ই-পেপার রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

পালাচ্ছেন দুর্নীতিবাজরা!

শাহীন আবদুল বারী:
১১ আগস্ট ২০২৪, ১৪:৩৭
আপডেট  : ১১ আগস্ট ২০২৪, ১৫:২৩

দুর্নীতির দায়ে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, আমলা, পুলিশ, প্রকৌশলী এবং অনেক ব্যবসায়ী বাসা-বাড়ি ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে পালিয়েছেন। আবার অনেকেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন। অধিকাংশ দুর্নীতিবাজের বাসায় ঝুলছে তালা। আগের মতো দামি গাড়ি গুলো এখন আর রাস্তায় দেখা যায়না। অফিস- আদালতেও তাদের উপস্থিতি নেই। ইতোমধ্যে অনেক দুর্নীতিবাজ টাকা-স্বর্ণালংকার সহ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পালানোর সময় ছাত্রদের কড়া তল্লাশির মুখে ধরা পড়েছেন। গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুনুর রশীদের কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে নগদ ৪৪ লাখ টাকা, আধা কেজি সোনা ও ১২ হাজার ডলার। পালাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ টাকা সহ ছাত্রদের হাতে ধরা পড়ায় দুর্নীতিবাজদের ঘুম হারাম হয়েগেছে। দুর্নীতিবাজদের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরাও অস্থির সময় পাড় করছেন। এদিকে বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে কোনঠাসা এবং ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা সক্রিয় হতে মরিয়া হয়ে উঠছেন বলে খবর জানা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহুর্তে সরকারের বড়ো চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি রোধ। তবে বৈষম্য নিরসন ও ঢেলে সাজাতে হবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেখানেও বসে আছেন শত শত কোটি টাকার মালিক দুর্নীতিবাজ। তাদের ছত্রছায়া ও প্রশ্রয়ে দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতিকে নিয়মে পরিনত করেছেন।

