেন সিঁদুর খেলা। দুপুরের পর আরতি ও শোভাযাত্রাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।
সকালে খামারবাড়ির বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়াম সংলগ্ন সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, পূজার প্রস্তুতি নিয়ে ভক্তরা দলে দলে মণ্ডপে জড়ো হচ্ছেন। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে শুরু হয় বিজয়া দশমী বিহিত পূজা। পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর দর্পণ বিসর্জন করেন।
খামারবাড়ি পূজামণ্ডপের পুরোহিত অবিনাশ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, আজকে প্রথমে আমরা দশমীর বিহিত পূজা করেছি। পূজা শেষে দেবীর দর্পণ বিসর্জন হয়েছে। শাস্ত্রমতে, দেবীর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে। মা বিদায় নিয়েছেন। তারপরে ভক্তরা অঞ্জলি দিয়েছেন। ভক্তরা মাকে সিঁদুর দেবেন, মায়ের আশীর্বাদ নেবেন এবং মাকে বিদায় জানাবেন।
পূজার পর অঞ্জলি দেওয়া শুরু হয় সাড়ে ১০টার দিকে। এ সময় ভক্তদের জন্য হাতে হাতে অঞ্জলির ফুল দেওয়া হয়। ফুল হাতে পুরোহিতের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তরা মন্ত্র বলেন। মন্ত্র পাঠ শেষে ভক্তরা অঞ্জলির ফুল তুলে দেন। তখন উলুধ্বনি বাজিয়ে মা দুর্গাকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। পূজামণ্ডপে ভক্তরা আসতে থাকায় পরবর্তীতে আরও দুইবার অঞ্জলি দেওয়া হয়।
স্ত্রী আর কন্যাকে নিয়ে খামারবাড়ি মণ্ডপে আসেন প্রলয় ঘোষ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মায়ের আশীর্বাদে সবার জীবনে বয়ে আনুক শান্তি, সুখ আর সমৃদ্ধি। অন্যায়ের অন্ধকার দূর হোক, সত্য ও ন্যায়ের আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে। মায়ের কাছে এই প্রার্থনাই করেছি।
বেলা ১১টার দিকে দেবী মাকে সিঁদুর মেখে দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ভক্তরা সিঁদুর হাতে নিয়ে মঞ্চের সামনে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ান। শঙ্খ বাজিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে আরতি দেওয়া হয়। পরে পুরোহিত দেবীর পায়ে সিঁদুর মাখিয়ে দেন এবং প্রণাম করেন। পরে সারিতে দাঁড়ানো ভক্তরা একে একে দেবীকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন।
এ সময় মণ্ডপে পূজার গান বাজানো হয়। দেবীকে সিঁদুর দেওয়া শেষ করে ভক্তরা নিজেদের মধ্যে সিঁদুর খেলা করেন। একে অন্যকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের সভাপতি মনোতোষ কুমার রায় বলেন, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য মা দুর্গার কাছে আশীর্বাদ চেয়েছি। যাতে সবার মঙ্গল হয়। এ বছর পূজা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।বেলা ১টার পর মণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা করে ঢাকেশ্বরীতে যাওয়া হবে। সেখানে একত্র হয়ে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বিজয়া দশমীতে আজ বৃহস্পতিবার হবে প্রতিমা বিসর্জন। খামারবাড়ির বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়াম সংলগ্ন সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের মণ্ডপে
এ বছর রাজধানীর ২৫৪টি পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর ১০টি ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঘাটগুলো হলো—বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট, নবাববাড়ি ঘাট, লালকুঠি ঘাট, তুরাগের ধউর ঘাট, মিল ব্যারাক ঘাট, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট, আমিনবাজার ব্রিজ ঘাট, বসিলা ব্রিজ ঘাট এবং বালু নদের কয়েতপাড়া ঘাট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিমা বিসর্জন হয়ে থাকে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে।
আমার বার্তা/এল/এমই