ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চল মাদক চোরাচালানের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দুর্গম পাহাড়ি পথ, ঘন জঙ্গল, নদীপথ এবং বিশাল সমুদ্র মাদক কারবারিদের চোরাচালানের বহুমাত্রিক রুট তৈরি করেছে। চলমান সময়ে নাফনদী ও স্থলপথের চেয়ে মাদক চালানের নিরাপদ রুট হিসেবে উঠে আসছে উপকূল ও সমুদ্রপথই। উভয় পথেই কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বিজিবি।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার সৈকতের বিজিবি সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্র উর্মীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
কর্নেল মহিউদ্দিন বলেন, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত ও উপকূলীয় এলাকা (নাফ নদী এবং সাগর উপকূলীয় এলাকা-মহেশখালী, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, আনোয়ারা ও কুয়াকাটা) মাদকদ্রব্য চোরাচালানের দুটি অন্যতম প্রধান পথ। এরমাঝে উপকূলীয় অঞ্চল দিয়েই অধিকাংশ চোরাচালান হচ্ছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মাদকই সাগর পথে উপকূলীয় এলাকা হয়ে শুধু বাংলাদেশেই বিস্তার লাভ করে এমন নয় বরং অন্যান্য দেশেও পাচার হয়ে যায়। যা দেশের যুব সমাজ এবং অর্থনীতির জন্য একটি মারাত্মক হুমকি।
তিনি জানান, কক্সবাজার রিজিয়নের আওতাধীন ব্যাটালিয়নগুলো গত ১৫ জুলাই থেকে চলতি সময় পর্যন্ত ২৮ লাখ ইয়াবা, এককেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ১৬৮ ক্যান বিয়ার, ৩৬৬ লিটার বাংলামদ, আড়াই কেজি গাঁজাসহ ১৮৮ জন অভিযুক্তকে আটক করে।
এছাড়াও ৬টি দেশীয় একনলা বন্দুক, একটি দুইনলা বন্দুক, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি বিদেশি অস্ত্র, একটি গাদা বন্দুক, ৩টি এলজি গান, একটি ওয়ান শুটার পিস্তল, ২টি বিদেশি পিস্তল, একটি একে ৪৭, একটি এসএলআর, ২টি জি-৩ রাইফেল, একটি এমএ-১, একটি এমকে-২, একটি এলএম-১৬, ৪টি আর্জেস হ্যান্ড গ্রেনেড, ১১৯ রাউন্ড গুলি, ৫ রাউন্ড নাইনএমএম পিস্তলের গুলি, ২১৮ রাউন্ড জি-৩ রাইফেলের গুলি, ১২০ রাউন্ড এমএ-১ গুলি এবং ১৮৮ রাউন্ড এলএম-১৬ গুলি, ১১টি খালি ম্যাগাজিনসহ ৫ জন আসামি আটক করা হয়।
বিজিবি সেক্টর কমান্ডার আরও জানান, গত দুই মাসে ২২৬টি বার্মিজ গরু জব্দ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য তিন কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার এবং ছয় কোটি ৭২ লাখ ৫৯ হাজার ৫৮৭ টাকার অন্যান্য চোরাচালানি মালামাল জব্দ হয়।
বিজিবি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন বলেন, সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। অভিনব অভিযানের মাধ্যমে মাদক চোরাচালান রোধে ঝুঁকিপূর্ণ ১৪৭টি অপারেশন চালানো হয়। আর গত ১৪ আগস্ট মালিকবিহীন এক হাজার তিনশ ২২ কোটি টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য কক্সবাজার রিজিয়ন মাঠে ধ্বংস করা হয়েছে।
তার মতে, বান্দরবান সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড় বেষ্টিত এলাকাও মাদক চোরাচালানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। টেকনাফ-উখিয়া সীমান্ত বিজিবির কড়া নজরদারির কারণে বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দুর্গম ভূখণ্ড এবং স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে এখানে নজরদারি করা কঠিন।
ব্রিফিংকালে উখিয়া ব্যাটালিয়ন-৬৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/এল/এমই