সূত্রমতে, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের প্রধান দোসর ছিলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতিবাজদের প্রধান হাতিয়ার ছিলো দুদক। প্রতিপক্ষকে দমনের নামে আওয়ামী সরকার দুদককে পুষছে। একই সঙ্গে নিজদলীয় দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিতে। দুদক গঠন থেকে শুরু করে প্রতি টি পদক্ষেপ নেয়া হয় মহা দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়। মাঝেমধ্যে নিজদলীয় দুর্নীতিবাজদের ধরতে শুধু আইওয়াশ করা হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সরকার দুদককে ঢেলা সাজাতে হবে। সুবিধা ভোগিদের সরিয়ে তাদের স্থলে সৎ, মেধাবী ও বঞ্চিত এবং দীর্ঘদিন ধরে কোনঠাসা কর্মকর্তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করে পতিত সরকারের সকল দুর্নীতি উদঘাটনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন প্রয়োজন। সূত্রমতে, গগণভবন থেকে নাম ঠিক করে দেয়া এবং শেখ পরিবারের প্রতি নতজানু অবস্বরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (আমলা) মো. গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান ও বর্তমান চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তারা আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন পারপাজ সার্ব করেছেন। যা তদন্ত কমিটি করে তাদের সম্পদের হিসাব নেয়া দরকার। এছাড়া গ্যাংস্টার উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম, উপ পরিচালক মো আবদুল ওয়াদুদ ( খুলনা কর্মরত), উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক, উপ-পরিচালক আবদুস সালাম (অব.) উপ-পরিচালক রিতীক সাহা, উপ-পরিচালক মলয় সাহা, উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম, উপ-পরিচালক মো. মাজেদ, উপ-পরিচালক জামালউদ্দিন, উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন, পরিচালক ইব্রাহিম, পরিচালক নাসিম আনোয়ার ( অব.), পরিচালক রবিউল, পরিচালক সেলিনা আক্তার ও পরিচালক বেনজির সহ শতাধিক কর্মকর্তা মামলা পরিচালনা এবং অনুসন্ধানের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ জানাগেছে। অভিযোগে প্রকাশ, এই সিন্ডিকেট নিজেরা বেনামে দুর্নীতিবাজদের নামে দরখাস্ত করে কোটি কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। শুধু তাই নয়, দুর্নীতিবজদের মামলা ও অভিযোগ অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঘুষের বিনিময়ে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। আবার একটি মামলায় কয়েকদফা তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়। এটা টাকা কামানোর আরেক টি বড়ো ফাঁদ। দুদকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধ দায়ের করা কয়েক হাজার মামলা ও অভিযোগ ঝুলে আছে। খবরে প্রকাশ, শেখ হাসিনা পালানোর পর এই সিন্ডিকেট নিশ্চুপ মেরে আছেন। গ্রেফতার আতংক ও জবাবদিহিতার ভয়ে আছেন উক্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সরকারের প্রতিটি সেক্টরে সিন্ডিকেট বাণিজ্য হয়েছে। আমলা, বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি, চেয়ারম্যান, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরী করে লুটে নিয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা। ব্যাংক, বিমা, লিজিং কোম্পানি, জয়েন্ট স্টক সহ বিভিন্ন আর্থিকখাত গুলো তছনছ করে দেউলিয়ায় পরিনত করা হয়েছে। একই ভাবে দেশব্যাপী অবকাঠামোগত উন্নয়ন মুলক কাজে যেমন, রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, ব্রীজ, কালবার্ড, সরকারি আবাসন খাত, অফিস অবকাঠামো, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল্-কলেজ থেকে শুরু করে সকল প্রকৌশল শাখার নির্মাণে সিন্ডিকেট গড়ে হরিলুট করেছে। স্বাস্থ্যখাতে হাসপাতালের রোগ নির্ণয় সরঞ্জামাদি থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধপত্র এবং হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যাদি ক্রয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আইসিডি খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তসরূপ করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের কেনা কাটা, সরকারি আবাসন এবং মার্কেট ডেভেলপমেন্ট এর নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। জনগণের মৌলিক অধিকারের অন্যতম হচ্ছে, খাদ্যদ্রব্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানিতে দলীয় নির্ধারিত সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। এই সিন্ডিকেট গুলো শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তাদের কারণে সাধারণ জনগণের ত্রাহি অবস্থা। কমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা উপকরণ, বিনামূল্যে বই তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে বই ছাপানোর নামে নিম্বমানের বই ছাপিয়ে আত্নসাত করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও জালালি খাতে রীতিমতো সাগর চুরির ঘটনা ঘটেছে। কৃষি খাতকে ঘিরে হাজার হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার নামে কি পরিমাণ অনিয়ম এবং দুর্নীতি হয়েছে তা অপরিকল্পনীয়। এছাড়াও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সেতু ভবন, স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর( এলজিইডি), শিক্ষা প্রোকৌশল, রাজউক, বিআইডব্লিউটিএ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, পরিবেশ রক্ষার নামে বন উজার সহ সকল সেক্টর ও দপ্তর-অধিদপ্তর-পরিদপ্তরে হরিলুট কারবার চলেছে।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের ১৬ বছর শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, আমলা সহ বিভিন্ন দপ্তরে উচ্চ পদস্থ থেকে পিয়ন পর্যন্ত অঢেল ধন-সম্পদ ও শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তবে রাতারাতি ডিকবাজি দিয়ে ভোল্ট পালটানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতিবাজরা।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, দেশের অর্থনীতির অক্সিজেন হিসাবে খ্যাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর অধীনে ভ্যাট, আয়কর বিভাগ এবং কাস্টমস। এই বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা শত শত কোটি টাকার মালিক। তাদের সন্তানরা পড়াশোনা করেন দেশের বাইরে। তারা বসবাস করেন অভিজাত এলাকার। তাদের বাসার পিয়ন এবং গাড়ি চালকরাও একেকজন আলিশান জীবন যাপন করেন। সরকারের সবচেয়ে আয়ের বড়ো এখাতে দুর্নীতি বন্ধ হলে অনেক টাই লাঘব হবে সরকার। এনবিআরের দিকে বেশি নজর দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকুঞ্জ, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, ওয়ারী, পরিবাগ, উত্তরা,ধানমন্ডি সহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় দুর্নীতিবাজদের অধিকাংশ ফ্ল্যাট ও বাড়ি ফাঁকা ও পতিত। তাদের চলার জন্য ৪/৫ টি করে দামি গাড়ি গুলোও আস্তে আস্তে উধাও হয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দুর্নীতির অন্যতম খাত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গবেষণার নামে কোটি কোটি টাকার প্রযেক্ট দেখিয়ে লুটপাটকারী পিডিরা এখন আর আগের তৎপর নেই। এখানে প্রচুর ভুয়া ডিগ্রিধারী ডক্টর ও গবেষকরা বিভিন্ন প্রকল্পের নামে একসময় মহাব্যস্ত থাকলেও এখন গ্রেফতার আতংকে ভুগছেন। এরা প্রকল্পের টাকা আত্নসাত করে একেক জন কোটি কোটি টাকার ধনসম্পদ করেছেন।একই চিত্র প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের। সেখানেও ছাগল, গরু, মহিষ, হাসমুরগী লালান পালন করার প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা উপ পরিচালক তার সিংহভাগ টাকা লুটপাট করে পকেটস্থ করেছেন। এখন তারা কেউ পালিয়েছেন। আর কেউ ভোল্ট পালটিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এই সিন্ডিকেট নিম্নমানের বেকসিন ও পশু পাখির ওষুধ ক্রয়ের নামে কোটি কোটি টাকা তসরুপ করছেন।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহপরিচালক খোরশেদ আলম থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত সবাই বাচতে মরিয়া। এই অধিদপ্তরের ওষুধ ক্রয় এবং হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয় সহ প্রতিটি স্তরে স্তরে দুর্নীতির কালো থাবায় নিমজ্জিত। এখানে নির্দিষ্ট ঠিকাদারী সিন্ডিকেট কাজ করতেন। এছাড়া আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগ, নিত্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী সহ হাসপাতালে আগত রোগীদের বরাদ্দকৃত ওষুধ-পত্র লুটেপুটে খেয়েছেন দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপ পরিচালক, হিসাব রক্ষক, স্টোর কিপার এবং ওয়ার্ড মাস্টাররা তাদের আমলনামা নিয়ে চিন্তিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখার সাথে যারা সম্পৃক্ত, তারাই মুলত দুর্নীতির মূল মাস্টার মাইন্ড। উল্লেখ, করোনা কালীন সময়ের আগে দুদকের অনুসন্ধানে শত শত কর্মকর্তা কর্মচারীর দুর্নীতির চিত্র জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধান টিমের কতিপয় ব্যক্তি ব্যপক আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিনিময়ে ফাইল গুলো ধামাচাপা পড়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির চিত্র এতোই ভয়াবহ যে, সেখানকার ঠিকাদার মিঠু-আফজাল সিন্ডিকেট শত শত কোটি টাকার চিকিৎসা বাবদ যন্ত্রণাংশ সরবরাহ না করেই বিল তুলে নিয়েছেন। ডা. সাবরিনা গংরা গ্রেফতার হওয়ার পর কিছু টা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও দুর্নীতির চিত্র আগের চেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োজিত নির্বাহী প্রকৌশলীদের সিন্ডিকেটের তৎপরতা কমেছে। প্রত্যেকেই যার যার আমলনামার খতিয়ান নিয়ে বাচার চেষ্টায় মরিয়া। ঠিকাদারি, বদলী,পদোন্নতি সহ নানা তদবির বাণিজ্য করে শত কোটি টাকা ও পাহাড় সমপরিমাণ সম্পদ এখন গলার কাটা হয়েছে।

