ঢাকার টঙ্গী এলাকা হতে ইতালিতে পাচারকালে টাওয়ালের মধ্যে বিশেষ কায়দায় (Chemical Impregnation) লুকায়িত অবস্থায় ৬.৪৪ কেজি ভয়ংকর মাদক কিটামিন জব্দ এবং চাঁদপুর ও ফরিদপুর হতে ২ জন আসামি গ্রেপ্তার।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারসহ মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে সমাজ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষার জন্য দেশব্যাপী ডিএনসি’র অপারেশনাল কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।
ডিএনসি’র গোয়েন্দা বিভাগ দীর্ঘদিন যাবত কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে মাদক পাচারের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করে আসছে এবং এই গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতায় বিভিন্ন সময় বেশ কিছু চালান জব্দ করা হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে, ডিএনসি’র কাছে গোপন তথ্য ছিল যে একটি চক্র আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে দেশের বাইরে মাদক পাচার করছে। ঊক্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএনসি’র মহাপরিচালকের নির্দেশে গত ০৫/০৯/২০২৫ইং তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি বিশেষ টিম অতিরিক্ত পরিচালক জনাব মোহাম্মদ বদরুদ্দীনের নেতৃত্ত্বে টঙ্গীতে অবস্থিত ফেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসে অবস্থান নেয় এবং ফেডেক্স এর সার্বিক সহযোগিতায় ঢাকা হতে ইতালীগামী একটি পার্শ্বেল জব্দ করে। গোয়েন্দা তথ্য, পার্সেলের সার্বিক অবস্থা ও অস্বাভাবিক ওজন দেখে সন্দেহ হলে পার্সেলটি পরীক্ষা করে একটি খাকি রংএর কার্টুনের ভিতর পৃথক সাতটি সাদা TOWEL পাওয়া যায়।
ঘটনাস্থলেই ডিএনসি’র রাসায়নিক পরীক্ষক দ্বারা TOWEL এর রাসায়নিক পরীক্ষা সম্পন্ন করলে TOWEL-এ দ্রবীভূত অবস্থায় ৬.৪৪ কেজি ক শ্রেণির ভয়াবহ মাদক কিটামিন (Ketamine) – এর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে ডিএনসি’র একটি বিশেষ রেইডিং টিম জব্দকৃত পার্সেলের প্রেরকের ঠিকানা, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে প্রেরক গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে আত্মগোপন করেছেন। এর ভিত্তিতে ঢাকা গোয়েন্দা ইউনিট একটি অভিযান পরিচালনা করে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর এলাকা থেকে প্রেরক, মোঃ মাসুদুর রহমান জিলানী (২৮) কে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে আরও তথ্য পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায় যে উক্ত কিটামিন চালান ফরিদপুর জেলার মোঃ আরিফুর রহমান খোকা (৪৩) এর সাথে যোগসাজশে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছিল এবং আরও জানা যায় যে খোকা এই আন্তর্জাতিক চক্রের অন্যতম হোতা।
এরপর তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত রেইডিং টিম ফরিদপুর জেলার সালথা থানাধীন আটঘর বাজার এলাকায় আর একটি অভিযান পরিচালনা করে মোঃ আরিফুর রহমান খোকা কে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে দুইটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং একটি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনিও কুরিয়ারের মাধ্যমে কিটামিন পাচারের সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন।
মানবদেহে কিটামিন (Ketamine) – এর ক্ষতিকর প্রভাব
কিটামিন (Ketamine) মূলত একটি ডিসোসিয়েটিভ অ্যানেস্থেটিক ওষুধ, যা অতীতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হত। কিন্তু বর্তমানে এটি ব্যাপকভাবে মাদক হিসেবে অপব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে পার্টি ড্রাগ হিসেবে। কিটামিন একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর মাদক, যা স্বল্পমেয়াদে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনি ও মূত্রথলির গুরুতর ক্ষতি, মানসিক সমস্যা এবং আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। নিয়মিত সেবনে সহনশীলতা তৈরি হয়ে ডোজ বাড়ানোর প্রবণতা দেখা দেয়, যা জীবনের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে।
Chemical Impregnation – এর ব্যবহার
এটি টাওয়াল বা মোটা কাপড় ব্যবহার করে মাদক পাচার একটি গোপন কৌশল, যেখানে টাওয়ালের ভেতরে গঠন পরিবর্তন করে মাদক লুকানো হয়। কেমিক্যাল ইমপ্রেগনেশনে টাওয়ালকে মাদকের দ্রবণে ভিজিয়ে শুকানো হয়, ফলে মাদক ফাইবারে মিশে যায়। কাপড় বা তোয়ালেটি মাদক শোষণ করলে সেটি দেখতে স্বাভাবিক কাপড়ের মতোই মনে হয়, ফলে এটি সহজে শনাক্ত করা যায় না। পাচারকারীরা পরে বিশেষ কেমিক্যাল বা ল্যাব প্রসেস ব্যবহার করে ওই কাপড় থেকে পুনরায় মাদক উত্তোলন করে। এই পদ্ধতি কোকেন, হেরোইন ও কেটামিন পাচারে বেশি ব্যবহৃত হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের নতুন নতুন কৌশল প্রতিরোধে কুরিয়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে সমন্বয় করে নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরও একাধিক ব্যাক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গ্রেফতারকৃত দুই আসামির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুসারে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। ডিএনসি’র এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যৎতে অব্যাহত থাকবে।
আমার বার্তা/এল/এমই