আজ ৮ সেপ্টেম্বর, বিশ্বব্যাপী ফিজিওথেরাপি দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এই বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় কোমর ব্যথা, যা একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে স্বীকৃত। কোমর ব্যথার সমস্যা একদিকে যেমন ব্যক্তি জীবনে বিপর্যয় আনতে পারে, তেমনি এটি কর্মক্ষমতা ও দৈনন্দিন কার্যকলাপেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই নিবন্ধে, আমরা কোমর ব্যথার কারণ, প্রভাব এবং তার চিকিৎসার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।
কোমর ব্যথার কারণঃ
কোমর ব্যথার নানা কারণ থাকতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
মাংসপেশির স্ট্রেইন: অতিরিক্ত ভারি বস্তুর তোলার ফলে বা ভুলভাবে বাঁকলে কোমরের পেশীতে টান পড়ে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
ডিস্কের সমস্যা: স্পাইনাল ডিস্কের বেরিয়ে আসা বা সরে যাওয়ার কারণে স্নায়ু চাপিত হতে পারে, যা কোমর ব্যথা সৃষ্টি করে।
আরথ্রাইটিস: কোমরের জয়েন্টে প্রদাহজনিত রোগ যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস কোমরের জয়েন্টে ব্যথা এবং কঠিনতা সৃষ্টি করে।
স্পাইনাল স্টেনোসিস: মেরুদণ্ডের টানেল সংকুচিত হলে স্নায়ু চাপিত হয়, যার ফলে কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়।
ডিজেনারেটিভ বা বয়সজনিত কারন: বয়সজনিত কারনে যেমন হাড়ের ক্ষয় হয়ে থাকে তেমনি কোন কোন অংশে হাড় বৃদ্ধি পেয়ে থাকে যাকে মেডিকেল পরিভাষায় অষ্টিওফাইট বলে এই সমস্যাকে মেডিকেল ভাষায় স্পনডালোসিস বলা হয় যা কোমর ব্যথার অনতম কারন ।
কোমর ব্যথার প্রভাবঃ
এটি একটি প্রচলিত সমস্যা যা বিশ্বের ব্যাপক জনগণের মধ্যে ৮০% মানুষকে কোনো না কোনো সময়ে প্রভাবিত করে। কোমর ব্যথার ফলে দৈনন্দিন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এটি মানুষের জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে যেমন:
মোবিলিটি কমে যাওয়া: কোমর ব্যথার কারণে চলাফেরায় সমস্যা হতে পারে, যা কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।
মানসিক প্রভাব: দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথা মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে।
পেশাগত সমস্যা: কোমর ব্যথার কারণে কর্মস্থলে উপস্থিতি এবং কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে।
ফিজিওথেরাপি ও কোমর ব্যথাঃ
ফিজিওথেরাপি কোমর ব্যথার চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এর বিভিন্ন দিক হলো:
পেশী শক্তিশালীকরণ ও স্ট্রেচিং: ফিজিওথেরাপিস্টরা কোমরের পেশী শক্তিশালীকরণ এবং স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ দিয়ে রোগীর কোমরের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেন।
ম্যানুয়াল থেরাপি: কোমরের গতিশীলতা উন্নত করার জন্য স্পাইনাল ম্যানিপুলেশন এবং মবিলাইজেশন সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
পোশ্চার কারেকশন : সঠিক বসার ও দাঁড়ানোর কৌশল শেখানো হয়, যা কোমরের অতিরিক্ত চাপ কমায়।
ব্যথা ব্যবস্থাপনা: ফিজিওথেরাপি বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন গরম বা ঠাণ্ডা থেরাপি, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
শিক্ষা ও পরামর্শ: রোগীদের কোমরের ব্যথা প্রতিরোধে কীভাবে সঠিকভাবে ওঠা-বসা করতে হবে, ভার উত্তোলনের নিয়ম এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপের কৌশল শেখানো হয়।
উপসংহারঃ বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস ২০২৪-এ কোমর ব্যথার গুরুত্বকে সামনে রেখে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। কোমর ব্যথার সমস্যা মোকাবিলায় ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত শরীরচর্চা, সঠিক শারীরিক কৌশল এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কোমর ব্যথা মোকাবিলায় ফিজিওথেরাপির সহায়তা নিয়ে আপনি এক সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারেন
লেখক : চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।
আমার বার্তা/এমই