জানা যায়, সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে। এই উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশল শাখার দুইটি উইংস কাজ করে। একটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অপরটি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ( ইএম)। দুটো শাখাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে। সিভিল শাখার কাজ হচ্ছে বিল্ডিং নির্মাণ ও মেরামত করা। সিংহভাগ টাকা খরচ করা হয় এই শাখা থেকে। অপরদিকে ইএম শাখা লিফট, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক পাখা, এসি, ওয়ারিং, পাওয়ার স্টেশন সহ ইত্যাদি কাজ করে থাকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিভিল শাখা এবং ইএম শাখার প্রত্যেক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এই কাজের প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। এদের হাত দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন মুলক কর্মকাণ্ড হয়েছে। তাদের আমলনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা প্রত্যেকেই শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এ সরকার আমলে। তাদের এই শত শত কোটি টাকার সম্পদ এবং গাড়ি বাড়ি আয়ের উৎস হচ্ছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা। প্রত্যেকের বেনামে ঠিকাদারি লাইসেন্স অথবা নিজস্ব ঠিকাদার আছে। এসব ঠিকাদার দিয়ে নামকা অস্তে কাজ করিয়ে এবং ভুয়া বিল করে কিংবা একই কাজ বার বার দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছেন। সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী শরীফুল ইসলাম এবং সাবেক সচিব ওয়াসিউদ্দিন এই সিন্ডিকেটের শেলটারদাতা ছিলেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

