
নব্বইয়ের দশকে যিনি ঢালাই করেছিলেন জনপ্রিয়তার নতুন মানদণ্ড, সেই শাবনূর আজ পা রাখলেন জীবনের ৪৭ বছরে। সময়ের প্রবাহে রূপ বদলালেও দর্শকের হৃদয়ে তার অবস্থান আজও অটুট। ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় নায়িকাদের তালিকায় শাবনূরের নাম এখনো শীর্ষেই উচ্চারিত হয়।
বহুমাত্রিক চরিত্রে সাবলীল অভিনয়, আবেগী সংলাপ ও পর্দায় স্বাভাবিক উপস্থিতির মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দর্শকপ্রিয়তার প্রতীক। শুধু এক প্রজন্ম নয়, আজকের অনেক তরুণ নায়িকাও অভিনয়ের আদর্শ হিসেবে মানেন এই গুণী অভিনেত্রীকে।
নিজের জন্মদিন উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিশেষ ভিডিও শেয়ার করেন শাবনূর। ভিডিওতে দেখা যায়, ছেলে এবং একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিত হাসানের উপস্থিতিতে কেক কাটছেন তিনি। মুহূর্তটি ছিল পারিবারিক উষ্ণতায় ভরা।
ভিডিওর ক্যাপশনে শাবনূর লেখেন, জন্মদিনটি তার কাছে অত্যন্ত বিশেষ। ফেসবুক, ফোনকল ও বার্তায় পাওয়া অগণিত শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একজন শিল্পী হিসেবে দর্শক, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসাকেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ও অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, এই ভালোবাসাই তাকে ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল ও ভালো কাজের দিকে এগিয়ে যেতে শক্তি দেয়। সবার দোয়া ও পাশে থাকার আশ্বাসকে তিনি নিজের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখেন।
১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন শাবনূর। জন্মের সময় তার নাম ছিল নূপুর। চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে প্রখ্যাত নির্মাতা এহতেশামের পরিচালনায় ‘চাঁদনী রাতে’ সিনেমার মাধ্যমে, যা মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে।
এরপর ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তুমি আমার’ চলচ্চিত্র তাকে নিয়মিত অভিনয়ের জগতে প্রতিষ্ঠিত করে। এই ছবিতেই প্রয়াত নায়ক সালমান শাহের সঙ্গে তার জুটি দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। সালমান শাহের সঙ্গে তিনি মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন, যা ঢালিউড ইতিহাসে অন্যতম সফল জুটি হিসেবে বিবেচিত।
সালমান শাহ ছাড়াও ওমর সানী, রিয়াজ, ফেরদৌস, অমিত হাসান, আমিন খান ও বাপ্পারাজের মতো জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন শাবনূর।
অভিনয়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘দুই নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য।
ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকাকালীন সময়ের মতো এখন পর্দায় নিয়মিত না থাকলেও শাবনূর আজও দর্শকের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। তার অভিনীত সিনেমা, সংলাপ আর চরিত্রগুলো এখনো দর্শকের আবেগে জীবন্ত।
জন্মদিনে প্রিয় এই নায়িকার প্রতি শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় ভরে উঠেছে ভক্তদের মন—আর শাবনূর আবারও প্রমাণ করলেন, জনপ্রিয়তা সময়ের কাছে হার মানে না।

