ফ্রান্সের ডাসোঁ এভিয়েশনের তৈরি রাফালকে বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে আধুনিক ও বিধ্বংসী যুদ্ধবিমান, যা ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে ব্যবহার করা হয়। ওই সময় পাকিস্তান দাবি করে, চীনের তৈরি জে-১০ সি ব্যবহার করে তারা রাফাল ধ্বংস করেছে। এরপরেই বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে এই যুদ্ধবিমান।
নতুন খবর হলো, এবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন ও জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।
এই ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট কেনা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য খরচসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭,০৬০ কোটি টাকা।
নথিপত্র অনুযায়ী, জে-১০ সি কেনার চুক্তিটি সরাসরি ক্রয় বা জি টু জি পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে করা হতে পারে। কাগজপত্রে উল্লেখ রয়েছে—প্রকল্পের মোট ব্যয় ১০ বছরের মধ্যে (২০৩৫-২০৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত) পরিশোধের শর্তে পরিচালিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সম্ভাব্য হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি ফাইটার জেটের মূল্য ৬ কোটি ডলার প্রাক্কলন করা হয়েছে, এতে ২০টি বিমানের মোট মূল্য দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৪,৭৬০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবহন খরচ বাবদ আরও ৮২ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা যোগ হবে। এর সঙ্গে বীমা, ভ্যাট, এজেন্সি কমিশন, পূর্ত কাজসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে মোট ব্যয় হবে ২২০ কোটি ডলার।
এর আগে, চলতি বছরের মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে যান। ওই সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, দুই নেতার বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিস্তা নদীর প্রকল্পে চীনের সহায়তা, মাল্টিপল রোল কমবেট এয়ারক্র্যাফট (বহুমাত্রিক জঙ্গি বিমান) কেনা, বাংলাদেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে চীনের কুনমিংয়ের বহুমাত্রিক সংযুক্তি ইত্যাদি।
পরে এই যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে গত এপ্রিলে বিমানবাহিনীর প্রধানকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি খসড়া চুক্তিপত্র নিরীক্ষণ করবে, জিটুজি পদ্ধতিতে কেনা সমীচীন হবে কি-না তা যাচাই-বাছাই করবে এবং চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে চূড়ান্ত মূল্য, পরিশোধের শর্তাবলী (টার্মস অব পেমেন্ট) ও চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করবে। চুক্তিপত্রে যুদ্ধবিমানের সংরক্ষণ সহায়তা, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে।
জে-১০ সি জঙ্গিবিমান মূলত চীনের বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত জে-১০সি’র রপ্তানি সংস্করণ। দেশটির বাইই অ্যারোবেটিক টিম তাদের প্রদর্শনী বহরে সর্বাধুনিক জে-১০সি মডেল অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা বর্তমানে চীনের অন্যতম উন্নত মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত।
এই ফাইটার জেটের উন্নত পারফরম্যান্স, পাইলটদের দক্ষতা এবং ওয়াইইউ–২০ এরিয়াল ট্যাংকারের সহায়তায় আন্তর্জাতিক এয়ারশোতে দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল এ এন এম মনিরুজ্জামান (অব.) গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের বিমানবাহিনীর অনেকদিন ধরেই জঙ্গিবিমানের প্রয়োজন রয়েছে এবং তারা কেনার জন্য পরিকল্পনাও করছিল।
সতর্ক করে তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বে এক ধরনের ভূ-রাজনৈতিক বলয় সৃষ্টি হয়েছে। তাই কোনো দেশ থেকে কেনার আগে তার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এখন টানাপোড়েন চলছে। এটি যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনি আমাদের যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন আছে, তাও বিবেচনা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) মোট ২১২টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট। এর মধ্যে ৩৬টি চীনা নির্মিত এফ–৭ যুদ্ধবিমান। বিএএফের বহরে পুরানো মডেলের পাশাপাশি ৮টি মিগ-২৯বি এবং রাশিয়ান ইয়াক–১৩০ লাইট অ্যাটাক বিমানও রয়েছে। জে-১০ সিরিজ যুক্ত হলে তা বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে।
আমার বার্তা/এমই