একই অভিযোগ সওজ এর প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে নির্বাহী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। তারা অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং শত শত কোটি টাকা আত্নসাত করেও বহাল তবিয়তে আছেন। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মনির পাঠান ও সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল সহ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তাদের পরিবার পরিজনদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান অনেক টাই থমকে গেছে। দুদকের অনুসন্ধান টিমের নজর সওজ এর দিকে না থাকায় অতিরিক্ত প্রদান প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ৭৭ টি এফডিআর এবং ৮২ টি ব্যাংক একাউন্টে শত কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ থাকলেও দুদক এবিষয়ে তদন্ত বা মামলা করার সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করছে। আরো জানা যায়, ঢাকার বাইরে উত্তর বঙ্গের সন্তান একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তার ভাইদের নামে বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা এবং ব্যাংক ব্যালেন্স এর সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকার আফতাব নগরে তিন টি বাড়ি এবং ৫ কাঠা, ৭ কাঠা ও ১০ কাঠার তিন টি প্লটের সন্ধানও পাওয়া গেছে। তার গ্রামের বাড়িতে বাবার নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কলেজ, ডুপ্লেস বাড়ি এবং অঘাত সম্পদের সন্ধান মিলেছে। ঢাকার আশিয়ান সিটিতে বিশ কোটি টাকা মুল্যের বিশ কাঠার প্লটও রয়েছে তার। উক্ত প্লটে অবকাঠামো নির্মাণ করে একটি ছাত্রাবাস স্থাপন করেছেন তিনি। তবে এই কর্মকর্তা সম্পদ বাচাতে এলোপাতাড়ি দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। আরো একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী যিনি ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি দুদক বনশ্রীতে শাশুড়ীর নামে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। নিজ জেলা যশোরে নিজের নামে এবং স্ত্রীর নামে বিঘা বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তার অতিরিক্ত টাকার কারণে সেখানে অন্য কেউ জমি ক্রয় করতে পারেননা। এই ব্যক্তি বেশি দামে জমি ক্রয় করার কারণে ওই এলাকায় জমির দাম বহু গুণে বেড়ে গেছে।

