মানুষ এখন শুধু কাজের জন্য নয়, অনুভূতির জায়গাতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভর করছে। কেউ বন্ধুর মতো, কেউ কাজের জন্য, আবার কেউবা প্রেমের সম্পর্কের বিকল্প হিসেবেও এআই চ্যাটবটকে ব্যবহার করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আধুনিক একাকীত্বের নতুন রূপ। যা দ্রুতই সামাজিক বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টোরো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জেমি সান্দভাল জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এআই সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপগুলোর ৩০ শতাংশ বাজার দখল করবে।
তার ভাষায়, “এআইয়ের উন্নয়ন যেমন দরকার, তেমনি এর নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করাও জরুরি। কারণ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বড় ভাষা মডেল বা এলএলএম ব্যবহার করে এখনো আত্মহত্যা সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। যা উদ্বেগজনক।”
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অনেকেই একাকীত্ব কাটাতে এআইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। কেউ আবার সামাজিক দক্ষতা অনুশীলন বা মানসিক সান্ত্বনার জন্য এই পথ বেছে নেন। কিন্তু এতে ঝুঁকিও কম নয়। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর ব্যবহারকারীদের জন্য। কারণ এআই অনেক সময় ভুল তথ্য, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ বা বিপজ্জনক প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা এ ঘটনার নাম দিচ্ছেন “এআই সাইকোসিস”। যেখানে ব্যবহারকারীরা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। এমনকি কল্পিত সম্পর্কের মধ্যে আটকে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যেই এ ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে সবাই এ প্রবণতাকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন না। ডিজিটাল কনসালট্যান্ট ডোয়াইট জারিঞ্জার মনে করেন, এআই চ্যাটবট অনেক সময় মানসিক সহায়তার একধরনের বিকল্প হতে পারে। যদি নৈতিক নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার নিয়ম ঠিকভাবে মানা হয়।
তার মতে, “ডেভেলপারদের উচিত ব্যবহারকারীর মানসিক অভিজ্ঞতাকেও তথ্য নিরাপত্তার মতো গুরুত্ব দেওয়া।”
সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ টেসা গিটলম্যান বলেন, “মানুষ কেন এআইয়ের সঙ্গে আবেগ গড়ে তোলে, তার পেছনে মূল কারণ একাকীত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। অনেকেই এমন এক সঙ্গ চায়, যে বিচার করবে না।”
তবে তিনি সতর্ক করেছেন, এআই সম্পর্ক কখনোই মানবিক সংযোগের বিকল্প হতে পারে না। কারণ এতে থাকে না সেই উষ্ণতা, বাস্তব অনুভূতি ও সহমর্মিতা যা মানুষকে মানুষ করে তোলে।
আমার বার্তা/জেএইচ