বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধু রাঙামাটি শহর এলাকায় ৬০০ পরিবারের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার বলে জানা গেছে।
জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, নানিয়ারচর, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই ও রাঙামাটি সদর উপজেলার হ্রদ তীরবর্তী অসংখ্য পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এর মধ্যে রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন। বাঘাইছড়ি উপজেলার পৌর এলাকার বহু পরিবার পানিবন্দি অবস্থায়। জুরাছড়ি উপজেলায় বেশকিছু রাস্তা ডুবে গেছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, এবার চলতি মৌসুমে তিনবার প্লাবিত হতে হয়েছে। এতে বসতঘর ও ফসলি জমি ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত কাপ্তাই হ্রদের পানি কমিয়ে দেওয়া না হলে ক্ষতি আরও মারাত্মক রূপ নেবে।
এ পরিস্থিতিতে কাপ্তাই হ্রদে সর্বোচ্চ ১০৫ ফুট উচ্চতায় পানির স্তর রাখার দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছেন দুর্গতরা। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন থেকে পানিবন্দি দুর্গত মানুষের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের স্প্রিলওয়ের ১৬ গেট খুলে দেওয়া হয়েছে; যা থেকে বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে ১৮ হাজার কিউসেক পানি ভাটি এলাকার কর্ণফুলীতে নদীতে নিষ্কাশিত হয়ে যাচ্ছে। হ্রদে সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট বা এমএসএল (মীন সী লেভেল)। বর্তমানে হ্রদে পানি রয়েছে ১০৮ দশমিক ৯০ এমএসএল।
এদিকে রাঙামাটি পৌরসভার পুরানবস্তি, জুলুক্যাপাহাড়, চেঙ্গীমুখ, রিজার্ভমুখ, পাথরঘাটা, এসপি অফিসসংলগ্ন, পৌর ট্রাক টার্মিনাল, শান্তিনগর, ব্রাহ্মণটিলা, আসামবস্তি, রাঙাপানি, পাবলিক হেলথ, রাজবাড়ীসহ ৯টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হ্রদ তীরবর্তী নিচু এলাকার বহু পরিবারের মানুষ পাবিন্দি হয়ে মানবেতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা লোকজন জানান, কাপ্তাই হ্রদে অতিরিক্ত পানি বেড়ে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের এতে কোনো প্রকার দায়-দায়িত্ব নেই বলে মনে হচ্ছে। দ্রুত কাপ্তাই হ্রদ হতে ৪-৫ ফুট পানি ছেড়ে দেওয়া হলে নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ দুর্দশা হতে রক্ষা পাবে।
রাঙামাটি পৌর প্রশাসক মো. মোবারক হোসেন জানান, পানিবন্দি মানুষদের জন্য পৌরসভা পক্ষ হতে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। তাদের জন্য সদর উপজেলা হতে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আসমা জানান, রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে পানিবন্দি দুর্গত লোকজনের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি, জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি
এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে ১০৫ ফুট উচ্চতায় রাখার দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন জেলার লংগদু, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই ও রাঙামাটি সদর উপজেলার সাধারণ জনগণের পক্ষে চারজন আইনজীবী।
সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ১০৫ ফুটের উপর চলে গেলে ফসলি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে হাজারও মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও কর্মসংস্থান সংকটে পড়ে।
কেবল কৃষি নয়, মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নেমে আসে ভয়াবহ দুর্ভোগ। এ অবস্থার স্থায়ী সমাধান হিসাবে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর সর্বোচ্চ ১০৫ ফুটের মধ্যে সীমা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন চারজন আইনজীবী। তারা হলেন- বাঘাইছড়ির অ্যাডভোকেট মো. রহমত উল্লাহ, লংগদুর আলাউদ্দিন, নানিয়ারচরের মাসুম ও রাঙামাটি সদরের ফরহাদ চৌধুরী।
আমার বার্তা/এল/এমই