অভিযোগে প্রকাশ, উক্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর অধিনস্থ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীগণ দেশব্যাপী ঘুপচি টেন্ডার, ঠিকাদারি সিন্ডিকেট কোন মাল না কিনেই বিল উত্তলন, ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে প্রত্যেকেই অবৈধ সম্পদ এবং শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এই সেক্টরের বৈদেশিক সাহায্যপূষ্ঠ যন্ত্রাংশ ক্রয়ে দুর্নূতির চিত্র ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যা ক্রয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেট টি শত শত কোটি টাকা কমিশন হাতিয়ে নিচ্ছে। অপরদিকে উক্ত যন্ত্রাংশ খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ধারে অথবা অফিস কমপাউন্ডে অব্যবহারিত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হওয়ার পথে। গুরুতর অভিযোগ আছে, এসকল যন্ত্রাংশ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মেশিনারিজ যাদের জন্য ক্রয় দেখানো হয়েছে তারা কোন রিক্রুজিশনই কর্তৃপক্ষের কাছে দেননি। মুলত কমিশন ভাগিয়ে নেয়ার জন্যই পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে উচ্চমুল্যে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়েছে।

দুর্নীতির আরেকটি সেক্টর হচ্ছেভবিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএ'র ৩০/৩৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রয়েছে। প্রত্যেক টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং অনুসন্ধান টিম তাদের বিষয়ে উদাসীন। একেকটা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একাধিকবার বদল করা হয়েছে। অনুসন্ধানও চলছে ধীর গতিতে।বিআইডব্লিউটিএ'র আত্নস্বীকৃত ১২ দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলা টি লাল ফিতায় বন্দী। দুদকের চার্জশিট অনুমোদনের পরও তদন্তের কোন অগ্রগতি নেই। টুথ কমিশন জরিমানা এবং জেল খেটেছেন ওই ১২ কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট কার্যকর না হওয়ার পেছনে মোটা অন্কের লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযুক্তদের দাবি, দুদক তাদেরকে মামলা থেকে অব্যহতি দিয়েছে। এই মামলাটি ধামাচাপা পড়ায় বিআইডব্লিউটিএ'র অন্য সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির মামলা গুলোও অলোর মুখ দেখছেনা।

টুথ কমিশনের আত্নস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ মো.সাইফুল ইসলাম (সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী) এ, এইচ মো. ফরহাদুজ্জামান ( উপ প্রধান প্রকৌশলী) মো. আবু বকর সিদ্দিক ( সহকারী প্রকৌশলী) এবং মো.জহিরুল ইসলাম (সহকারী প্রকৌশলী) এর বিরুদ্ধে দুদকে মামলার কোন অগ্রগতি নেই। আবু বকর সিদ্দিক কুড়িলে ৭ তলা বাড়ি, গাড়ির শো রুম, কালশীতে গাড়ির ওয়ার্কসপ এবং বনশ্রীতে একটি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বায়রা মতিনের সাথে পার্টনারশিপে পুজি বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ওই রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী তাদের ছত্রছায়ায় বিআইডব্লিউটিএ'তে ঠিকাদারি করেন।বিআইডব্লিউটিএ'র আরেক রাঘববোয়াল উপ পরিচালক আরিফুর রহমান আরিফ। তিনি চেয়ারম্যান এবং মন্ত্রীর খুব আস্থাভাজন। অসাধু এই কর্মকর্তা অবৈধ অভিযানের নামে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার এলিফ্যান্ড রোডে ৭ তলা বাড়ি, বসুন্ধারায় একাধিক ফ্ল্যাট এবং সন্তানরা বিদেশে লেখাপড়া করেন। লন্ডনে তার বাড়ি আছে এমন অভিযোগও রয়েছে। শত শত কোটি টাকার মালিক আরিফের বিরুদ্ধে দুদকের মামলাটি ধীরগতিতে এগুচ্ছে। আরিফের একজন তলপিবাহক হিসাব সহকারী পান্না বিশ্বাস । তিনি বেতন পান ২৫ হাজার টাকা। থাকেন ঢাকার লালবাগে। বাসা ভাড়া দেন ৪১ হাজার টাকা। আলাদা আরো বিদ্যুৎ বিল, সার্ভিস চার্জ সহ ৬০ হাজার টাকা তার বাসা ভাড়া আসে। গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরে এসি সম্বলিত তিন তলা বাড়ি, ঢাকার কেরানিগঞ্জে স্ত্রীর নামে সানওয়ে স্যাটেলাইট সিটিতে প্লট ক্রয় সহ ইন্ডিয়ায় বাড়ি এবং ব্যবসা রয়েছে এই হিসাব সহকারী পান্না বিশ্বাস এর। পান্না বিশ্বাস সরকারী দলের সিবিএ'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অভিযোগে আরো প্রকাশ, পজেক্ট পরিচালক (পিডি) ফয়সাল বিআইডব্লিউটিএতে প্রভাবশালী একজন কর্মকর্তা। তিনিও প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর খুব আস্থাভাজন। প্রকল্পের কাজ তেমন না বুঝলেও তাকেই অধিকাংশ প্রজেক্টের পিডির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

