মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেছেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বনির্ভর ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
রোববার (০৭ সেপ্টেম্বর) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আঁটি ভাওয়াল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত প্রাণী ও প্রাণিখাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন ।
এ সময় তিনি বলেন, প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করাই সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা চাই গ্রামের সাধারণ মানুষ যেন ছোট পরিসরে হাঁস-মুরগি, ছাগল বা ভেড়া পালন করে নিজেদের সংসার চালাতে পারে, অতিরিক্ত আয় করতে পারে এবং ধীরে ধীরে সমাজের অন্যদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। প্রাণিসম্পদ খাত কেবল খাদ্য নিরাপত্তা নয়, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় ভরসা।
অনুষ্ঠানে মোট ২১৭টি পরিবারের মাঝে প্রাণিসম্পদ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৪টি পরিবারকে ২১টি করে হাঁস, ৬৯টি পরিবারকে ২৫টি করে মুরগি, ১০টি পরিবারকে ২টি করে ছাগল, ৭৪টি পরিবারকে ৩টি করে ভেড়া দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি উপযুক্ত প্রাণিখাদ্যও প্রদান করা হয় যাতে উপকারভোগীরা তাৎক্ষণিকভাবে খামার কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান ও প্রকল্প পরিচালক ড. রহিম। আরও উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কারিশমা আহমেদ এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সাত্তার বেগ ও কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন মুনমুন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সুফিয়ান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রাণিসম্পদ বিতরণ কার্যক্রম সরকারের এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং একই সঙ্গে মানুষের জীবনমানও উন্নত হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া বলেন, কেরানীগঞ্জের মানুষ অত্যন্ত পরিশ্রমী। সরকার যদি পাশে থাকে, তারা স্বনির্ভর হতে বেশি সময় লাগাবে না। আজকের এই বিতরণ কর্মসূচি মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ ও খাদ্য পেয়ে খুশি সাধারণ মানুষ। উপকারভোগী গৃহিণী লতিফা বেগম বলেন, আমরা কখনও ভাবিনি সরকার আমাদের বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য সহায়তা দেবে। এগুলো দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে পারব, বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচও মেটাতে সুবিধা হবে।
আরেক উপকারভোগী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে খামার করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পুঁজি ছিল না। আজ সরকারের এই সহায়তা আমাকে সেই সুযোগ করে দিল। আমি আশা করি, খুব শিগগিরই হাঁস-মুরগি থেকে আয় শুরু করতে পারব।
বক্তারা জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে দেশে ডিম, মাংস ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে এগোচ্ছে। এ ধরনের বিতরণ কার্যক্রম কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে আর্থিক উন্নয়নে সহায়ক নয়, বরং জাতীয় পর্যায়েও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা উপকারভোগী পরিবারের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের কার্যক্রম সফল করার জন্য পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
আমার বার্তা/এমই