জানাগেছে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইতোমধ্যে পালিয়েছেন। তার এপিএস আবুল বাশারও লাপাত্তা। শৃঙ্খলা বাহিনী হন্নে হয়ে খুজছে। আওয়ামী সরকারের অনেক অজানা তথ্য মিলবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গ্রেফতার হলে।

অভিজ্ঞমহলের মতে, আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব ( আমলা) থেকে শুরু করে দপ্তর-অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান, ডিজি, প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলী সহ পিয়ন পর্যন্ত সিন্ডিকেট করে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনিত করেছেন। সেক্টর কর্পোরেশন গুলোর রন্ধে রন্ধে দুর্নীতির আখড়া গড়ে উঠার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের উপর।

আমার বার্তা/এমই

১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি, নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান খান

আওয়ামী লীগ সরকারের যত দুর্নীতিবাজ ও প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ছিলেন এরমধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য

বসুন্ধরার সোবহান-আনভীরদের বিরুদ্ধে সিআইডির তদন্ত শুরু

বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান ও এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানি

ভ্যানে লাশের স্তূপের ঘটনায় তদন্ত কমিটি, ঘাতক চিহ্নিত

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভ্যানে লাশের স্তূপের পেছনের ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্য বিশিষ্ট

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর পাচার হয়েছে ৮০ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকা
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অতিরিক্ত সময়ে ভুটানের চমকে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

প্রভু চলে গেলেও দাসরা আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে

ডিসেম্বরের মধ্যে এডিবি থেকে মিলবে ৪০০ মিলিয়ন ডলার

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে সমতা-ন্যায্যতার ভিত্তিতে: ড. ইউনূস

দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত চার সংস্থা

সেভেন সিস্টার্সের ৬০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকেছে চীনা সৈন্যরা

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৫ জনকে জেল-জরিমানা

একযোগে নিম্ন আদালতের ১৬৮ বিচারককে বদলি

ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে এ কে এম সহিদের নিয়োগ স্থগিত

অন্য ভাষাচর্চার আহ্বান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার

১৫ বছর আ.লীগের অত্যাচারে সহায়তা করেছে ভারত: সেলিমা রহমান

দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ধর্ম উপদেষ্টা

ব্যাংক যে অবস্থাতেই থাকুক গ্রাহকের ক্ষতি হবে না: গভর্নর

হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি শহীদ পরিবারের স্বজনদের

গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গণবিজ্ঞপ্তি জারির সিদ্ধান্ত

কিছু দল প্র‌তি‌বেশী দে‌শের ফাঁদে পা দি‌য়ে‌ছে: তা‌রেক রহমান

রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের জোর দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন ও কবির আহম্মদ

আত্মপ্রকাশ করল নতুন প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটি

ভৈরবে ট্রেনের ধাক্কায় ব্রিজ থেকে ছিটকে পড়ে নারীসহ নিহত ২